সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি
আজিজুর রহমান
বাংলাদেশের সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার কেমন আছে তা জানতে প্রয়োজন বাঘের সঠিক সংখ্যা জানা। কারণ বাঘঅধ্যুষিত এক বনাঞ্চলের আয়তন অনুযায়ী বাঘের সংখ্যা দিয়ে নিরূপণ করা হয় প্রাণীটির অস্তিত্বের সংকট সম্ভাবনার সার্বিক অবস্থা। কিন্তু ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা নিয়ে যে বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশিত হচ্ছে তাতে বাঘের প্রকৃত অবস্থা জানা প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং সুন্দরবন বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৫ সালে একজন ইউরোপীয় বাঘ বিশেষজ্ঞ মি. হেন্ডরিস সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী শুমারি করেন। ওই শুমারির রিপোর্ট অনুযায়ী তখন সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ছিল ৩৫০টি। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রের তথ্যে জানা যায়, ১৯৯১ সালে একটি বিদেশি সংস্থা সুন্দরবনে জরিপ চালিয়ে বাঘের সংখ্যা ৪৫৯টি বলে তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করে। এরপর ১৯৯৩ সালে নেপালের বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. কেএম তামাং পরিচালিত শুমারিতে পাওয়া হিসেবে জানা যায়, সুন্দরবনে তখন বাঘের সংখ্যা ছিল ৩৬২টি। ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি মাসে ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ টিসা ম্যাকগ্রেগর জানান, বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশে ২০০টির বেশি বাঘ নেই। সর্বশেষ ২০০৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ৩ মার্চ ইউএনডিপির অর্থায়নে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাঘ শুমারি পরিচালিত হয়। পায়ের ছাপ গণনা পদ্ধতিতে চালালে ওই শুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে সুন্দরবন অংশে ২১টি বাচ্চা এবং পূর্ণবয়স্ক ৪১৯টিসহ সর্ব মোট ৪৪০টি বাঘ রয়েছে। তবে বিশিষ্ট প্রাণীবিদ মনিরুল এইচ খানের মতে, ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে করা নতুন বাঘ শুমারিতে বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা ২০০টি। ২০০৭ ও ২০০৯ সালে চালানো জরিপের রিপোর্টে দেখা যায় ২০০৪ সালে জরিপে পাওয়া সংখ্যাটি অপরিবর্তিত রয়েছে। উল্লেখ্য, বাঘের পায়ের ছাপ চিহ্নিত করা, বনভিত্তিক জীবিকা নির্বাহকারী লোকজন, বনকর্মী ও আশপাশের বসতির মানুষের দেয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করে ভয়ঙ্কর এই প্রাণীর নির্ভুল পরিসংখ্যান করা সত্যি খুব দুরূহ বিষয়। আরো দুরূহ বিষয় হচ্ছে এ যাবত সুন্দরবনের কতগুলো রয়েল বেঙ্গল টাইগারের স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে সেই সঠিক সংখ্যাটি খুঁজে পাওয়া। তবে এ বিষয়ে সুন্দরবন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৮০ সাল থেকে ২০১১ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত সুন্দরবনে বিভিন্ন কারণে ৬৫টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন সরকারি হিসাবের বাইরে নিহত বাঘের সংখ্যা অনেক বেশি, যা কোনোদিনই জানা যাবে না। কারণ সুন্দরবনে বহুকাল ধরে তৎপর সংঘবদ্ধ বাঘ চোরা শিকারিদের সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রভাবশালী একটি চক্র। এদের সঙ্গে রয়েছে আবার আন্তর্জাতিক চোরাকারকারীদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। তাছাড়া সুন্দরবন থেকে নৌ ও সমুদ্রপথ চোরাচালানের জন্য নিরাপদ ও সহজতর রুট হওয়ায় এ ব্যবসা এখানে বেশ জমজমাট। সুন্দরবনের বিভিন্ন উন্নয়নসহ এর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সঙ্গে যৌথভাবে যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করে সেই পরিকল্পনা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সুন্দরবনে প্রতি বছর গড়ে ৪০টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার মারা পড়ছে। এসব তথ্য ও পরিসংখ্যান থেকে ধারণা করা যায়, সুন্দরবনে বাঘের সঠিক সংখ্যা পাওয়া খুবই কঠিন।
সূত্রঃ দৈনিক মানবকণ্ঠ ১৩/০৮/২০১৩