সবুজের বুকে হলুদ চোখের কানিবক । ছবি : ইমরান হোসেন ইমু
নিরীহ পাখি কানিবক মূলত জলের পাখি । সাধারণত পুকুর, খাল-বিল, ঝিল ও নদীসহ সব ধরনের জলাভূমিতে কানিবক দেখা যায় । কানিবকের ইংরেজি নাম ‘ইন্ডিয়ান পন্ড হেরন’ এবং বৈজ্ঞানিক নাম ‘আরডিওলা গ্রায়ি’ (Ardeola grayii) । এরা কানাবক, কোঁ চবক, কানাবগি, দেশি কানিবক বা কানিবক নামেও পরিচিত।
মূলত ভারতীয় উপমহাদেশই দেশি কানিবকের প্রধান আবাস । বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও মায়ানমারে এদের সচরাচর দেখা যায়।দেশি কানিবক সাদা ডানা ও বাদামি পিঠের মাঝারি আকারের জলচর পাখি । এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৪৬ সেন্টিমিটার, ডানা ২১.৫ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ৬.৩ সেন্টিমিটার, পা ৬.২ সেন্টিমিটার ও লেজ ৭.৮ সেন্টিমিটার । ওজন গড়ে ২১৫ গ্রাম ।
এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে মাছ, জলজ পোকামাকড়, চিংড়ি, ব্যাঙ, ব্যাঙাচি, ফড়িং, কচ্ছপের ছোট বাচ্চা, কেঁচো, সাপের ছানা ইত্যাদি । ঘাসের বীজ খায় । প্রয়োজন অনুসারে শাক-সবজি ও ঘাস খায় ।
জানুয়ারি থেকে আগস্ট দেশি কানিবকের প্রধান প্রজনন ঋতু । প্রজনন ঋতুতে এরা ৩-৫ টি ডিম পাড়ে । ডিমের বর্ণ সমুদ্রের জলের মত নীল, তাতে ফিকে-সবুজ আভা থাকে । ডিমের মাপ ৩.৮ × ২.৯ সেন্টিমিটার । স্ত্রী-পুরুষ উভয়েই পালা করে ডিমে তা দেয় , ২৪ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয় ।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অসময়ে ঝড়-বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল, অতি খরা এবং অতি শীতে কারণে এসব দেশীয় পাখি বর্তমান পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। এছাড়া পাখিবান্ধব বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা কেটে ভিনদেশীয় পরিবেশবান্ধব নয় এমন গাছের বনায়ন বা বৃক্ষরোপণ করায় দেশীয় পাখিরা তাদের পুরনো চিরচেনা আবাসস্থল পাচ্ছে না বিধায়ও অন্যান্য পাখির সঙ্গে কানিবকও হারিয়ে যেতে বসেছে ।
ছবি ফিচারঃ ইমরান হোসেন ইমু, পাখিপ্রেমী এবং ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার