রূপকথার এক ড্রাগনের মর্ত্যভূমি সফর!!!
নু-জাহাত-জাবিন
ড্রাগন এক পৌরানিক চরিত্র। বিশালাকার দেহ আর মুখ দিয়ে অগ্নিশিখা ছোড়ার ক্ষমতা ছিল এদের। ড্রাগনদের সৌভাগ্যের প্রতিক মনে করা হতো। কিন্তু আমাদের মর্ত্য জগতে এই প্রাণীটির নাম ড্রাগন হলেও তাদের এই বেলায় কিছুই নেই। অনেকটা ঢাল তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দারের মত। কোমোডো ড্রাগন, পৃথিবীর বুকে ঘুরে বেড়ানো বিশালাকার গিরগিটি। যাদের কোমোডো মনিটর লির্জাড নামেও ডাকা হয়। ১৯১০ সালে যখন এদের প্রথম দেখা মেলে (ইন্দোনেশিয়ার কোমাডো দ্বীপে) তখন এদের বিশাল, বিকট শরীr দেখে নাম রেখে দেওয়া হয় কোমোডো ড্রাগন। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Varanus komodoensis। মোটামুটিভাবে ১০ ফুট দীর্ঘ আর কমবেশী ৭০ কেজি ওজনের এই প্রাণীটি ৩০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। গিরগিটি প্রানীদের ভিতর সবচেয় বৃহদাকার কোমোডো ড্রাগনেরা তাদের অস্তিত্বের সংকটে আছে। IUCN রেড বুক অনুসারে শংকাকুল (Vulnerable)এই প্রানীটি কে শুধু মাত্র ইন্দোনেশিয়ার ৬টি দ্বীপে পাওয়া যায়।
পূর্ণ বয়ষ্ক পুরুষেরা ৯.৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা আর ৮০ কেজি ওজনের হতে পারে। স্ত্রী প্রাণীটির অকৃতি ও ওজন তুলনামূলক ভাবে কম হয়। এদের পুরো শরীল আশঁ দিয়ে ঢাকা। বাচ্চা কোমোডো ড্রাগনরা হালকা সবুজ বর্ণের হয় ও পুরো শরীরে হলুদ ও কালো ডোরা থাকে তবে প্রাপ্ত বয়সীরা ধূসর কিংবা বাদামী হয়। এদের ৬০টি দাঁত থাকে। এরা খুব দক্ষ সাঁতারু, দ্বীপে খাবারের অভাব হলে দীর্ঘ পথ সাঁতরে পাড়ি দিয়ে অন্যদ্বীপে যায়।গদাই লস্করী চালে চলে!!তবে বিপদে পড়লে ঘন্টায় ৩০ কিলো মিটার বেগে ছুটতেও পারে।
এরা মাংশাশী প্রানী ছোট ছোট পাখি. ছাগল এমনকি হরিণ পর্যন্ত এদের খাদ্য তালিকায় আছে। সাপের মত জিহ্বা বের করে এরা মাটির কম্পন বুঝতে পারে।
কোমোডো ড্রাগনরা দিনের বেলা শিকার করে। এদের ত্বকের রং এদেরকে বনের মরা পাতার সাথে লুকিয়ে রাখে যা খাদ্য সংগ্রহের জন্য এক অনবদ্য হাতিয়ার। এদের দৃষ্টিশক্তি যথেষ্ট ভালো। ৩০০ মিটার পর্যন্ত পরিষ্কার দেখতে পায়।
২০০৯ সালে প্রথম এদের বিষ ধারণ করতে দেখা যায়। এদের মুখের ব্যাকটেরিয়া শিকারের শরীরে পচন ধরায়। তাই এর কামড় যথেষ্ট ক্ষতিকর।এরা কামড়ে শিকারকে বাগে আনতে না পারলেও কোন অসুবিধা নেই এর কামড়ে ক্ষত বিক্ষত প্রানী সর্বোচ্চ ২৪ ঘন্টা বেঁচে থাকে। আর তাই এরা একেবারে মেরে না ফেলতে পারলে শিকারকে অনুসরণ করে। বিষ আর ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে শিকার মৃত্যুর কলে ঢলে পড়লে এরা ঠিক ঠিক উদর পূর্তি করে নেয়।
কোমোডো মনিটর লিজার্ডরা ৮ বছর বয়সে পূর্ণবয়স্ক হয়। এদের মেল্টিং এর সময়টা মে থেকে আগষ্ট। ডিম পাড়ে সেপ্টেম্বর এ। দীর্ঘ ৭-৮ মাস ডিমে তা দেওয়ার পর বাচ্চা ফুটে বের হয়। এক সাথে ১৫ থেকে ২০টা ডিম দেয় স্ত্রী কোমাডো ড্রাগন।
কোমোডো ড্রাগন মানুষের জন্য ক্ষতিকর না তবে, হঠাৎ মানুষ কেও অক্রমণ করে বসে। আর এর ভয়ানক চেহারার কারণে মানুষের নির্বিচার হত্যার শিকার হয়।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি
চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।