সিংহ-বাঘের ভালবাসা – লাইগার লাইগার !!!
মুনাব্বির হাসান
প্রাণী জগতে আছে হাজার প্রজাতি, রয়েছে হাজার বৈচিত্র্য, রঙ রুপের বিচিত্রতা । হালের হলিউড মুভি কিংবা কমিক বই সবখানেই দেখা মেলে বিচিত্র সব প্রাণীর। তা দেখে গভীর ঘুমে কিংবা জেগে জেগে আমরা কতো আজব কল্পনা করি, যদি বিশাল একটা ইঁদুর থাকতো!! যদি হাতির একটা লেজ থাকতো ঘোড়ার মতো!! যদি হামিং বার্ড হতো সবথেকে বড় পাখি, কিংবা ডলফিনও উড়ে যেত আকাশে… এমন হাজার টা সংকর প্রাণীর কল্পনা হরহামেশাই মনের মধ্যে ক্রিয়া করে। তবে, আধুনিক বিজ্ঞান কিছু ক্ষেত্রে সংকর প্রাণীর সত্যিকার রুপ দেখাতে সমর্থ হয়েছে। যার ফল সরুপ আমরা দেখি ফার্ম গাভী কিংবা খচ্চরের মতো প্রজাতি। আজ জেনে নেয়া যাক লাইগার এর কথা, কি এই লাইগার??
“লাইগার(LIGER)” হ্যাঁ লাইগার হল সিংহ(LION) আর বাঘ (TIGER) এর মিলনে এক সংকর প্রজাতি। এ ক্ষেত্রে সিংহ এবং বাঘিনীর মিলনে লাইগার এর জন্ম । কিন্তু যদি বাঘ আর সিংহী হয় তবে কি হবে ? তা থেকে জন্ম নেবে “টাইগন (TIGON)”। লাইগারের জন্ম প্রাকৃতিক ভাবে হয়না বললেই চলে। সাধারণত চিড়িয়াখানা বা কোন নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এদের জন্ম হয়ে থাকে। কারণ; বিজ্ঞানীদের মতে বাঘ ও সিংহের প্রাকৃতিক আবাসস্থলএর দূরত্ব অনেক। উপমহাদেশীয় সিংহের আবাসস্থল বাঘের আবাসস্থল কাছকাছি হওয়া সত্ত্বেও বাঘ কিংবা সিংহ মুখোমুখি হলে সংঘাতে জড়িয়ে পরে কিংবা অযথা সংঘাত এড়াতে পরস্পরকে এড়িয়ে চলে। তাই প্রাকৃতিক পরিবেশে লাইগার জন্ম নেয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
লাইগার বাঘ এবং সিংহ ২ প্রজাতির বৈশিষ্টই বহন করে থাকে। এদের দেহের রঙ সিংহের মত হলেও বাঘের ডোরাকাটা দাগ ও দৃশ্যমান। পুরুষ লাইগার এর কেশর আছে তবে তা সিংহের মত বড় নয়। তুলনা মুলক ভাবে এদের মধ্যে সিংহের বৈশিষ্টই বেশি বিদ্যমান। এদের আকার বাঘ বা সিংহ দুইটির থেকেই বড় সে হিসেবে আমরা বলতে পারি বিড়াল প্রজাতির মধ্যে সবচে বড় হচ্ছে লাইগার। এরা মাংসাশী। আচরণগত দিক দিয়ে তুলনামুলকভাবে এরা শান্ত ও বন্ধুত্বপূর্ণ। এদের গর্জন অনেকটা সিংহের মতই। এদের মাংশপেশি চোয়াল বেশ সুগঠিত । এরা পানি পছন্দ করে যা বাঘের চারিত্রিক বৈশিষ্টের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ এবং সিংহের বিপরীত। ১টি পূর্ণবয়স্ক লাইগার দিনে প্রায় ৮০ কেজি পর্যন্ত মাংস খেতে পারে। ভিন্ন প্রজাতির অন্যান্য সংকরের মত এদেরও বংশবিস্তারের প্রবণতা কম,পুরুষ লাইগার সাধারণত জন্মদানে অক্ষম তবে স্ত্রী লাইগার পুরুষ সিংহ বা বাঘের সাথে মিলনে জন্মদানে সক্ষম সে ক্ষেত্রে জন্ম নেবে সিংহ, বাঘ , লি-লাইগারের কিংবা লি-টাইগারের।
এদের বাচ্চাগুলো সাধারণত খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় জন্ম নেয় এবং বেশির ভাগই মারা যায় কিংবা জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্ম নিয়ে জন্মের কিছুদিন পরই মারা যায়। মোটামুটি উনিশ শতকের থেকেই বিভিন্ন দেশের চিড়িয়াখানায় দর্শকদের বিনোদন ও অর্থনৈতিক সুবিধার কারণে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে লাইগার জন্ম দেয়া হচ্ছে এর মধ্যে ভারত,দক্ষিন আফ্রিকা,থাইল্যান্ড, আমেরিকা,রাশিয়া অন্যতম। বর্তমানে আমেরিকার ফ্লোরিডায় হারকিউলিস নামক ১ লাইগার পৃথিবীর সবচে বড় লাইগার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু অনেক প্রাণী অধিকার কর্মীদের মতে লাইগার উৎপাদন প্রাণী অধিকারের পরিপন্থী তাই তাদের বিরোধিতার কারণে অনেক দেশেই লাইগার উৎপাদন বর্তমানে নিষিদ্ধ।