হোম ; যে তথ্যচিত্র পৃথিবীর…

মনিজা মনজুর

“Home” বা ‘ ঘর ’ বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে অপার শান্তির আশ্রয়স্থল। সৃষ্টির সমস্ত জীববৈচিত্র্যকে পরম মমতায় আগলে রেখেছে এই ঘর – ‘পৃথিবী’। পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখতেই প্রাণের আবির্ভাব, আর প্রাণের অস্তিত্ব রক্ষায় পৃথিবীর উপাদানে যোগ হয়েছে মাটি, পানি, খনিজ সহ নানা উপাদানের। যারা প্রত্যেকেই একে অন্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানবের অস্তিত্ব রক্ষার এইসব উপাদানের সঠিক ব্যবহার কি আমরা করছি? নিঃস্বার্থ ভাবে আগলে রাখা প্রিয় আবাস্থলকে তার যোগ্য সম্মান দিচ্ছি কি?
মানুষের প্রয়োজনে, মানুষকে জানানোর উদ্দেশ্যে অনেক বছর ধরেই এই বিষয়গুলো নিয়ে নির্মিত হয়েছে বিভিন্ন তথ্যচিত্র। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো হোম বা “Home” , ইয়ান আরথাস বারট্রান্ড পরিচালিত, ডেনিস ক্যারট এবং লুক ব্যাসন প্রযোজিত এই তথ্যচিত্রটি “বিশ্ব পরিবেশ দিবস” উপলক্ষ্যে মুক্তি পায় ২০০৯ সালের ৫ জুন। yann-arthus-bertrand-home-movie-poster

পরিচালক, ক্যামেরাম্যান,ক্যামেরাম্যান ইঞ্জিনিয়ার এবং পাইলট এই ৪ জন মিলে একটি ছোট্ট হেলিকপ্টারে করে প্রায় ৫০ টি ( ! ) দেশ ঘুরে দীর্ঘ ১৮ মাসের পরিশ্রমের ফলে নির্মান করেছেন এই তথ্যচিত্রটি !!!! ১২০ মিনিটের এই তথ্যচিত্রে কন্ঠ দিয়েছেন গ্লেন ক্লোস। বিশ্বের প্রায় ১৮১ টি দেশে এটি একযোগে মুক্তি পায়। ছবিটি ইউটিউব এ মুক্তির ২৪ ঘন্টার মধ্যে এর দর্শক সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০০,০০০ এরও বেশি। ছবিটির আইএমডিবি রেটিং ৮.৬ !
ধারাবর্ননা নির্ভর এই তথ্যচিত্রের শুরুতে দেখানো হয়েছে পৃথিবীর সৃষ্টি এবং প্রাণের আবির্ভাব। ধীরে ধীরে মৃত্তিকার উৎপত্তি, পানির উৎস, উদ্ভিদজগতের সাথে এদের সম্পর্ক, রয়েছে সমুদ্রের তলদেশ থেকে শুরু করে জীবন ধারণে প্রয়োজনীয় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবের কথা, আছে প্রাকৃতিক সম্পদের কথা । আদিকাল থেকে চলে আসা কৃষিব্যবস্থাকে এবং সভ্যতার বিবর্তনে কৃষিক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসা প্রযুক্তির কথাও তুলে ধরা হয়েছে ।aerial_photography_wilderness

এরিয়াল ফটোগ্রাফির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে ফুলে ফেঁপে ওঠা বিত্তশালী দেশগুলোর চিত্র। অপরদিকে রয়েছে, প্রকৃতির সাথে লড়াই করে টিকে থাকা মানুষ , ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, এর ফলে সৃষ্ট সমস্যা। আরো দেখানো হয়েছে আমাজন সহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জর্ডান নদী, মাউন্ট কিলিমানজারো, হিমালয় পর্বতের এর করুন অবস্থা।দেখানো হয়েছে কিভাবে আমরা নিজ হাতে ধ্বংস করে চলেছি আমাদের পৃথিবীকে !!!
বাদ নেই দাবানল, বন্যা, খরার মত প্রাকৃতিক দূর্যোগের চিত্র। সেই সাথে প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁচানোর আশার কথা। এই তথ্যচিত্র দেখার ছলে আপনি ঘুরে আসবেন সাগর, মহাসাগর, মরুভূমি আর চীর সবুজ বনাঞ্চল। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দক্ষিণ আফ্রিকা, আলাস্কা, সৌদি আরব, এন্টার্কটিকা, আর্জেন্টিনা, আর্কটিক,অস্ট্রেলিয়া, বতসোয়ানা , ব্রাজিল, ভারত, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া , ডমিনিকান রিপাবলিক, কাজাকাস্তান, দুবাই, মালদ্বীপ, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড ! ঘুরতে ঘুরতে পেয়ে যাবেন নিজেরই অতি প্রিয় শান্তির আবাস- বাংলাদেশ।

ডকুমেন্টারি থেকে
ডকুমেন্টারি থেকে

সবশেষে জলবায়ু পরিবর্তন এবং মনুষ্যসৃষ্ট কারণে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ অবস্থা নিয়ে কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে, তুলে ধরা হয়েছে সৃষ্ট সমস্যার ভয়াবহতাও, যা জানতে হলে দেখে নিতে হবে এই তথ্যচিত্রটি। প্রায় ৫ বছর আগে নির্মিত এই তথ্যচিত্রে যে ভবিষ্যৎ ভয়াবহতার কথা তুলে ধরা হয়েছে, তা আমাদের কাছে বর্তমান।কিন্তু আমরা আজও উপলব্ধি করতে পারি নি ধরনীর আর্তচিৎকার।তাই হয়তো আবারও তথ্যচিত্রটি দেখার কথা মনে করিয়ে দেয়া প্রয়োজন, সময় দ্রুত ফুরাচ্ছে,বড্ড দেরী হয়ে যাচ্ছে।
অসাধারণ চিত্রগ্রহণ, সম্পাদনা এবং শব্দের কারিগরির কারণে আশেপাশের সাধারণ সমস্যাগুলো আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন। আপনাকে ভাবতে বাধ্য করবে শক্তি ও ক্ষমতার জোরে টিকে থাকার লড়াইয়ে কিভাবে নিঃশেষ করে দিচ্ছি আমাদের আশ্রয়দাত্রী ধরনীকে।
তথ্যচিত্রের youtube লিংকঃ http://www.youtube.com/watch?v=jqxENMKaeCU

শিক্ষার্থী;মৃত্তিকা,পানি ও পরিবেশ বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics