সুস্থ্য থাকতে চাই; প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর খাবার
হারুন- অর- রশিদ
বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য প্রয়োজন৷ আর সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন সুষম খাদ্য৷ সুষম খাদ্যের একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান আমিষ৷ আমিষ শরীর গঠন ও ক্ষয়পূরণ করে৷ আমিষের প্রধান উৎস – মাংস, মাছ, দুধ, ডিম, ডাল প্রভৃতি৷ সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমিষ খেতে হয়৷ কিন্তু সেই আমিষ যদি অসুস্থ্যতা এমনকি মৃত্যুর কারণ হয়? কি অবাক হয়েছেন? আচ্ছা ধরুন আপনি ওষুধ খেতে গিয়ে কীটনাশক খেলেন, কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ বা ভুল ওষুধ খেলেন৷ সেক্ষেত্রে যা হবে তার জন্য দায়ী কে, আপনি না ওষুধ? ঠিক তেমনি আপনি যদি আমিষ গ্রহন করার সময় সাথে বিষ গ্রহন করেন তাহলে তো ঐ আমিষকে দোষ দিতে পারবেননা৷ আমরা সবাই ভাইরাস এর নাম শুনেছি৷ সাধারন ভাষায় এর অর্থ বিষ৷ ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া সহ নানা রকম জীবানুর আক্রমনে মানুষ, অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদের রোগ হয়ে থাকে৷ রোগাক্রান্ত প্রাণীর মাংস বা দুধ, ডিমে ঐ জীবানু গুলো থাকে যা খাদ্য হিসেবে গ্রহন করলে মানুষও আক্রান্ত হয়৷ কিছুদিন আগেও সবাই বিভিন্ন সংবাদ পত্র ও অনলাইন নিউজে দেখেছেন ৭ জন অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত৷ একটি অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গরু জবাই ও খাওয়ার কারনে তারা আক্রান্ত হয়েছে৷ শুধু তারা ৭জনই নয়, অনেকের হয়তো অল্প প্রকাশ হয়েছে, অনেকের হয়তো রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকায় প্রকাশ হয়নি৷ অনেক রোগ মানুষ থেকে প্রাণীতে এবং প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রামন হয়৷ এদেরকে বলা হয় জুনুটিক ডিজিজ (zoonosis) ৷ যেমন: জলাতঙ্ক(র্যাবিস), অ্যানথ্রাক্স, বার্ডফ্লু, সোয়াইনফ্লু সহ মারাত্মক সব রোগ যা মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে৷ “ রান্না করলে তো এসব জীবানু ধ্বংস হয়ে যায়৷ তাহলে সমস্যা কোথায়৷” হ্যা রান্না করলে অনেক জীবানু ধ্বংস হয়ে যায়, সব নয়৷ এমন অনেক জীবানু আছে যারা উচ্চতাপমাত্রায়ও বেঁচে থাকতে পারে৷ ভাইরাস কখনো তাপে মরেনা৷ আবার অনুকুল পরিবেশ সক্রিয় হতে পারে৷ তাছাড়া শুধু খাওয়া নয় হাত দিয়ে ধরা, কাটার ফলেও সংক্রামন হতে পারে৷ আমাদের দেশে অসুস্থ্য প্রাণী জবাই ও মাংস ভক্ষণ একটি সাধারণ ঘটনা৷ অহরহ অসুস্থ্য প্রাণী জবাই হচ্ছে৷ এর জন্য দায়ী- -জবাই খানায় পরিদর্শক না থাকা, প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকা৷ -সব প্রাণী জবাই খানায় জবাই না হওয়া৷ -যত্রতত্র পশুজবাই, -পশুজবাইয়ের সাথে জড়িতদের অজ্ঞতা, -সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা, -অর্থনৈতিক দুর্বলতা, -মোনাফা লোভী কসাই৷ এসব কারণগুলোর মধ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ নিয়মিত মাংস পরিদর্শন না করা৷ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ মুনাফা লোভী কসাই৷ তারা অল্পদামে অসুস্থ্য পশু কিনে জবাই করে বেশি লাভ করতে চায়৷ অনেক সময় সুস্থ্য পশু থাকা সত্ত্বেও অল্পদামে অসুস্থ্য পশু কেনা তাদের প্রধান লক্ষ্য৷ অবশ্য অসুস্থ্য পশুজবাইয়ে নিষেধাজ্ঞা ও জরিমানার বিধান থাকলে তারা অসুস্থ্য পশুজবাই করতে পারতো না৷
করণীয়:
প্রতি ইউনিয়নে মাংস পরিদর্শক হিসেবে ভেটেরিনারিয়ান নিয়োগ, -জনগনের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি, -কসাইদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, -প্রাণী চিকিৎসার উন্নতি করা, পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি সম্বলিত প্রাণি হাসপাতাল করা ও ভেটেরিনারিয়ান নিয়োগ৷ সবশেষে বলতে চাই, আমাদের মনমানসিকতার উন্নতি করা দরকার৷ আমাদের নিজেদের স্বার্থেই অসুস্থ্য প্রাণীর চিকিৎসা (অসুস্থ্য হলেই জবাই নয়!) করা উচিত৷ আর এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ও প্রকৃত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করা উচিত৷ কারণ, অসুস্থ্য প্রাণী সুস্থ্য হলেও ওষুধের প্রভাব থেকে যায় যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে৷ আর তাই প্রাণী বলে অবহেলা নয়, সঠিক ও কার্যকরী চিকিৎসা দরকার৷ আমাদের প্রাণি সম্পদ ভালো থাকুক, আমরাও ভালো থাকবো৷ সুস্থ্য সুন্দর জীবন সবারই কাম্য৷
লেখকঃ অর্গানাইজিং সেক্রেটারী(ডোমেস্টিক ও পেট), প্রাধিকার৷