সাপের নাম কেউটে

আজিজুর রহমান

কেউটে সাপের আঞ্চলিক নাম কাল কেউটে, পদ্মা কেউটে, আল কেউটে ইত্যাদি। পূর্ব সুন্দরবনে এই সাপের নাম কালিজিরে। ইংরেজি নাম Monocellate Cobra, Bengal Cobra।  বৈজ্ঞানিক নাম Naja naja Keauthia কেউথিয়া বাংলা কেউটে নাম থেকে নেয়া। কেউটে সাপ লম্বায় সর্বোচ্চ ২.২৫০ মিমি হতে পারে। তবে গড় মাপ ১৩৭০ থেকে ১৬২৫ মিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ সাপের ফণার পেছন দিকে ইংরেজি ঙ বর্ণের মতো হালকা গোলাপি সাদাটে দাগ দেখা যায়। পেছনে ফণার শেষ দিক একটা বা দুটো সাদা দাগ দেখা যায়। বাদাম থেকে প্রায় ঘন কালো এ সাপের দেহের রং। বাংলাদেশের  গোটা দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল বিশেষ করে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় কেউটের উৎপাত বেশি। এরা সাধারণত স্যাঁতসেতে ছায়াছন্ন স্থান, বিলাঞ্চল ও জলাভূমি এলাকায় বিচরণ করতে পছন্দ করে। সুন্দরবনে সাধারণত বর্ষাকালে এ সাপের কামড়ে মানুষ বেশি মারা পড়ে। কেউটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বদমেজাজি সাপ। আক্রান্ত না হলেও কামড়াতে তেড়ে আসতে পারে। এরা অন্য সাপের মতোই নিশাচর। এরা পানিতেও কামড়াতে পারে। অবশ্য সুন্দরবনের কেউটে সাপ শান্ত স্বভাবের। অকারণে তেড়ে আসে না। এদের প্রধান খাদ্য ইঁদুর ও ব্যাঙ। এছাড়া পাখির ছানা, টিকটিকি, ছোট সাপ হাঁস-মুরগি-পাখির ডিম এবং মাছও খায়।
CORBIS1-00129510-001বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা পড়ে কেউটে সাপের কামড়ে। এদের বিষ দেখতে জলপাই রঙের এবং তেলের মতো। বিষের চরিত্র নিওরোটক্সিন এবং রক্ত ও কোষ ধ্বংসকারী। নিওরোটক্সিন মানুষের শ্বাস নেয়ার ক্ষমতা লোপ করে দেয়। রক্তের জমাট বাঁধার ক্ষমতা ও লোহিতকণিকা ধ্বংস করে দেয়। কামড়ের জায়গায় আগুনের ছ্যাকা লাগার মতো জ্বালা শুরু হয়। লাল হয়ে ফুলে ওঠে, কামড়ের ছিদ্র দিয়ে রক্তরস বেরিয়ে আসে। ক্রমশ পা অবশ, ঘাড় ঝুলে পড়া, ঠোঁট, জিব, গলার পেশি অবশ হতে থাকে। নিচের ঠোঁট ঝুলে পড়ে লালা ঝরতে শুরু করে। বমি হয় কখনো কখনো দেহের নরম অংশ থেকে রক্ত বের হতে পারে। সাপে কামড়ানোর ৮৬ শতাংশ মানুষ ওঝার কাছে যান চিকিৎসার জন্য। মাত্র ৩ শতাংশ মানুষ যান দক্ষ চিকিৎসকের কাছে। বরিশাল বিভাগে সাপের প্রকোপ বেশি এবং সিলেটে সবচেয়ে কম। সাপের কামড়কে গবেষকরা বাংলাদেশের প্রাচীন ও অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। সব জীবনই প্রকৃতির নিয়মাধীন এবং নিজস্ব গতিধারায় বহমান। পরিবেশের সুনিপুণ ভারসাম্য রক্ষা ও জটিল খাদ্য চক্রের সক্রিয় উপাদান হিসেবে অন্য যে কোনো প্রাণীর মতো প্রকৃতিতে সাপেরও একটি তাৎপর্য ভূমিকা রয়েছে। সুতরাং নির্বিচারে সাপ মারা সমীচীন নয়।

সূত্রঃ দৈনিক মানব কণ্ঠ ২৫/০৭/২০১৩

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics