সহস্র বাড়িঘর ও বনভুমি জ্বালিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে অষ্ট্রেলিয়ার দাবানল
অষ্ট্রেলিয়ার বেশকিছু অঞ্চলে সংঘটিত দাবানলে সহস্র ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে এবং অবস্থা আরো ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে। অষ্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস, ব্লু মাউন্টেইন্স, সিডনি ও নিউ ক্যাসল অঞ্চলে এই ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় দেড় সপ্তাহ ধরে ছড়িয়ে পরা আগুনে নিউ সাউথ ওয়েলসের বিশাল এলাকা সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে।
অক্টোবরের মাঝামাঝিতে সুত্রপাত হওয়া এই দাবানল এখন অষ্ট্রেলিয়ার জনগনের জন্য একটি বিরাট আতঙ্কে পরিনত হয়েছে। উক্ত দাবানল অষ্ট্রেলিয়ার এক দশকের মধ্যে সবছেয়ে বিপজ্জনক দাবানল হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। দাবানলের প্রধান সহায়ক হচ্ছে গরম আবহাওয়া এবং গতিশীল বাতাস। এই দ্রুতগামী বাতাসের জন্য আগুনের বিস্তৃতি খুব দ্রুত হচ্ছে। অষ্ট্রেলিয়ার পুলিশ এবং জরুরী সেবা মন্ত্রনালয় থে বলা হয়েছে, এই দাবানলটির´গতি এবং ভয়াবহতা´ বিগত কয়েক দশকে পরিলক্ষিত হয়নি এবং একেকটি আগুনের শিখা প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। অষ্ট্রেলিয়ার রুরাল ফায়ার সার্ভিসের অনুযায়ী নিউ সাউথ ওয়েলসে এখনো ৮০ টি আগুনের শাখা রয়েছে যার মধ্যে ২০ টি তাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে রয়েছে। সিডনির পশ্চিমে ব্লু মাউন্টেইন্স হচ্ছে দাবানলে আক্রান্ত সবচেয়ে ভুক্তভোগী এলাকা। প্রায় ১৯৩ টি বাড়ী ইতিমধ্যে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে এবং ১০৯ টি ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা আরো বিবৃতি দিয়েছে,এই আগুন কোনোভাবে বন্ধ করা সম্ভব নয় এবং এটি কিলোমিটারের পর কিলোমিটার ছড়িয়ে পড়ছে। অগ্নি কর্মকর্তারা বলেন, এক একটি আগুনের শিখা প্রায় ২০ থেকে৩০ মিটার পর্যন্ত উচু হয়। নিউ সাউথ ওয়েলসে ৬৩ বছর বয়স্ক এক ব্যক্তি তার বাড়িকে আগুন থেকে রক্ষা করতে গিয়ে হৃদরোগে মারা যায়। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ আরো ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করছেন। উইন্মালি নামের এক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি এবিসি নিউজকে জানান,, আমরা এখানে আগেও অনেক দাবানল দেখেছি কিন্তু এটা ছিল ব্যতিক্রমী। এর গতি ছিল অবিশ্বাস্য এবং এটি এই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং বাড়িঘর ধ্বংস করে আমাদের খোলা আকাশের নিচে ফেলে গেছে”।
লেক ম্যাকুয়েবির মেয়র জোড়ি হ্যারিসন জানিয়েছেন,, উক্ত এলাকায় চারটি হ্যরিটেজ হোম এবং একটি ঐতিহাসিক জেটি ছিল যেগুলো দাবানলে আক্রান্ত হয়েছে। নিউ সাউথ ওয়েলস ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা এলেক্স চেজার বিবিসিকে জানান এই দাবানলটি স্বাভাবিক সময়ের আগেই শুরু হয়েছে। তিনি বলেন,,এই এলাকায় যে শুকনো ঝোপগুলো আছে সেগুলো কয়েক বছরের আদ্র গ্রীষ্ম ও শীতের সমন্বয়ে অব্যাহত উচ্চ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এই দুর্যোগকে ত্বরান্বিত করেছে। বৃহস্পতিবার সিডনির আকাশ বনভুমি থেকে আসা ধোঁয়া ও ছাইয়ে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল।
অষ্ট্রেলিয়ার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সবছেয়ে ভয়াবহ দাবানল সংঘটিত হয়েছে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভিক্টোরিয়ার দক্ষিন প্রদেশে যেখানে সহস্রাধিক বাড়ি ঘর ধ্বংস হয়েছিল এবং১৭৩ জন মানুষের প্রানহানী ঘটেছিল। অষ্ট্রেলীয়ার রুরাল ফায়ার সার্ভিস কমিশনার শেন ফিজিমোন শনিবার সতর্ক করেছেন যে, নিউ সাউথ ওয়েলসের দক্ষিন পুর্ব প্রদেশের দাবানল নিয়ন্ত্রনে কয়েক দিনের পরিবর্তে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। কর্মীরা অষ্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে জনবহুল এলাকায়দাবানল রোধে প্রানান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শনিবারের ঠান্ডা আবহাওয়া যদিও একটু আশার আলো জাগিয়েছিল, রবিবারের উচ্চ তাপমাত্রা এবং বাতাস তা আবার তীব্র করে তুলেছে। জলবায়ুর এ আকস্মিক পরিবর্তন পৃথিবীর যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষের জন্য এক বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যার ফলে প্রকৃতির কাছে মানুষ অসহায় হয়ে পরে যা অষ্ট্রেলিয়ায় এখন দৃশ্যমান।
সূত্রঃ স্কাই নিউজ, বিবিসি, এবিসি নিউজ