
সতর্ক থাকুন লিস্টেরিওসিস থেকে !!!!
সাবেরা সায়মা
লিস্টেরিওসিস রোগটির নাম শুনেছেন??
হয়তো,বেশীরভাগেরই উত্তর আসবে না! পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত হাজার রকম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এর মধ্যে কয়টা সম্পর্কেই বা আমরা জানি? আর জানাটা আসলে সম্ভবও নয়। তবে এতোটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, লিস্টেরিওসিস রোগটি সম্পর্কে জানা আপনার বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য খুবই জরুরী!
লিস্টেরিওসিস হয় লিস্টেরিয়া মনোসাইটোজিনেস (listeria monocytogenes) নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে। মাটি,পানি সবখানেই থাকতে পারে এ ব্যাক্টেরিয়া। মূলত কাঁচা শাক-সবজি,কাঁচা মাংস, দুধ এমনকি রেফ্রিজারেটরের কম তাপমাত্রায়ও এরা জন্মাতে পারে। মাত্র একহাজারটিরও কম সংখ্যক ব্যাক্টেরিয়া এসব খাবারের সাথে আপনার দেহে প্রবেশ করে আপনার অজান্তেই সৃষ্টি করতে পারে এ রোগ। তবে সবথেকে ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, অন্যান্যদের তুলনায় গর্ভবতীদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ২০ গুণ বেশি এবং এতে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় গর্ভের শিশুটি। এতক্ষণে হয়তো নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন লিস্টেরিওসিস রোগটি সম্পর্কে জানা কেন আপনার বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য জরুরী।
গর্ভের সপ্তম মাস থেকে শুরু করে শেষ কয়েক সপ্তাহ একজন গর্ভবতীর জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এ সময়টিতেই তার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সবচেয়ে কম থাকে। সুতরাং এ সময়টিতেই যেকোনো রোগ দ্বারা সে খুব সহজেই আক্রান্ত হয়।
লিস্টেরিয়া মনোসাইটোজিনেস ব্যাক্টেরিয়া দূষিত খাবার গ্রহণের এক থেকে আট সপ্তাহের মধ্যেই গর্ভবতী মায়েদের দেখা দিতে পারে নানান উপসর্গ যেমন মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা, জ্বর , বমি বমি ভাব , বমি , ডায়রিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা সদৃশ নানা উপসর্গ। ছোটখাটো সমস্যা বলে অনেকেই হয়তো এ উপসর্গগুলোকে খুব একটা আমলে নিতে চাইবেন না। এ অবহেলাই গর্ভে বেড়ে ওঠা শিশুটিকে ঠেলে দেয় মারাত্মক পরিণতির দিকে।গর্ভবতী মায়ের লিস্টেরিওসিস এ আক্রান্ত হওয়া গর্ভপাত এবং মৃত,অপরিপক্ক অথবা অস্বাভাবিক শিশুর জন্মদানের কারণ হতে পারে।
লিস্টেরিওসিস রোগের উপসর্গ দেখা মাত্রই রক্ত পরীক্ষা্য় লিস্টেরিয়া ব্যাক্টেরিয়া উপস্থিতির মাধ্যমে এ রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। অতিদ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে গর্ভের শিশুকে রক্ষা করা সম্ভব। তবে আমাদের দেশের ডায়াগনস্টিক ল্যাবগুলোতে আদৌ এ রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা আছে কিনা আর এ রোগ সম্পর্কে এ দেশের কয়জন চিকিৎসকইবা জানেন সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে!
আমাদের মত হত-দরিদ্র দেশে অনেক গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করাই যেখানে দায়,সেখানে হয়তো এই ধরণেরকথা অনেকের কাছেই হাস্যকর মনে হতে পারে। দারিদ্রতার থেকেও আমাদের সবথেকে বড় সীমাবদ্ধতা কি জানেন? আমাদের অজ্ঞতা আর অসচেতনতা । সেসব হতাশাজনক কথা বাদ দিয়ে না হয় মূল ব্যাপারটিতেই ফিরে আসি। গর্ভকালীন সময়ে কয়েকটি ব্যাপার একটু মেনে চললেই লিস্টেরিওসিস থেকে গর্ভবতী ও গর্ভের শিশুকে রক্ষা করা সম্ভব।
- কাঁচা ফল ও সবজি ধুয়ে খাওয়া।
- এক্ষেত্রে বাইরের সালাদ এবং অন্যান্য কাঁচা খাবার এড়িয়ে চলাটাই উত্তম।
- ফলমূল বা শাকসবজি কাটার যন্ত্র ভাল জীবাণুনাশক দিয়ে ধোয়া।
- রেফ্রিজারেটরের এর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি এর নিচে রাখা।
- রেফ্রিজারেটর পরিষ্কার রাখা আর কাঁচা খাবার রেফ্রিজারেটরে আলাদা ভাবে প্যাকেট করে রাখা।
- খাবার ভালমতো রান্না করে খাওয়া
- রেফ্রিজারেটরের খাবার ভালমতো গরম করে খাওয়া।
আজ যে শিশু পৃথিবীর আলোয় এসেছে,
আমরা তার তরে একটি সাজানো বাগান চাই।
আজ যে শিশু মায়ের হাসিতে হেসেছে,
আমরা চিরদিন সেই হাসি দেখতে চাই।
পৃথিবীতে আগমনের পর,প্রতিটি শিশুর নিরাপদে পৃথিবী উপহার দেয়ার আগেগর্ভের শিশুটি যাতে নিরাপদ থাকেসে ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপদ মাতৃত্বই দিতে পারে সুস্থ শিশুর জন্ম।
লেখকঃশিক্ষার্থী, চতুর্থ বর্ষ, অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ।