সূর্যপৃষ্ঠে বিরল সুনামি
সৌরমুকুটের (করোনা) ব্যাপক বিচ্ছুরণের মাধ্যমে মহাশূন্যে পদার্থ ছিটকে পড়ার পর সূর্যপৃষ্ঠে একটি প্রবল সুনামি ছড়িয়ে পড়েছে। সৌর সুনামির এই দৃশ্য দুটি কৃত্রিম উপগ্রহে ধরা পড়ে। সৌরমুকুটের ব্যাপক বিচ্ছুরণকে ‘করোনাল মাস ইজেকশন’ বা সিএমই বলা হয়। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
প্রবল চুম্বকক্ষেত্র এবং উত্তপ্ত, আয়নিত গ্যাসের এই সুনামি প্রতি সেকেন্ডে ৪০০ কিলোমিটার বেগে পুরো সূর্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। সূর্যপৃষ্ঠে ঘটা বিরল এ ঘটনাকে পর্যবেক্ষণ করার সময় সিএমই থেকে দূরে ‘শান্ত’ এলাকায় চুম্বকক্ষেত্রটির পরিমাপ করার সুযোগ পাওয়া যেতে পারে। এই চুম্বকক্ষেত্রটির পরিমাপ করা গেলে তা থেকে সিএমই কিভাবে পৃথিবীকে প্রভাবিত করে তার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ডেভিড লঙ ও তার সহকর্মীরা সিএমইর পর ইআইটি ঢেউ নামে যে তরঙ্গ তৈরি হয় তা চূড়ান্তভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছেন। একটি ভূমিকম্পের উৎস থেকে সুনামি যেভাবে ছড়িয়ে পড়ে, ইআইটি ঢেউ সিএমইর পর তেমনই হঠাৎ তৈরি হওয়া চুম্বকক্ষেত্র এবং উত্তপ্ত, আয়নিত প্লাজমার ঢেউ, যা সূর্যপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে ড. লঙ বলেন, ‘ইআইটি ঢেউ বিক্ষিপ্তভাবে তৈরি হয়, যা কিছুটা বিরলও বটে। অনেকদিন পর এ ধরনের একটি প্রাকৃতিক ঘটনা পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেয়েছি আমরা, এটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় থাকতে হবে আমাদের।’ পর্যবেক্ষণ লব্ধ ফলাফল সোলার ফিজিক্স (সৌর পদারর্থবিজ্ঞান) সাময়িকীতে প্রকাশ করা হবে।
এসডিও উপগ্রহ ইআইটি ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার সময় নিঃসরিত হওয়া অতিবেগুনি রশ্মি ধরতে পারে। এর মাধ্যমে গবেষক দলটি ঢেউয়ের গতিবেগ ও তাপমাত্রার একটি আপাত পরিমাপ নির্ধারণ করতে পেরেছেন। ঢেউয়ের গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ৪০০ কিলোমিটার ও এর তাপমাত্রা ১০ লাখ ডিগ্রিরও বেশি। যে দুটি কৃত্রিম উপগ্রহ এই ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করছে তাদের একটির নাম হিনোদি, এটি একটি জাপানি কৃত্রিম উপগ্রহ। এই উপগ্রহটির পর্যবেক্ষণলব্ধ তথ্যের মাধ্যমে গবেষকরা হয়তো ৭০ বছরের পুরনো একটি রহস্যের সমাধান করে ফেলতে পারবেন। এই রহস্যটি হচ্ছে সূর্যের চতুর্দিকে বিরাজমান সৌরমুকুটটি (করোনা) কেন সূর্যপৃষ্ঠ থেকে বেশি উত্তপ্ত।
সূত্রঃ দৈনিক মানব কণ্ঠ ১৪/০৭/২০১৩