সঙ্কুচিত হচ্ছে পাটের আন্তর্জাতিক বাজার

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাতসামগ্রীর বাজার সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। পক্ষান্তরে এই বাজার চলে যাচ্ছে ভারতের দখলে। তবে বাজার দখলের প্রতিযোগিতায় চীন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামও পিছিয়ে নেই। juteদেশের সোনালী আঁশের এই বেহালদশার জন্য দায়ী ভারত থেকে আমদানি করা নিম্নমানের পাট বীজ, এ খাতের অনিয়ম, চুক্তি মোতাবেক সঠিক সময়ে বিদেশে মাল না পাঠানো এবং উচ্চমানের পাট ও পাটজাতপণ্যের নমুনা দেখিয়ে নিম্নমানের মালামাল রপ্তানি করা।
জানা যায়, ভারত থেকে বৈধভাবে আমদানি এবং সীমান্ত দিয়ে চোরাইভাবে আসা নিম্নমানের পাট বীজে দেশের বাজার এখন সয়লাব। ভারত থেকে আসা এসব নিম্নমানের পাট বীজের গুণগতমান খারাপ হওয়ায় একরপ্রতি এর উৎপাদন  দেশীয় পাট বীজের তুলনায় অনেক কম। এই অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রম দেশীয় পাট চাষীদের বেকায়দায় ফেলেছে। এতে করে পাটের আবাদ কমে যাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। সরকারের একটি মহল এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ এসব প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। এসব নিম্নমানের পাট বীজ নিয়ে সরকারের কাছে লিখিত অভিযোগ এসেছে। একইভাবে চুক্তি মোতাবেক সঠিক সময়ে বিদেশে মাল না পাঠানো এবং উচ্চমানের পাট ও পাটজাতপণ্যের নমুনা দেখিয়ে নিম্নমানের মালামাল রপ্তানির অভিযোগের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে। জানা যায়, সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি) ছাড়াও ব্যক্তি মালিকানাধীন জুটমিল এবং বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএ) কতিপয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে আসা বেশকিছু অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তদন্তের জন্য পাট অধিদপ্তরে পাঠানোও হয়েছে।
অভিযোগকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে-ব্রিটেন, আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, সৌদি আরব, পাকিস্তান, সিরিয়া, ইরাক, ইরান, চীন, কেনিয়া ও ভারত। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এসব দেশ বাংলাদেশের বিশাল অঙ্কের পাওনা আটকিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে সিরিয়া থেকে অনেক দেনদরবার করে গত দু’মাসে প্রায় ৫৪ কোটি টাকা ছাড় করানো হয়েছে। আরও অন্তত ১শ’ কোটি টাকা ছাড় করানোর ব্যাপারে সিরিয়ার সরকার আরবিট্রেশনে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। ইরান ও পাকিস্তান ও ভারতের সাথেও দেন-দরবার করে আটকে থাকা অর্থের কিছু অংশ ছাড় করানো হয়েছে। সূত্রমতে, শুধুমাত্র সুদানের কাছেই  আসল ও সুদ মিলিয়ে বাংলাদেশের পাওনা প্রায় ৭শ’ কোটি টাকা বলে জানা গেছে।
এ বিষয় নিয়ে পাট মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য হচ্ছে- সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের পাটের বাজার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেইসাথে দেশের ভাবমূর্তি যারা ক্ষুণœ করছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পাট অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়াও কারা পাটের মজুদ গড়ে তোলে বাজারে সঙ্কট সৃষ্টি করছে, নিম্নমানের পাট বিদেশে পাঠাচ্ছে এসব ধরার জন্য তদন্ত টিম নামানো হয়েছে।
অন্যদিকে, ভারত থেকে নিম্নমানের পাট বীজ আমদানির ব্যাপারে জানা যায়- গত বছর দেশে সরকারিভাবেই ৪ হাজার ৩৬১ মেট্রিক টন পাট বীজ আমদানি করা হয়েছিল। এর বাইরেও ভারত থেকে চোরাইভাবে সীমান্ত দিয়ে পাট বীজ প্রবেশ করেছে। আর এবছর ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ৩ হাজার ৫১২ মেট্রিক টন পাট বীজ ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মোতাবেক, দেশের প্রায় সাড়ে ৬ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়। এজন্য ৪ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন পাট বীজের প্রয়োজন হয়। চোরাইভাবে পাট বীজ ভারতের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে যেসব ব্যবসায়ী ভারতীয় পাট বীজ আমদানি করছে তারা যশোরের বেনাপোল এবং লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর ব্যবহার করছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সুদানের কাছে ১৯৯৪ সালে যে ২৫ মিলিয়ন ডলারের পাটজাতপণ্য বিজেএমসি পাঠিয়েছিল- তার মধ্যে থেকে এখনও ১৫ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশের পাওনা রয়েছে। যা ওইসময়কার চুক্তি অনুযায়ী ১২ শতাংশ সুদাসলে এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭শ’ কোটি টাকার উপরে। এই টাকা আদায়ের জন্য পাট সচিবের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি টিম তিন বছর আগে গঠন করা হলেও এর কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। জানা যায়, ২০০৬ সালে চুক্তি অনুযায়ী সিরিয়ায় পাটজাতপণ্য পাঠাতে দেরি হওয়ার কারণে তারা ৪ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করেছিল। সিরিয়াতে বর্তমানে গোলযোগ চলায় বিষয়টি এখন সমাধান হয়নি বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।
ভারত থেকে আসা নিম্নমানের পাট বীজ দেশীয় পাট চাষীদের কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ উইংয়ের কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার ফারুক ইনকিলাবকে জানান, বর্তমানে ভারত থেকে নিম্নমানের পাট বীজ আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে চোরাইপথে এখনও নিম্নমানের কিছু পাট বীজ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে এরকম তথ্য আমাদের কাছেও রয়েছে। আমরা এসব ব্যপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি।

সূত্র ঃ দৈনিক ইনকিলাব  ১১.০৪ .২০১৩

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics