কুমির? নাকি কুমির মাছ !!

মাহবুব রেজওয়ান

গত কয়েকদিন আগে আমরা আপনাদের সামনে হাজির হয়েছিলাম কুমির নিয়ে। কুমির নিয়ে বেশ কিছু তথ্য আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছিলাম আমরা। আজকে আমরা যে প্রাণীটি নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হতে যাচ্ছি সেটিকে যদি আপনি সামনে থেকে দেখেন, তবে কুমির বলেই ভুল করবেন। এটি আসলে একটি মাছ। মাছটির নাম অ্যালিগেটর গ্যার। সোজা বাংলায় যাকে বলে কুমির মাছ। এই মাছটির মুখের ভিতরে সারিবদ্ধভাবে সাজানো দাঁত রয়েছে। মুখের গঠন ও এই দাঁত, এই দুয়ে মিলে একে যেন প্রথমে কুমির বলেই ভুল হয়। এই কুমির সাদৃশ্যতার কারণেই মাছটির এমন নামকরন হয়েছে। তবে এর বাকি অংশ কিন্তু মাছের মতই। এর লেজের দিকে তাকালে মাছের লেজ বলেই মনে হবে। যেন অর্ধেক মাছ, অর্ধেক কুমির। ali fish

কুমির মাছের গায়ের রং অনেকটা বাদামি অথবা জলপাই এবং পেটের কাছে কিছুটা হালকা। এই মাছের আঁশগুলো হীরকাকৃতির। এই কারণে আমেরিকার আদিম অধিবাসীরা এই মাছের আঁশগুলোকে অলংকার হিসেবে ব্যাবহার করত।

অ্যালিগেটর গ্যারদের মূলত দেখতে পাওয়া যায় উত্তর আমেরিকায়। এরা স্বাদু পানির মাছ। আমেরিকার মিসিসিপি নদী এবং দক্ষিণ উপকূলীয় রাজ্যগুলোতে এদের বেশি দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, ওকলাহোমা, সাউথ ক্যারোলিনা, নর্থ ক্যারোলিনা, ভার্জিনিয়া, লুইজিয়ানা, কেনটাকি, মিসিসিপি, আলাবামা, টেনেসি, আরকানসাস, মিসৌরি, ফ্লোরিডা আর জর্জিয়ায়। এছাড়াও মেক্সিকোর কিছু এলাকাতেও এদের দেখতে পাওয়া যায়। উত্তর আমেরিকার কুমির মাছ সাধারনত বড়সড় নদীতে দেখতে পাওয়া যায়। এর কারণও আছে। এর কারণ মূলত এদের আকার। এরা আকারে সাধারনত ৮ থেকে ১০ ফুট লম্বা হয়ে থাকে এবং এদের ওজন কম করে হলেও প্রায় ২০০ পাউন্ড (৯১ কেজি) হয়ে থাকে। এ পর্যন্ত জালে ধরা পড়া সবচেয়ে বড় কুমির মাছটি ধরা হয়েছিল ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। মিসিসিপি নদীর ভিকসবার্গ থেকে ধরা কুমির মাছটি লম্বায় ছিল আট ফুট পাঁচ ইঞ্চি। আর ওজন ছিল ১৪৮ কেজি। চওড়ায় ছিল চার ফুট। ওই কুমির মাছের বয়স ৫০ থেকে ৭০ বছর বলে ধারণা করেছিলেন প্রাণিবিদরা। মাছটি যিনি ধরেছিলেন, তার নাম কেনি উইলিমাস। কুমির মাছটি যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাকসনের মিসিসিপি মিউজিয়াম অব ন্যাশনাল সায়েন্সে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ali fish 2

ভাবা হয়েছিল, কুমির মাছ কেবল উত্তর আমেরিকাতেই আছে। কিন্তু ২০০৭ সালে ফেব্রুয়ারিতে একেবারে উল্টো গোলার্ধে খোঁজ মিলল এই কুমির মাছের। তাও আর কোথাও নয়- ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায়। তবে জাকার্তার মাছটি ছিল বেশ ছোট আকারের। লম্বায় পাঁচ ফুটও ছিল না। এরপর ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে ৩ কেজি ওজনের আরেকটি কুমির মাছের দেখা মিলল মালয়েশিয়ার পেহাঙের বেরায়। জেলেদের জালে নিজে নিজেই ধরা দেয় মাছটি। এরপর একে একে তুর্কমেনিস্তান, হংকং, সিঙ্গাপুর ও জাপানেও দেখা মিলেছে কুমির মাছের। তবে আকারের দিক থেকে উত্তর আমেরিকার কুমির মাছই দানবাকৃতির।

কুমির মাছ যে শুধু দেখতেই কুমিরের মতো, তা নয়। কুমিরের স্বভাবের সাথেও এদের মিল আছে। কুমিরের মতো এরাও দীর্ঘ সময় পানি ছাড়া থাকতে পারে। প্রায় দুই ঘণ্টা এরা পানি ছাড়া দিব্যি কাটিয়ে দিতে পারে। খাবারের দিক থেকেও এরা কুমিরের মতো অর্থাৎ মাংসাশী। উত্তর আমেরিকার কুমির মাছের আবার কিছু বদনামও আছে। এরা নাকি মানুষকেও আক্রমন করে। তবে এই কথার কোন নিশ্চিত প্রমান পাওয়া যায়নি।কুমির মাছের ডিম কিন্তু বেশ বিষাক্ত। ডিম যতই বিষাক্ত হোক, কুমির মাছ কিন্তু বিষাক্ত নয়। কুমির মাছ খাওয়া যায়। দুনিয়ার যেসব দেশে পাওয়া যায়, সেসব দেশের মানুষই খায় কুমির মাছ। খেতেও নাকি বেশ সুস্বাদু।

আমাদের জানার বাইরে হয়তো এমন অনেক হাজারও প্রাণী বৈচিত্র্য ছড়িয়ে আছে। তার খুব কমই আমরা জানি। এমন হাজার বৈচিত্র্যের প্রাণী সম্ভার আমাদের অবাক করে দেয়। আমাদের সুন্দর পৃথিবীকে সুন্দর রাখার জন্য হলেও প্রাণী বৈচিত্র্যের বিচিত্র সম্ভার সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে।

এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম ডেস্ক

০৬/০৯/২০১৩

 

 

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics