সৌন্দর্যে-খাদ্যে অনন্য অর্কিড

মো. শাহীদুজ্জামান

বর্ণে ও বৈচিত্র্যে বিশ্বব্যাপী আকর্ষণীয় উদ্ভিদের নাম অর্কিড। এই অর্কিড উদ্ভিদজগতের তিনটি বড় পরিবারের একটির সদস্য। প্রাচীন চীনা গ্রন্থে তিন হাজার বছর আগে প্রথম অর্কিডকে ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। খাদ্য, খাদ্যসহায়ক, ওষুধ, ঔষধি উপাদান, পানীয় উপাদান, পানীয় সহায়ক, অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জাসহ বিশ্বে অর্কিডের রয়েছে বহুবিধ অভিজাত ব্যবহার। 2013-05-26-20-13-47-51a26cfbf1d9b-untitled-18
উদ্ভিদবিজ্ঞানের জনক থিওফ্রাস্টাস এ উদ্ভিদের নামকরণ করেন। অধিকাংশ অর্কিড বহুবর্ষজীবী বিরুৎজাতীয় উদ্ভিদ। অঙ্গজ গঠনে ব্যাপক ভিন্নতা থাকলেও ফুলের গঠনের সামঞ্জস্য এসব উদ্ভিদকে একই পরিবারভুক্ত করেছে। মূলে ভ্যালামেন টিস্যু থাকে। এ টিস্যুর সাহায্যে বাতাস থেকে এ উদ্ভিদ পানি শোষণ করে বেঁচে থাকে। ফুলের ওপরাংশ নিচের দিকে হয়ে থাকে। সাধারণত ফুলে তিনটি বৃতি ও তিনটি পাপড়ি থাকে, এর অধিকও থাকতে পারে। একটি পাপড়ি বড় ও বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, আফ্রিকানরা প্রায় ৭৭ প্রজাতির অর্কিড খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। ভ্যানিলা বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত অর্কিড। কিউবায় ভ্যানিলার সুঘ্রাণ তামাকজাত খাদ্য উপাদানকে আকর্ষণীয় করতে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া অনেক অর্কিড মাথাব্যথা দূর করতে, বিষাক্ত পোকার দংশনে উপশম হিসেবে এবং পেটের পীড়ার ওষুধ হিসেবে সমাদৃত হয়ে আসছে বহুকাল ধরে।
সম্প্রতি কিছু গবেষণা প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, ভ্যানিলার ফ্লেভার কেমোথেরাপি দেওয়া রোগীদের খাদ্য গ্রহণ বৃদ্ধি করে এবং অবসাদ দূর করে বমি বমি ভাব থেকে মুক্ত করে। ভ্যানিলা অর্কিডের অনেক ফুলই সরাসরি খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়। আমেরিকায় হাইব্রিড ডেনড্রোবিয়াম অর্কিডের ফুল খাদ্যে সাজসজ্জার জন্য ব্যবহূত হয়। এশিয়ার অনেক দেশে হালকা পানীয় ক্যানে এ ফুল চিত্রাকর্ষক হিসেবে ব্যবহূত হয়ে থাকে। সুগার কোটেড করে অর্কিড দিয়ে বিভিন্ন স্বাদের মূল্যবান ক্যান্ডি তৈরি হচ্ছে। কোনো অর্কিডই বিষাক্ত নয়। তাই খাদ্য পরিবেশনায় রকমারীকরণে, সহায়ক স্বাদের সংযোজনে অর্কিড দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। পানীয় জগতে অর্কিডের ব্যবহার ব্যাপক। মধ্যপ্রাচ্যে স্থলজ অর্কিডের টিউবার থেকে ‘সাহলেপ’ নামক আইসক্রিম ও পানীয় প্রস্তুত করা হয়। ১৫৬৮ সালে উইলিয়াম টারনার নামে বিখ্যাত হার্বালিস্ট অর্কিডের চারটি ঔষধি গুণাগুণ প্রচার করেন। এগুলো হলো অ্যান্টি-পাইরেটিক, অ্যান্টি-কনজ্যামশন, অ্যান্টি-ডায়ারিয়া ও অ্যান্টি-অ্যালকোহলিক গ্যাসট্রাইটিস।
আমাদের দেশে অর্কিড খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত না হলেও বিচিত্র এ ফুল সাজসজ্জায় ব্যবহূত হয়। উন্নত জাতের অর্কিডের বীজ হয় না বলে অন্যভাবে এদের প্রজনন করা হয়। ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. ওবায়েদুল ইসলাম অর্কিডের প্রজনন, বিস্তার ও টিস্যু কালচারের ওপর গবেষণা করছেন। গবেষণায় সফলও হয়েছেন তিনি। গবেষণার জন্য তিনি বিভাগীয় টিস্যু কালচার গবেষণাগারে নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অর্কিডের প্রজনন করছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে অর্কিডের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। অর্কিড চাষাবাদের মাধ্যমে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিসহ বেকারদের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হবে। প্রতি একক আয়তনে উৎপন্ন লাভজনক উদ্ভিদের মধ্যে অর্কিডই প্রথম স্থান অধিকারী।’

সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো (২৭/০৫/২০১৩)

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-05-27/news/355396

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics