
সম্ভাবনা যখন ব্যাকটেরিয়া !!!
ফারজানা হালিম নির্জন
বাণিজ্যিক পণ্যে,বিভিন্ন যৌগের উৎস হিসেবে ব্যাকটেরিয়ার ব্যাবহার হয়ে আসছে বহুকাল ধরে। শুধু ব্যাকটেরিয়া কেন,অনেক ধরণের অণুজীবই ব্যাবহার করা হচ্ছে। সেই পরিব্যাপ্তি এখন ভেষজ ঔষধ থেকে শুরু করে ওয়াশিং পাউডার পর্যন্ত বিদ্যমান। সাম্প্রতিক এর সাথে যুক্ত হয়েছে নতুন আরেকটি উৎস। সামুদ্রিক অণুজীব! যা কিনা বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে লুকিয়ে আছে সমুদ্রের গভীর তলদেশে। তবে একটু দেরীতে হলেও বিজ্ঞানীরা সেসব অণুজীব নিয়ে কাজ শুরু করেছেন এবং ধীরে ধীরে জৈবপ্রযুক্তিতে এদেরকেও নিয়ে আসছেন সসম্মানে !
প্রশান্ত মহাসাগর পরিবেষ্টিত ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ার লোনা আর গরম পানির হ্রদগুলোতে অসংখ্য অণুজীব রয়েছে,যেগুলো উচ্চমানের প্লাস্টিক,কসমেটিক্স ইত্যাদি বাণিজ্যিক পণ্য তৈরির জন্য ভীষনভাবে উপযোগী। বিজ্ঞানীদের মতে,পলিনেশিয়ান জলজ বাস্তুসংস্থানে উচ্চ তাপমাত্রা এবং লবণাক্ততার উপর নির্ভরশীল এমন কিছু সামুদ্রিক ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে,যেগুলো ঔষধবিদ্যায় যুগান্তকারী অবদান রাখতে পারে! কিন্তু এসব সামুদ্রিক অনুজীব নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রটি তেমন সুগঠিত নয়। পলিনেশিয়ান জৈব-রসায়নবিদ বার্নার্ড কোস্টা’র মতে,এখন পর্যন্ত পৃথিবীর মাত্র ৩ শতাংশ সামুদ্রিক ব্যাকটেরিয়া সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।বাকি রয়ে গেলো আরো ৯৭ শতাংশ! এর গুরুত্ব অনুধাবন করে ২০০৬ সালেই বার্নার্ড কোস্টা ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ার প্রথম বায়োটেকনোলজি কোম্পানি, ‘প্যাসিফিক বায়োটেক’ উদ্ভাবন করেন,যা কিনা কেবল দ্বীপপুঞ্জগুলোর সেইসব সম্ভাবনামইয়ী সামুদ্রিক অণুজীব নিয়ে গবেষণা করছে এবং জৈবপ্রযুক্তির বিভিন্ন শাখা-প্রশাখাগুলোতে তাদের ব্যাবহার নিশ্চিত করছে। এই কোম্পানিটির পাশাপাশি আরো কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে। সেগুলো হলো,ফ্রান্সের ‘দ্যা ইন্সটিটিউট অব রিসার্চ ফর ডেভেলপমেন্ট’, ‘দ্যা ফ্রেঞ্চ রিসার্চ ইন্সটিটিউট ফর এক্সপ্লোয়টেশন অব দ্যা সী’ এবং ‘দ্যা ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টেফিক রিসার্চ’।
এসব অনুসন্ধানের ফলে এক ধরণের কমলা রঙের অণুজীবের সন্ধান পাওয়া গেছে,যারা তীব্র সূর্যরশ্মি এবং লবণাক্ততার আহবানে সাড়া দিয়ে তাদের অস্তিত্ব প্রকাশ করে থাকে।
এছাড়াও ‘প্যাসিফিক বায়োটেক’ এক ধরণের সামুদ্রিক ব্যাকটেরিয়াম আবিষ্কার করেছে,যার নাম Paracoccus zeaxanthinifacienspavriae. যেটি এক্সোপলিস্যাকারাইড অণু তৈরী করতে সক্ষম,যা কিনা বাণিজ্যিকভাবে খুবই উপকারী এক উপাদান! শুধু এতেই সীমাবদ্ধ নয়, ‘প্যাসিফিক বায়োটেক’ Psedomonus quezennei নামে এমন আরেকটি ব্যাকটেরিয়ামের সন্ধান খুঁজে পেয়েছে,যেটি পলহাইড্রোঅক্সিঅ্যালকানোট নামে এক ধরণের পলিএস্টার তৈরী করে থাকে। এই পলিএস্টারটি থেকে এমন প্যাকেজিং উপাদান তৈরী করা সম্ভব যা জীবাণুরোধক হিসেবে কাজ করতে পারে! এর পাশাপাশি বার্নার্ড কোস্টা বলেন,এই ধরণের সামুদ্রিক ব্যাকটেরিয়াগুলো প্লাস্টিক উৎপাদনের বিকল্প হিসেবে দারুণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। তাছাড়া অশোধিত তেল থেকে প্লাস্টিকের উপাদান সংগ্রহের চাইতে এসব সামুদ্রিক অণুজীব বেছে নেয়া পারতপক্ষে আরো বেশি স্বাস্থ্যসম্মতও বটে!
ডেনমার্কের টেকনিকাল ইউনিভার্সিটির একজন জৈবপ্রযুক্তি গবেষক,লোন গ্রাম বলেন; সমুদ্রে অজস্র অণুজীব বসবাস করে,সামুদ্রিক পরিবেশের জন্য সেগুলো অনন্য এবং তুলনাহীন। তারঁ এই বক্তব্যের সাথে অনেক বিজ্ঞানীরাই একমত। কারন, পৃথিবীর স্থলভূমির অণুজীব এবং সামুদ্রিক অণুজীবের মধ্যে পার্থক্যের পরিমাণটা অনেক বেশি! স্থলভাগে যেসব অণুজীব রয়েছে,তাদের থেকেও হাজার হাজার গুনে এগিয়ে আছে জানা-অজানার গভীরে লুকিয়ে থাকা সেইসব সামুদ্রিক অণুজীবগুলো। মাত্র ৩ শতাংশ আবিষ্কার করেই বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছেন, জৈবপ্রযুক্তিতে অবদান রাখার ব্যাপারে স্থলভাগের অণুজীবদের থেকে সামুদ্রিক অণুজীবেরা অনেকখানি এগিয়ে !