সবুজ গ্রীনল্যান্ড নাকি নীল জলরাশির ভয়াবহতা?

ফারজানা হালিম নির্জন 

বর্তমানে পৃথিবীর ২য় বৃহত্তম বরফ-ঢাকা এলাকা গ্রীনল্যান্ড। নামে গ্রীনল্যান্ড হলেও, সবুজের স্থলে সাদাটাই যেন কর্তৃত্ব খাটাচ্ছে অনেক বেশি! বরফে বরফে ঢাকা গ্রীনল্যান্ড নামক দেশটির নাম কেন গ্রীনল্যান্ড রাখা হলো,সে এক যুক্তিযুক্ত প্রশ্নই বটে। তাহলে কি কোনো একসময় ঘন সবুজের ছায়ানীড় ছিলো আজকের গ্রীনল্যান্ড? বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের চোখ আর গবেষকদের গবেষণার মস্তিষ্ক অনেক অনেকদিন ধরে এই গ্রীনল্যান্ড এর উপর নজর বুলাচ্ছে। সম্প্রতি, লরেন্সলিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরী’ র গবেষণা দল একটি  গবেষণাপত্র তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর কাছে। গ্রীনল্যান্ডের প্রায় তিন কিলোমিটার পুরু বরফ-স্তরের নীচে নাকি রয়েছে প্রায় তিন মিলিয়ন বছরের পুরনো মাটি!disko-bay-greenland

তুন্দ্রা ভূদৃশ্যটি জমাট বাঁধা অবস্থায় সংরক্ষিত আছে সেখানে। তুন্দ্রা ভূদৃশ্য হলো গাছ গাছালির জন্য এক উপযুক্ত পরিবেশ।এই ধরণের মাটির অস্তিত্ব পাওয়ার মানে হলো, একসময় অসাধারণ সবুজে ঢাকা ছিলো পুরো গ্রীনল্যান্ড। স্তরে স্তরে জমা বরফের চাপে তা আজ এক পৌরাণিক কাহিণির মত মমি হয়ে পড়ে আছে নীচে।সত্যিই যদি তা হয়,তবে যে হারে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে কি আবার সেই সবুজ গ্রীনল্যান্ডের চিত্র দেখতে পাবে পৃথিবী বাসী!

অতীতের অত্যাধিক উষ্ণতম আবহাওয়ার মুখোমুখি হয়েও যতবার উপরের স্তরের বরফ গলেছে, সবসময়ই গ্রীনল্যান্ডের অভ্যন্তরের সেই বরফ একই রকম স্থিতিশীল ছিলো।এই ধারণার প্রেক্ষিতে, গবেষনা দলের অন্যতম প্রধান গবেষক,ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ববিদ পল বিয়ারম্যান বলেন, “এর থেকে প্রমাণিত হয় যে অতীতে কখনোই গ্রীনল্যান্ডের বরফ পুরোপুরি গলে যায় নি।” তাছাড়া সাধারণজ্ঞান অনুসারে, কোনো কিছু ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার ক্ষেত্রে হিমবাহ বেশ জোরালো ভূমিকা রাখে।অথচ তাঁদের আবিষ্কারের ফলে দেখা গেলো, গ্রীনল্যান্ডের ক্ষেত্রে ঘটনা একেবারেই তাই নয়। গ্রীনল্যান্ডের বরফ পিন্ড কিংবা হিমবাহ যে টাই বলা হোক না কেন,তারা ক্ষয়ের ক্ষেত্রে নিশ্চল অবস্থান পালন করে।শুধু মাত্র তিন মিলিয়ন বছর পূর্বে গ্রীনল্যান্ডের জন্মলগ্নে অবিশ্বাস্যভাবে এই বরফ তার কেন্দ্রে হালকা ক্ষয়প্রাপ্ত হবার আচরণ প্রদর্শন করেছিলো মাত্র! উলটো তার ভেতরের সেই সবুজ পরিবেশটিকে আরো অধিকতর ঠান্ডা করে করে ঢেকে দিয়েছে দিনের পর দিন। এছাড়া আর কিছুই করেনি সে!IMG_1349_16x9
তবুও অনেক গবেষকরা এখন উদ্বিগ্ন, যে হারে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, চিরাচরিত এমন কাঠিন্য ভবিষ্যতে কি ধরে রাখতে পারবে গ্রীনল্যান্ডের বরফ? একটি মডেলের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে,গ্রীনল্যান্ডের বরফ যদি পুরোপুরি গলে যায়,তবে তার একার পক্ষেই সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা ৭ মিটার বাড়িয়ে ফেলা সম্ভব ! এতে করে সবাই আশা করতেই পারে, চাপা পড়ে থাকা সেই নির্মল সবুজ পরিবেশের গ্রীনল্যান্ড আবার ধরা দেবে সবার সামনে। কিন্তু পৃথিবী যদি পানির নীচে তলিয়ে যেতে থাকে,সবুজ দেখার মানুষ ক’জনই বা অবশিষ্ট থাকবে!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics