খাদ্য আইন বাস্তবায়ন ও বিনামূল্যে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসম্মত পাবলিক টয়লেট নিশ্চিত করতে ১৯ দফা দাবি

জাতীয় সংসদে গুরুত্বের সাথে পাবলিক টয়লেট বিষয়ে আলোচনা এবং খাদ্যে ফরমালিনের ব্যবহার বন্ধে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রেখে ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ বিল পাস করায় আমরা ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু বিশাল জনসংখ্যার বিপরীতে কেবল ৩০টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ সমস্যার সমাধান নয় বলে আমরা মনে করি। একইভাবে খাদ্যের ক্ষেত্রে ফরমালিন ছাড়াও উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ প্রতিটি পর্যায়ে বিভিন্ন ধরণের বিষ ও ভেজালের মিশ্রণ করা হচ্ছে। কেবলমাত্র ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইনের মাধ্যমে খাদ্যের বহুমুখী বিষাক্ততা ও ভেজাল ঠেকানো সম্ভব নয়। কিন্তু নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ এর বহুমাত্রিক গুরুত্ব রয়েছে। সুতরাং আমরা মনে করি অগ্রাধিকারভিত্তিতে নিরাপদ খাদ্য আইন বাস্তবায়ন করা দরকার ও পাবলিক টয়লেট সমস্যার সমাধানে যথেস্ট নয়। পাবলিক টয়লেট বিষয়ক সুষ্ঠু নীতিমালা এবং পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা যথাযথ বাস্তবায়ন এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ভিত্তিক একটি সমন্বয় কমিটি করা জরুরী। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, সকাল ১১টায় পবা কার্যালয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত প্রেস কনফারেন্স থেকে উক্ত অভিমত ব্যক্ত করা হয়।3

পবার বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্য আন্দোলনের সদস্য সচিব ডা: লেলিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রেস কনফারেন্সে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, ডাব্লিউবিবির ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার মারুফ হোসেন, প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান, পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা: মোজাহেরুল হক, পবার সম্পাদক এডভোকেট হাসান তারিক চৌধুরী, মনজুর হাসান দিলু, সহ-সম্পাদক মো: নজরুল ইসলাম, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত প্রমুখ।

জাতীয় জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইপিএইচ) এর অধীন ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরী তাদের গবেষণালব্দ  তথ্যে আমরা দেখতে পাই, দেশের মানুষ প্রতিদিন যে মাছ, মাংস, দুধ, ফল, চাল, ডাল, তেল, মসলা ও লবণ খাচ্ছে, তার শতকরা ৪০ থেকে ৫৪ ভাগেই ভেজাল রয়েছে। এসব  খাদ্যে বিভিন্ন কীটনাশক, যেমন- এন্ড্রিন, ডিডিটি, হেপ্টাক্লোর, মেথোক্সিক্লোর, ইথিয়ন; ভারী ধাতু সিসা, আর্সেনিক রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা  ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) এর ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা যায়, কৃিষখাতে  গত ১০ বছরে বিষাক্ত কীটনাশকের ব্যবহার ৬ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুততম জনবহুল শহর। চাকুরি, ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নানাবিধ প্রয়োজনে ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় এক কোটি মানুষ বাসা থেকে বের হয়। অথচ এই বিপুল সংখ্যক মানুষ পাবলিক টয়লেট ব্যবহারে ভীষণভাবে ভুগতে হয়। চাহিদার তুলনায় একদিকে যেমন অপ্রতুল রয়েছে তার তার চেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে অব্যবস্থাপনার কারণে।

প্রেস কনফারেন্স থেকে নিন্মোক্ত দাবি জানানো হয়-
১.    ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত বাস্তবায়ন করা।
২.    নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ যথাযথভাবে বাস্তবায়নে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।
৩.    ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন ও নিরাপদ খাদ্য আইনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা।
৪.    বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা।
৫.    জাতীয় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা।
৬.    কেন্দ্রীয় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটি গঠন করা।
৭.    খাদ্য আদালত গঠন করা।
৮.    সময়োপযোগী কীটনাশক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা ।
৯.    পণ্য আমদানি পর্যায়ে এনবিআর কর্তৃক বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যাদিসহ ফরমালিন পরীক্ষা করা।
১০.    রাসায়নিক দ্রব্যাদি, ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড পরীক্ষা করার জন্য আধুনিক গবেষণাগার স্থাপন ।
১১.    কোন রকম রাজনৈতিক বিবেচনা ছাড়াই আইন প্রয়োগে সরকারের প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
১২.    খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং পরিদর্শন ও এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম পরিচালনায় সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয়ের সাধন।
১৩.    বিনামূল্যে সকলের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসম্মত পাবলিক টয়লেট নিশ্চিত করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ভিত্তিক একটি সমন্বয় কমিটি করা।
১৪.    পাবলিক টয়লেট বিষয়ক সুষ্ঠু নীতিমালা এবং পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন।
১৫.    শিক্ষা কারিকুলামে টয়লেট ব্যবহারে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক শিক্ষা প্রদানের বিধান রাখা।
১৬.    বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনামূল্যে পাবলিক টয়লেট নিশ্চিতে স্থানীয় সরকার এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্য করা।
১৭.    পাবলিক টয়লেট না থাকলে বা মানসম্মত না হলে, সহজে অভিযোগ প্রদানের ব্যবস্থা ও প্রয়োজনে দোষীদের শাস্তি এবং জরিমানা নিশ্চিত করা।
১৮.    প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠ, পার্ক, সিনেমা হল, পাবলিক হল, গোরস্থান, অস্থায়ী বাজার, প্রধান সড়কের পাশে, সভাস্থল, ঐতিহ্যবাহী স্থান, লঞ্চ-রেল-বাস টার্মিনাল, হাসপাতাল ইত্যাদি স্থানে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
১৯.    চার্টারের মাধ্যমে কোথায় কোন টয়লেটে ব্যবহারের সুযোগ থাকবে তা সুনির্দিষ্ট করা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics