
ভালো নেই পশুরাজ সিংহ
পশুরাজ সিংহ। একটি অদ্ভুত এবং অসাধারন প্রাণী। পশুরাজ সিংহ সাভানার বনভুমিতে রাজত্ব করে চলেছে দীর্ঘকাল ধরে। তবে প্রাচীন ইতিহাস দেখলে আমরা দেখতে পাই, আফ্রিকা ছাড়াও আরো বেশ কিছু জায়গায় এদের বিচরন ছিল। দক্ষিণ ফ্রান্সের প্রাচীন পালিওলিথিক চিত্রকর্ম থেকে দেখা যায় যে, ৩০ হাজার বছর আগে এদের অস্তিত্ব ছিল ইউরোপে। বিখ্যাত লেখক ডেনিএল এর লেখা থেকে আমরা দেখতে পারি খ্রিস্টপূর্ব ৬ শতাব্দিতেও বেবিলনে এদের দেখা পাওয়া যেত। এমনি ১৯ শতকের গোঁড়ার দিকেও সিরিয়া, ইরান, ইরাক, তুরস্কতেও এদের দেখা মিলত বলে উল্লেখ আছে। তবে বর্তমানে কেবল আফ্রিকাতেই পশুরাজ সিংহ বহাল তবিয়তে বেঁচে আছে।
একসময়ে এশিয়ার মধ্যপ্রাচ্য থেকে ভারতীয় উপমহাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল সিংহের রাজত্ব। তবে বর্তমানে মাত্র ২০০ থেকে ২৬০ টি সিংহ আছে এশিয়াতে। পুরোপুরি বন্য অবস্থাতে নয়, বরং কঠিনভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে তাদের। বাঘের মতো সিংহ ও তাদের নিজস্ব এলাকায় অন্য সিংহকে খুব একটা পছন্দ করে না। মজার ব্যাপার হল সিংহ তাদের এলাকা নির্ধারণের জন্য তাদের মূত্র ব্যাবহার করে থাকে। এছাড়াও তাদের বিখ্যাত গর্জন দিয়েও সে নিজের উপস্থিতি প্রকাশ করে। সিংহের গর্জন প্রায় ২/৩ মাইল দূর থেকেও স্পষ্ট শোনা যায়। সিংহ নিশাচর শিকারি প্রাণী। তবে এমনও দেখা গেছে, এরা হায়েনা অথবা বন্য কুকুরের শিকারেও ভাগ বসায়। পুরুষ সিংহ সাধারনত একাই শিকার করে থাকে। অপরদিকে, মেয়ে সিংহ/ সিংহী দল বেঁধে শিকার করতে পছন্দ করে।
সিংহ যেমন শিকারি প্রাণী, তেমনি এদেরকেও অনেক সময় মানুষের দ্বারা আক্রান্ত হতে হয়। মানুষ তার নিজের সুরক্ষার জন্য সিংহ হত্যা করেছে এমন নজিরও কম নয়। একটি পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ সিংহ সাধারনত ১২ থেকে ১৪ বছর বাঁচে। অপরদিকে, একটি পূর্ণ বয়স্ক মেয়ে সিংহ সাধারনত ২০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। তবে আশঙ্কার কথা হল দিন দিন সিংহের সংখ্যা কমে আসছে। ইউরোপ থেকে তো সিংহ বিলুপ্তই হয়ে গেছে। বর্তমানে আফ্রিকাতেও তারা খুব একটা সুখে নেই। আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকায় সিংহের পদচারনা প্রায় ৮০ ভাগ পর্যন্ত কমে গেছে। বর্তমানে এদের প্রকৃত সংখ্যা কতো, সেটা বলা মুশকিল। কারন, সিংহকে ট্র্যাকিং করা একটি কঠিন কাজ। তবে গবেষকরা মনে করেন, এর সংখ্যা ৩৫,০০০ এর বেশি হবে না। গবেষকদের মতে পশুরাজ সিংহের সংখ্যা দিন দিন উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসছে। এর কিছু কারন সম্পর্কে গবেষকরা আলোকপাত করেছেন।
বেশ কিছু কারন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। তার মধ্যে প্রধান কারন হচ্ছে সিংহের আবাসস্থল আস্তে আস্তে কমে আসছে। মানুষের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, তাতে করে সিংহ খুব দ্রুত তাদের আবাসস্থল হারাচ্ছে। এ ছাড়াও চোরাকারবারিদের উৎপাত তো রয়েছেই। নানা রকম রোগে আক্রান্ত হয়েও আজকাল সিংহ মারা যাচ্ছে। তাছাড়া মাসাই উপজাতিরা তাদের ধর্মীয় উৎসবে সিংহ বলি দিয়ে থাকে। সিংহের সংখ্যা এতো দ্রুত হ্রাস রোধে গবেষকরা বেশ কিছু মতামত দিয়েছেন।
সিংহ প্রধানত আফ্রিকার পাঁচটি এলাকায় বেশি দেখা যায়। Serengeti (তাঞ্জানিয়া থেকে কেনিয়া), Selous (দক্ষিণ তাঞ্জানিয়া), Ruaha-Rungwa ( পশ্চিম তাঞ্জানিয়া), Okavango-Hwange (বোতসোয়ানা থেকে জিম্বাবুয়া), এবং Greater Limpopo (মোজাম্বিক, জিম্বাবুয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা) গবেষকদের মতে, এই পাঁচটি এলাকা যদি ভালভাবে সংরক্ষণ করা যায়, তাহলে হয়তবা সিংহের ‘সংখ্যা হ্রাস’ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। কারন, আফ্রিকার ৫০ ভাগেরও বেশি সিংহ এই অঞ্চল গুলোতে থাকে। সিংহ নিয়ে গবেষণায় বিখ্যাত ক্রেগ পেকার আরেকটি উপায়ের কথা বলেন। তিনি প্রস্তাব দেন সিংহকে বেষ্টনী দিয়ে আটকে রাখার। অনেক বড় এলাকা জুড়ে বেষ্টনী দিয়ে তার মধ্যে সিংহকে সংরক্ষণ করার। তবে আরেক দল গবেষক বলেন এই ধরনের বেষ্টনী খাদ্য শৃঙ্খলের জন্য বিরাট বাধা।
সর্বোপরি, সিংহ হল পশুরাজ। বনের রাজা সিংহ যদি বিলুপ্ত হয়ে যেতে থাকে, তাহলে বন বিধাতা হয়ত সেটা ভালো চোখে দেখবেন না। বনের সৌন্দর্যের জন্য, আফ্রিকার বিশাল খাদ্য শৃঙ্খলের জন্য সিংহের রক্ষণাবেক্ষণ করা খুবই জরুরি। ইন্টারনেট, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
মাহবুব রেজওয়ান (০২/০৮/২০১৩)
এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম ডেস্ক