অ্যাংগোরা পশমী কাপড় ও প্রাণীর প্রতি নির্মমতা

মোঃ সাইফুল ইসলাম

চলছে শীতকাল। শীতে মানুষের কষ্টের শেষ নেই। আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে শীত যে কি পরিমাণ হাড় কাঁপুনি ধরায় তা সবারই জানা আছে। দেশের সবচেয়ে বেশি শীতের প্রকোপ দেখা যায় উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে। শীত নিবারণের জন্য আমরা নানা পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকি। আগুন জ্বালিয়ে, গরম পোশাক পরিধান করে কাটিয়ে দেই। আবার বাহারী রংয়ের পোশাকও শোভা পায় অনেকের শরীরে। যদি দামে মিলে যায় পশমী পোশাক কিনবেন না এমন লোক পাওয়া সত্যিই কঠিন। বিত্তবানদের গায়ে শোভা পাবে অ্যাংগোরা নামক খরগোশের পশম দিয়ে তৈরি দামি সোয়েটার কিংবা কম্বল। বিশেষ করে মেয়েদের ফ্যাশনের জন্য বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে। তুলতুলে নরম ও গরম হওয়ায় এই পশমী কাপড়ের জুড়ি নেই। আমাদের দেশেও আমদানি হয় এর থেকে তৈরি সুতা কিংবা কাপড়। তবে এতে শতকরা ৩ ভাগ অ্যাংগোরা খরগোশের পশম থাকে। আবার ১৭% পর্যন্ত থাকার কথাও পাওয়া যায়। এই পশম সংগ্রহে প্রাণীর উপর নির্মম আচরণও চলে অনেক সময়। আজ এই অ্যাংগোরা খরগোশকে নিয়ে একটি নৃশংস ঘটনার কথা তুলে ধরব।

অ্যাংগোরা নামক বিলাশবহুল সুতা বা তন্তু তৈরী হয় লম্বা পশমের অধিকারী অ্যাংগোরা নামক খরগোশ থেকে। এক সময় সারাবিশ্বে এই পশম শিল্প গড়ে উঠেছিল। তবে বর্তমানে এই পশম শিল্পের বিস্তার শুধু চীনেই দেখা যায়।

International Wool Textile Organization এর মতে বছরে প্রায় ৪৭০০ টন (২৫০০-৩০০০ টন, উইকিপিডিয়া) উৎপাদিত হয় চীনে। অর্থাৎ প্রায় ৯০% উৎপাদিত হয় চীনে। চীন এমন একটি দেশ যেখানে খামারে পালিত প্রাণীকে রক্ষার বিষয়ে কোন আইন নেই।Angora Rabbit

অ্যাংগোরা খরগোশের পশম প্রতি ৩-৪ মাস অন্তর অন্তর কাঁচি দিয়ে কাটা যায়। আবার যখন পশম ঝরানোর সময় হয় তখন টেনেও তোলা যায়। প্রতিটি অ্যাংগোরা খরগোশ থেকে ১ পাউন্ড পশম পাওয়া যায়। তবে পশম ঝরানোর সময়টা যথাযথভাবে জানতে হবে। অন্যথায় টেনে তোলাকে প্রাণীর উপর নৃশংসতা হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

২০১৩ সালে People for the Ethical Treatment of Animals (PETA) এর গোপন ক্যামেরায় একটি ভিডিও ধরা পড়ে। যার লিঙ্ক:

http://action.peta.org.uk/ea-action/action?ea.client.id=5&ea.campaign.id=23870

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে খরগোশের পা বেঁধে টেনে টেনে পশম তোলা হচ্ছে। আর খরগোশটি ব্যথায় চিৎকার করছে। পরে এটিকে আবার খাঁচায় আটকে রাখা হয়েছে যাতে আবার পশম গজালে আবার তুলতে পারে। লম্বা ও শক্ত পশম পাওয়ার জন্য টেনে তোলা হয়। সাধারণত অ্যাংগোরা খরগোশ বাঁচে ৭-১২ বছর। কিন্তু এই খরগোশগুলোকে তারা ৩ বছর পর গলা কেটে হত্যা করে। PETA এর এই ভিডিও প্রকাশের পর অনেক ব্রাণ্ডের প্রতিষ্ঠান যেমন কেলভিন ক্লেইন, আসোস, ম্যাংগো ইত্যাদি অ্যাংগোরা প্রোডাক্টস্‌ তৈরি ও বাজারজাত করা বন্ধ করে দিয়েছে।

সাধারণত বিভিন্ন দেশের প্রাণী অধিকারে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ভাষ্যমতে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খরগোশের পশম সংগ্রহকে অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু টেনে তোলাকে কেউই সমর্থন করেন না।

একজন মানুষের জীবনের বাস্তবতা আর প্রাণীর জীবনের বাস্তবতার পার্থক্য নেই। আপনি যদি সমাজ, দেশ বা জাতিকে কিছু দিতে না পারেন তারা আপনাকে ছুড়ে ফেলে দিবে। সেখানে একটা প্রাণী মূল্য পাবে কিভাবে? তাই পশম টেনে না তুলে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাঁচি দিয়ে কেটে কেটে পশম সংগ্রহ করুক। অন্যথায় বলব চীন থেকে আমদানিকৃত অ্যাংগোরা খরগোশের পশম থেকে তৈরীকৃত পোশাক বর্জন করা হোক।

শিক্ষার্থী – চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics