
লিচুর ভেতর ভাইরাসঃ প্রাণ গেলো ৭ শিশুর
ফারজানা হালিম নির্জন
গরমের সময় স্বস্তির রসালো ফল,লিচু। দামের দিক থেকে একটু চড়া হলেও অভিভাবকরা বাচ্চাদের কথা ভেবে,দাম ভুলে গিয়ে থোকা থোকা লিচু নিয়ে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু সেই লিচু খেয়ে যদি নিজের ২-৩ বছরের আদরের শিশুটি মৃত্যুর কাছে পরাজিত হয়,তখন? ফরমালিনের ভয় তো রয়েছেই,সেই সাথে নবরূপে যুক্ত হলো লিচুর ভাইরাস! গত সপ্তাহে,ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদাহ জেলায় এই প্রাণঘাতী লিচু খেয়ে মৃত্যু হয়েছে সাত ফুটফুটে শিশুর।
লিচু সিনড্রোম নামে পরিচিত এই সংক্রমন ভাইরাস লিচুকে মরণের উপযুক্ত কারণ হিসেবে তৈরী করে। বৈজ্ঞানিকভাবে এই সিনড্রোমটি অ্যানসেফ্যালোপ্যাথি নামে পরিচিত। এটি বহু ধরণের হতে পারে। যত ধরণেরই হোক না কেন,এর প্রধান কাজ- মস্তিষ্কের ক্ষয়-ক্ষতি করা। এতে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা যেমন হারিয়ে যেতে পারে,তেমনি মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে!
মারা যাওয়া ৭ শিশুই ২-৪ বছর বয়েসী। তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়া মাত্রই,মালদহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার পর দেখা গেছে, এই ভাইরাস আক্রান্ত লিচু খাওয়ার সাথে সাথেই ভাইরাসটি মাথায় চলে যায়। সেখানে মস্তিষ্কের রক্ত-ক্ষরণ ঘটায়,আর ক্রমশই মাথা ফুলে যেতে থাকে। এই কার্যকলাপ চলাকালীন,শিশুদের জ্বর হয়,বমি শুরু হয়। একটা সময় হঠাৎ শরীরে খিঁচুনি হয় এবং ৫-৬ ঘন্টার মাথায় ঝরে পড়ে একটি নিষ্পাপ প্রাণ।
এটি একটি বিরল ধরণের সংক্রমণ। বিরল প্রজাতির এই ভাইরাসটির উৎপত্তি চীনে হলেও গ্রীষ্মের সময় উত্তর ভারতের কিছু কিছু অংশে এর প্রকোপ দেখা যায়। ২০১২ সালে অ্যানসেফ্যালোপ্যাথির এ ধরণের একটি প্রকোপে ১০০ এর বেশি সংখ্যক শিশুকে প্রাণ হারাতে হয়েছিলো।
সবচেয়ে ভয়ংকর কথা হচ্ছে,চলতি বছর মালদায় ফলন ভাল হওয়ার কারণে তুলনামূলকভাবে লিচুর মূল্য বাজারে কমে গেছে। আর তাই বিক্রিও চলছে ধুমধাম। কিন্তু লিচুর চেহারা দেখে কি বোঝার উপায় আছে,এটি সত্যিই নির্ভেজাল নাকি ভয়ংকর কোনো ভাইরাস লিচুর ভেতরে চুপটি করে অপেক্ষা করছে,কোনো এক শিশুর প্রাণ কেড়ে নেয়ার জন্য।