সবুজ স্বপ্নের ২ বছর
অনিমেষ ঘোষ অয়ন
২০১১ সালের এক বিকালে ‘রুবেল’ ভাই ফোন করে বললেন তাঁর মেসে যাওয়ার জন্যে, কী যেন কি দরকার আছে। ফোন পেয়ে ভাই’র মেসে ছুটলাম।মাথায় অনেক প্রকারের হিসেব নিকেশ চলছিলো ভাইয়া কি বলতে চান তাই নিয়ে।যাইহোক, মেসে গেলে ভাইয়া জানালেন তাঁর পরিকল্পনার কথা। আমাদের শাবিপ্রবি’র প্রতিষ্ঠার এত বছর পার হয়ে গেলেও আমাদের নেই কোনো পরিবেশ বা প্রকৃতি বিষয়ক সংগঠন, যার মাধ্যমে আমরা ক্যাম্পাসে প্রকৃতি বা পরিবেশ বিষয়ক কাজকর্ম করতে পারি। এরপর আমরা আমাদের পরিচিত যারা আছে এসব নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী তাদের নিয়ে বসলাম শাবিপ্রবি’র কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে। মূলত সেটিই ছিল আমাদের প্রথম বৈঠক। রুবেল ভাই ছাড়াও আমি,রেজা, রিয়া, বানী, রাফসান, মাহাদী ভাই, রনি দা, শুক্লা দি, বিথী আপু, তুস্টি আপু, মেরিনা আপু, সাগর, মাসুম ছিলাম ঐ সভাতে।
এরপর কত মিটিং- কোনদিন সংবিধান নিয়ে, তো কোনোদিন সংগঠনের কাজ নিয়ে। মনে পড়ে ,একবার সংগঠনের নাম ঠিক করা নিয়ে আমরা বেকায়দায় পড়ে যাই। নাম কিছুতেই ঠিক করা যাচ্ছে না। যেটাই মনে ধরে সেটাই হয় ব্যবহৃত হয়ে গেছে নতুবা অন্য কোনো ঝামেলা আছে। অবশেষে ২টা মিটিঙ্গের পর আমরা আমাদের সংগঠনের নাম চূড়ান্ত করতে পারলাম, আর নামটা হল ‘গ্রিন এক্সপ্লোর সোসাইটি’।
এরপর আমরা কয়েকজন নেমে পড়লাম সংগঠনের ‘সংবিধান’ তৈরির কাজে। ৪ রাত নির্ঘুম থেকে আমরা কয়েকজন রুবেল ভাইয়ের মেসে এ কাজটা করলাম। এরপরে আরো কয়েকদিন গেলো এই সকল টিম মেম্বারদের সাথে নিয়ে এই সংবিধান ঘষামাজা করতে করতে। এক সময় তা চূড়ান্ত হয়ে গেলে আমরা নেমে পড়লাম এবার ‘সংগঠন’টির উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের কাজে। আগে থেকেই যিনি আমাদের অনেক রকম সহায়তা করে আসছিলেন সেই স্বপন স্যারকে আমরা প্রথমেই পেলাম ‘উপদেষ্টা’ হিসেবে। এরপরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের নওরীন ম্যাডাম আমাদের উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন জানালে আমরা শুরু করে দিলাম আমাদের ‘প্রধান উপদেষ্টা’ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ সায়েন্সেস অনুষদের ডীন ডঃ ইয়াসমীন হক ম্যাডামকে রাজী করানোর কাজে। কিন্তু এখানে এসে একটা ভাল ধাক্কা খেলাম। ম্যডামকে রাজী করাবো কী, উনার সাথে দেখাই করতে পারছি না আমরা কেউ। আমি আর রুবেল ভাই পুরো ১ সপ্তাহ উনার বিভাগের অফিসে যাই আর খবর নিই, কিন্তু ম্যাডামের সাথে আর দেখা হয় না। অবশেষে একদিন রুবেল ভাই আর আমি সিদ্ধান্ত নিই যেভাবেই হোক ঐদিন আমরা ম্যডামকে খুঁজে বের করবো আর ম্যডামকে আমাদের সংগঠনের ‘প্রধান উপদেষ্টা’ হিসেবে থাকার জন্যে রাজী করাবো। সকাল থেকে ম্যাডামের সাথে দেখা করার চেষ্টা করতে করতে অবশেষে আমরা বিকালে ম্যডামের সাথে দেখা করতে পারলাম। ম্যাডাম আমাদের সংগঠনের সবকিছু জেনে খুশি হলেন আর কয়েকদিন পর আমাদের সংগঠনের ‘প্রধান উপদেষ্টা’ হিসেবে থাকবেন বলেও জানালেন।
এরপর আমরা আমাদের সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ‘বিশ্ববিদ্যালয়’র সংগঠন হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্যে কর্তৃপক্ষের অনুমতি চেয়ে এক আবেদন করি। আবেদন করার পর আমার আর সাগর’র ডিউটি থাকতো আমরা প্রতি সপ্তাহে ‘প্রক্টর’ অফিসে খবর নিতাম। কিন্তু অনুমতি আর মিলে না। এভাবে করতে করতে সপ্তাহ পেড়িয়ে মাস পার হয়ে গেল- তারপরেও আমরা অনুমতি পাই না। এই করতে করতে প্রায় ৬ মাস কেটে গেল। আমরাও হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম।
২০১২ সালের প্রথম ১১ জানুয়ারী আবার গেলাম ‘প্রক্টর’ স্যারের অফিসে। তখন নতুন প্রক্টর হিসেবে ‘হিমাদ্রী শেখর রায়’ স্যার মাত্র জয়েন করেছেন। তারকাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আমাদের সমস্ত কাগজপত্র দেখে তখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠন হিসেবে আমাদের অনুমতি দিয়ে দিন। সময় ছিল তখন দুপুর ১২টা বেজে ৫০ মিনিট। আমি ‘প্রক্টর অফিস’ থেকে বের হয়ে এই খবর জানানোর জন্যে সোজা চলে গেলাম রুবেল ভাইয়ের মেসে। রুবেল ভাইকে জানানোর পরপরই আমাদের সকল সদস্যদের জানিয়ে দিলাম আমরা এ আনন্দের খবর। আর ওইদিনই আমরা ঠিক করি, যেহেতু ১১ জানুয়ারি আমরা অনুমতি লাভ করি সেহেতু ওইদিনই আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করবো।
এরপর কেটে গেল ২ বছর। এই ১১ জানুয়ারিতে আমাদের গ্রিন এক্সপ্লোর সোসাইটি পূর্ণ করল এর ২ বছর আর পা রাখলো ৩য় বছরে। আমরা হয়তো অনেক কাজ করেছি, এবং নিশ্চিতভাবেই অনেক কাজ করতে পারিনি। তবে আশা করবো অতীতের ন্যায় আমাদের কাজের ধারা ভবিষ্যতেও অক্ষুন্ন রাখতে, আরো নতুন নতুন কার্যক্রমগ্রহনের মাধ্যমে প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ে সকলের মাঝে সচেতনতা গড়ে তুলতে। আমরা আশা করবো আমাদের চলার পথে বিভিন্নভাবে আমাদের প্রতি সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে সবাই আমাদের ‘সবুজ পৃথিবী’ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবেন।
লেখকঃ সভাপতি, গ্রিন এক্সপ্লোর সোসাইটি
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়