সিংহ দম্পতি

ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে চিতাটি। মুখটা একটু হাঁ করা, দেখা যাচ্ছে ভয়ংকর দাঁতগুলো। এগিয়ে আসছেন লম্বা, একহারা মানুষটিও। তাঁর মুখে হাসি। একটুও যেন ভয় নেই। তাঁর নাম অ্যাডালবার্তো মানচিনি। হাতে পানির পাত্র। এক পা, দু পা করে এগিয়ে চিতাটির পায়ের কাছে রাখলেন পাত্রটি। মুখ ডুবিয়ে চোঁ চোঁ করে অনেকটুকু পানি খেয়ে নিল পশুটি। পরম মমতায় পাশে বসে দৃশ্যটি দেখলেন মানচিনি।manchini
ভয়ংকর এই পশুগুলোই তাঁর সব। চিতাটাও বোধ হয় বুঝল সে কথা। আলতো করে মুখটা ঘষে দিল মানচিনির গালে। আনমনে একটু হেসে স্ত্রী লরা বংগিয়োরনির দিকে তাকালেন। লরার চারপাশে খেলছে চারটি পূর্ণবয়স্ক সিংহ। যেন মায়ের পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে চারটি শিশু। পশুগুলো একেবারেই বন্য। তার পরও হিংস্র এই বাঘ-সিংহের সঙ্গেই কেমন যেন আত্মার সম্পর্ক হয়ে গেছে এই দম্পতির। স্বামীর বয়স ৫১, স্ত্রী ৫০ বছরের। দুজনের বাড়িই ইতালি। তবে বহুদিন ধরে থাকেন জাম্বিয়ায়। ঠিকানা ‘দ্য মুকিনি বিগ ফাইভ সেন্টার’ এটা একটা অভয়াশ্রম। তাঁরা দুজন চেষ্টা করছেন সংকর প্রজাতি উৎপাদনে। সারা দিন তাই কেটে যায় ভয়ংকর প্রাণীর সাহচর্যে। এসব প্রাণীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আছেন বলে ওদের স্বভাবটাও বেশ ভালোভাবেই জানা। বাঘ-সিংহের সঙ্গে মেলামেশায় নিজস্ব কিছু নিয়ম মেনে চলেন_সঠিক ব্যবহার করতে পারলে অনেকটা স্বাভাবিক আচরণ করে ভয়ংকর এসব প্রাণীও।’ পাশ থেকে লরা বলে উঠলেন, ‘ওদের সঙ্গে কথা বলতে হবে চোখে চোখ রেখে। ধীরলয়ে; কিন্তু একটু আওয়াজ করে। যাতে কণ্ঠস্বরটা চিনে নিতে পারে। তবে সাবধান থাকতে হয় সব সময়। কখনোই জোরে হাঁটা যাবে না। এতে ওদের ভেতর অতিরিক্ত উত্তেজনা তৈরি হতে পারে।’ সূর্য ডুবলেই বাঘ-সিংহকে বিশাল সাফারি পার্কে ছেড়ে দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে ফিরে আসেন বাড়ি। মানচিনি দম্পতি অপেক্ষা করেন পরদিন সকালের।

সূত্রঃ দৈনিক কালেরকণ্ঠ ২৯,০৩,২০১৩

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics