
লক্ষ্মী পেঁচা কেন সঙ্গীকে তালাক দেয় !!!
শাওন চৌধুরী
ক্লাসে বসে আছি, হঠাৎ পাশের এক বন্ধু আঙ্গুল দিয়ে এক সুন্দরী মেয়ের দিকে ইশারা করলো, দেখলাম আর প্রেমে পড়ে গেলাম যদিও জানা ছিলোনা যে মেয়েটি কোথায় থাকে, ব্যবহার কেমন, বাসার সবাই কেমন ইত্যাদি ইত্যাদি। ভালবাসা এমনই একটা জিনিস যা কিনা কোন কিছু না মেনে আপন গতিতে পথ চলতে থাকে, যে কারোর জীবনের যে কোন মুহূর্তেই এর আগমন ঘটতেই পারে। আবার কখন যে ভালবাসার মানুষটির ওপরে মন বিষিয়ে উঠবে এবং অন্য একজনকে ভাল লাগা শুরু করবে এটা মন ছাড়া আর কারোর জানা নেই। ওপরের কথাগুলো মানুষের ক্ষেত্রে যেমন সত্য ঠিক তেমনি অন্যান্য পশুপাখির ক্ষেত্রেও সত্য। আজ আপনাদেরকে সবার পরিচিত লক্ষ্মী পেঁচার এমন এক গল্প শোনাব যাতে করে সবাই নতুন কিছু জানতে পারবেন।
হঠাৎ যেমন যে কাওকে ভাল লেগে যেতে পারে ঠিক তেমনি হঠাৎ করেই ভালবাসার মানুষটির প্রতি তীব্র ঘৃণাও জন্মাতে পারে এটা আসলে নির্ভর করে পরিস্থিতির ওপরে। যেমন ধরুন, আপনার বাচ্চা দরকার অথচ আপনার প্রিয়জনটির বাচ্চা জন্ম দেয়ার ক্ষমতা নেই তখন আপনি কি করবেন? আবার মনে করুন আপনার প্রিয় মানুষটি বিছানাতে আপনাকে সুখী করতে পারছেনা, প্রতিদিন আপনি একই কষ্ট সহ্য করে যাচ্ছেন, পরিশেষ আপনি কি করবেন?? বাংলাদেশের কথা আলাদা, অন্যান্য দেশে এমনটি ঘটলে বিচ্ছেদ নিশ্চিত! সুইজারল্যান্ডের the University of Lausanne এর Amélie N. Dreiss এবং Alexandre Roulin দেশের পশ্চিমের কিছু লক্ষ্মী পেঁচার সদস্যের ওপরে ২৪ বছর ধরে গবেষণা চালান এবং তাঁরা দেখতে পান যে এদের ক্ষেত্রেও মানুষের মতোনই ঘটনা ঘটছে। যদিও এরা সাধারণত এক সঙ্গীকে নিয়েই সারা জীবন পার করতে অভ্যস্ত তার পরেও এদের চাহিদা পূরণে ব্যঘাত ঘটলে এরা সঙ্গীর পরিবর্তন ঘটাচ্ছে এবং দক্ষ সঙ্গী নির্বাচন করছে।
পেঁচা পরিবারের এই সদস্যটি ডিম পাড়ার দিক থেকে অনেক দক্ষ, এরা বছরে দুবার ডিম দেয় এবং একবারে সর্বাধিক ১১টা ডিম দিতে পারে। কিন্তু যদি কখনো এক বছরে একটা বাচ্চাও জন্ম না নেয় তাহলে এরা সঙ্গী পরিবর্তন করে। ড্রেইস এবং রাউলিন ৬৩৪ জোড়া লক্ষ্মী পেঁচাকে নিয়ে গবেষণা করেছেন, এর মধ্যে শতকরা ২৩.৫ সদস্য তাদের সঙ্গীকে ত্যাগ করেছে, ১৬৬ জোড়া একসাথে থেকেছে এবং বাসা দখলের জন্য ৫১ স্ত্রী সদস্য পুরুষকে বিতাড়িত করেছে। এদের মধ্যে যারা সঙ্গীকে ত্যাগ করেছে তাদের মধ্যে কেও এক বছর অপেক্ষা করেছে আবার কেও কেও কয়েক বছর এমনকি ছয় বছর পর্যন্তও অপেক্ষা করেছে। এদের মধ্যে আবার কিছু সদস্য সঙ্গীর সাথে প্রতারণা করে আরেকজনের সাথে মিলনে অংশ নিয়েছে।
গবেষকদের মতে, এরা নিশাচর হবার কারণে পুরুষ বা স্ত্রী কে কাকে ত্যাগ করেছে সেটা সবক্ষেত্রে সঠিকভাবে বোঝা যায়নি। তবে বিচ্ছেদের বিষয়টা কম বয়সীদের ক্ষেত্রেই বেশী দেখা গেছে কারণ সঠিক সঙ্গী নির্বাচন অনেক সময়ের ব্যপার। আস্তে আস্তে এসব কম বয়সী সদস্যেরা সঠিক সঙ্গী নির্বাচনে সক্ষম হয়েছে। রাউলিনের মতে, ‘এসব কম বয়সী সদস্যদের ক্ষেত্রে এমনটা বেশী দেখতে পাওয়ার কারণ হচ্ছে এরা প্রথম প্রথম যোগ্য সঙ্গী পছন্দ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। আর যদি স্ত্রী সদস্যকে মিলনসঙ্গী হিসেবে পছন্দ না হয় তাহলে পুরুষ সদস্যের পৃথক হওয়া স্বাভাবিক।’
সঙ্গী ঠিক করার ক্ষেত্রে এসব পুরুষ পেঁচা সেসব স্ত্রী সদস্যকে পছন্দ করেছে যাদের কিনা পালকের উপরিভাগে আকারে বড় কালো দাগ বিদ্যমান। দীর্ঘ ২৪ বছর গবেষণা করার পরেও এসব গবেষকেরা বের করতে পারেননি যে কেন পুরুষ সদস্যগুলো এসব স্ত্রী সদস্যকে বেশী যোগ্য মনে করে! কিন্তু আগের সঙ্গীর সাথে বিচ্ছেদ ঘটার পরে এরা অনেক সময় অপেক্ষাকৃত কম কালো দাগবিশিষ্ট স্ত্রী সদস্যকেও পছন্দ করেছে এবং এর দ্বারা বোঝা যায় যে আগের জন থেকে সুন্দরী সদস্য পছন্দ করা বিচ্ছেদের প্রকৃত কারণ নয়। এসব পুরুষ সদস্য সাধারণত কম বয়সী স্ত্রী সদস্যদেরকেই পছন্দ করে। তবে স্ত্রীদের ক্ষেত্রে কিন্তু ব্যপারটি সম্পূর্ণ ভিন্ন, সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে এরা কখনো আগের লেভেলের নীচে নামেনা বরং বেশী সন্তান উৎপাদনে সক্ষম পুরুষকেই মিলনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়।
তবে ঘন ঘন পার্টনার এর পরিবর্তন করলেই বাচ্চা বেঁচে থাকার হার বাড়েনা বরং একই সঙ্গীর সাথে বেশিদিন থাকার মাধ্যমেই বেশী সহনশীল বাচ্চা উৎপাদন সম্ভব।গবেষকেরা এতো দীর্ঘ সময়ের গবেষণাতে এটা বুঝতে পেরেছেন যে, বেশী সহনশীল বাচ্চা জন্ম দেয়াই এসব লক্ষ্মী পেঁচার মূল লক্ষ্য এবং মূলত একারণেই এরা সঙ্গীর পরিবর্তন ঘটায়।