সমুদ্র সম্পদ ও পরিবেশ রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি
বাংলাদেশের সামুদ্রিক অঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদ ও জীববৈচিত্রের আধার। সামুদ্রিক অঞ্চলের পরিবেশ রক্ষা এবং সম্পদের টেকসই আহরণের জন্য একটি বহুমুখী দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রয়োজন। সমুদ্রের সাথে সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয় বা সংস্থা জড়িত বিধায় এ সকল মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সমন্বয় ও মনিটর করার জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পরিষদ বা কমিশন গঠন সময়ের চাহিদা। আজ ২৪ মে ২০১৪, সকালে সিরডাপ সম্মেলন কক্ষে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইন কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমুদ্র বিষয়ক ইউনিটের সচিব রিয়ার এডমিরাল মো: খুরশেদ আলম (অব:), বাংলাদেশ নৌবাহিনীর পরিচালক (অপারেশনস) কমডোর এস. এম. হাকিম। সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সাইন্স এন্ড ফিশারিজের প্রফেসর মো: মারুফ হোসেন, বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ক্যাপ্টেন শাহদাত হোসেন এবং প্রবন্ধের উপর আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ’গোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রফেসর শহিদুল ইসলাম ও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের কমান্ডার বজলুর রশিদ। সেমিনারে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন, আইন কমিশনের সদস্য প্রফেসর এম শাহ আলম, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর মিজান আর খান, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: আলাউদ্দিন, পবার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনোয়ার হোসেন। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সরকারি সংস্থা, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড প্রতিনিধি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের অধ্যাপক, পরিবেশবিদ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
মিয়ানমারের সাথে সীমানা নির্ধারণের ফলে বঙ্গোপসাগরের ১ লক্ষ ১১ হাজার ৬৩১ বর্গকিলোমিটারের উপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের এই এলাকায় মৎস সম্পদসহ জীববৈচিত্রের ও খনিজ সম্পদের অফুরন্ত ভান্ডার রয়েছে। এসব সম্পদের জরিপ, গবেষণা, অনুসন্ধান, আহরণ ও পরিকল্পিত ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা জরুরী।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, সামুদ্রিক অঞ্চলের তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদের পুঙ্খানুপুঙ্খ জরিপ করে চিহ্নিত সম্পদের ব্যবহার নিশ্চিত করা। সরকারের একার পক্ষে এ বিশাল কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
বিশেষ অতিথি রিয়ার এডমিরাল মো: খুরশেদ আলম (অব:) তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের উপক’লে ৭৫ টি ছোট বড় দ্বীপ রয়েছে। এসব দ্বীপের অনেকগুলোই বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে আগামি ১০ বছরের মধ্যেই ব্যবহার উপযোগী করা সম্ভব। এমন অনেক দ্বীপ রয়েছে যেখানে জনবসতি নেই কিন্তু বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা সম্ভব বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
সেমিনারে সমুদ্র সম্পদের যথাযথ ব্যবহার, সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনার নিন্মবর্ণিত সুপারিশ করা হয়-
১. সম্পদ রক্ষা, আহরণ, ব্যবহারের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ
২. বাংলাদেশের সামুদ্রিক অঞ্চলের সম্পদের বিজ্ঞানভিত্তিক জরিপ করা
৩. মেরিটাইম কমিশন গঠন করা। এই কমিশনের প্রধান একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী পদমর্যাদার হতে হবে।
৪. সম্পদ ও সামুদ্রিক অঞ্চলের সুরক্ষায় নৌবাহিনী ও কোষ্টগার্ডকে শক্তিশালী করা
৫. আলাদা একটি মেরিন ফিশারিজ অধিদপ্তর করা যেতে পারে।
৬. কক্সবাজারের রামুতে প্রস্তাবিত জাতীয় ওশানোগ্রাফিক গবেষণা ইন্সটিটিউটের কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন করা।
৭. সমুদ্রে গ্যাস ও তেল অনুসন্ধানের জন্য সমুদ্র এলাকাকে বিভিন্ন ব্লকে বিভক্ত করে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করা । সম্ভাব্য ক্ষেত্রে দেশীয় কোম্পানিকে অগ্রাধিকার দেয়া।
৮. আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় ব্যাপকভিত্তিক জরিপ করা এবং তার ফলাফলের ভিত্তিতে মৎস সম্পদ আহরণের নীতিমালা প্রণয়ন করা। স্পারসোর সহায়তা বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে মাছের মজুদ এবং আহরণযোগ্যতা নির্ণয় করা
৯. সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ওশানোগ্রাফী ডিপার্টমেন্ট চালু করা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা।
১০. দেশি ও আন্ত:রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগের মাধ্যমে সম্পদের আহরণ করা
১১. সামুদ্রিক নিরাপত্তা কেন্দ্র স্থাপন করা যা সমুদ্র নিরাপত্তার সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি সংস্থার সাথে সমন্বয় পূর্বক কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
১২. বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সমুদ্র আইনসমূহ বাস্তবায়ন করা এবং সময়োপযোগী করতে সংশোধন করা।
১৩. আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কনভেনশনসমূহ অনুস্বাক্ষর করা। জাতীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কার্যক্রম সমন্বয় করা।