"সুন্দরী আম" বিষ কিনে খাচ্ছি নাতো !!!
আনিকা তাহসিন তূর্ণা
বৈশাখ চলছে, বাজারে রয়েছে প্রচুর দেশি জাতের কাঁচা আম। এই গরমে, রাস্তার পাশে, স্কুল ক্যাম্পাসে, কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুরা মিলে দেশি আমের ভর্তা খাবার স্বাদই আলাদা। তবে, কাঁচা আমের পাশাপাশি দোকানে দোকানে মিলছে পাকা আমের দেখা!! সাধারণত, আমাদের দেশি আমের জাতগুলো এ সময় টায় এতো ব্যাপকহারে পেকে যায় না। তাহলে, দোকানের বা ফল বিক্রেতার ঝুড়ি ভর্তি এই টসটসে পাকা আমের উৎস কি??
ভারতীয় সুন্দরী দিনাজপুরে । সুন্দরী নামের কোন মেয়েমানুষ নয়,বা সুন্দরী গাছও নয়, এই সুন্দরী ভারতের মাদ্রাজে উৎপাদিত সুন্দরী আম। এই আম দেখতে সুন্দর তার নামও সুন্দরী। কিন্তু গুণটি তার ভয়াবহ! স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ এই আম দিনাজপুর হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে । সুঘ্রাণ আর বৈচিত্র্যময় রঙের গোলাপখাস নামের এই আম ‘ভয়ংকর সুন্দরী’ হিসেবে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আর্লি ভ্যারাইটি বা আগাম জাতের এ আম ভারতের মাদ্রাজ থেকে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে আসছে আমাদের দেশে । বেনাপোল, শার্শা উপজেলার সর্বত্র, যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সব ফলের দোকানে বিক্রি হচ্ছে রঙিন এ আম। দিনাজপুর জেলা লিচুর জন্য বিখ্যাত হলেও আমে চাপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর পর দিনাজপুরের খ্যাতি রয়েছে দেশ জুড়ে । দেশীয় আম পাকতে এখনও অনেক দেরী রয়েছে। সাধারণ ফল ব্যবসায়ীদের মতে, মৌসুম শুরুর আগ থেকে রাজশাহীর আম আসার আগ পর্যন্ত যশোরসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে আসা ভারতীয় আমে বাজার সয়লাব হয়ে যায় । এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দিনাজপুরের ষ্টেশন রোড, টিএনটি রোড এবং বাহাদুর বাজারের ফল দোকান থেকে শুরু করে ১৩টি উপজেলার ফল দোকানেও ফরমালিন মেশানো সুন্দর চেহারার আম জায়গা দখল করে নিয়েছে।
হলুদের আভা এবং বোটার দিকে টকটকে লাল এই আম দেখলে মনে হবে হলুদ আলতারমিশ্রণ। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দোকানদাররা আকর্ষণীয় করে সাজিয়ে রাখে। রাসায়নিক প্রয়োগে কৃত্রিম উপায়ে ফলগুলো পাকানো হয়। রঙিন এ সুন্দরী আম পাকানো ও দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য ফরমালিন স্প্রে করা হয়। এ ছাড়া আর্লি ভ্যারাইটি এ আম পাকানোর জন্য কারবাইডও দেওয়া হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ফল ব্যবসায়ী সিরাজ অভিযোগ করে বলেন, ওপারের ব্যবসায়ীরা ‘রাইফেলস’ এবং ‘কেন্ট’ জাতীয় ওষুধ স্প্রে করে ফলের রং উজ্জল ও পাকানোরব্যবস্থা করেন। এ আম খেলে কিডনি, পাকস্থলী, যকৃত, পিত্তথলির ক্ষতি হতে পারে। রাসায়নিক পদার্থ মেশানো এ আমে মাছি বসছে না। পচছেও না। এ আম জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
ফল বিক্রেতারা জানায়, এ জেলার আম পাকার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন সীমান্ত পথ দিয়ে ভারতের সুন্দরী আম এসে এদেশে ফল বিক্রেতাদের মাঝে বড় ধরনের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে প্রতিরোধের কোন কার্যকরী ভূমিকা নেই। সবার আগে বাজারে এসেছে সুন্দরী আম। এ কারণে চাহিদা ও বেশি। দাম ও চড়া।প্রতি কেজি আম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে। লোকজনও কিনছে হুমড়িখেয়ে। দেখতে সুন্দর আমটি দেখে বিষাক্ত ফরমালিন মেশানোর কথা আমলে না নিয়ে নির্দ্বিধায় কিনে খাচ্ছে মানুষ। আমের নামে যে বিষ কিনে খাওয়া হচ্ছে, তা ভেবেই দেখছে না কেউ।