বুলবুলির প্রিয়- তেলাকুচা !!!
হুমায়রা হেদায়াত স্বর্ণা
তেলাকুচা কেমন যেনো অদ্ভুত একটা নাম! শুনলেই কেমন তেলাপোকা… তেলাপোকা মনে হয়!!! এর ফল তেলচকচকে কুঁচের মত মসৃণ বলে হয়তো তেলাকুচা নাম হয়েছে। নাম তার যেমনি হোক; গুণে তার জুরি মেলা ভার।
তেলাকুচা একটি লতানো উদ্ভিদ। বসতবাড়ির আশেপাশে, রাস্তার পাশে, বন-জঙ্গলে এটি জন্মায়। কয়েক বছর ধরে পুরানো মূল থেকেও গাছ হয়ে থাকে। শীতকাল ছাড়া সব মৌসুমেই তেলাকুচার ফুল ও ফল হয়ে থাকে। ফল ধরার ৪ মাস পর পাকে এবং পাকলে টকটকে লাল হয়। যে ফুলের বোঁটা ছোট সেগুলিতেই তেলাকুচা ফল ধরে, যা বুলবুলি পাখির অত্যন্ত প্রিয় খাবার। বাগানে বুলবুলি দেখতে হলে এর লতা-ঝাড়ে চোখ রাখলেই সহজে দেখা মিলে যেতে পারে।
সাধারণ তেলাকুচার বোটানিক্যাল নাম ‘Coccinia grandis’ বা Coccinia Cordifolia Cogn. এটি Cucurbitaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং ভেষজ নাম: Coccinia. তেলাকুচার পাতা পঞ্চভূজ আকারের , রং সবুজ। এর পাতা অত্যন্ত সুস্বাদু একটি খাবার। গরম ভাতের ওপর সেদ্ধ দিয়ে ভর্তা করে খাওয়া যায়। কচি পাতা ও ডগার শাক খুবই মজার। পাতা ও মূলের রস খাওয়া যায়। পাতা পেষ্ট করে বিষ ফোড়ায় লাগালে দ্রুত পেঁকে যায় ৷ চর্মরোগে পেষ্ট ব্যবহৃত হয়।
তেলাকুচের ফল খাওয়া যায় না, ভীষণ তেতো। এর রস বমনকারক হিসেবে শ্রেষ্ঠ ভেষজ। বিষ খেয়ে ফেললে বা যে কোনো কারণে বমি করানোর দরকার হলে এর চেয়ে ভালো কিছু হাতের কাছে মেলে না। কিন্তু আরেক ধরণের তেলাকুচা আছে যা মিষ্টি এবং হরহামেশাই খাওয়া হয়; ভারতে যার নাম কুন্দ্রি বা কুঁদরি। বিদেশের সুপার মার্কেটে এগুলো নিয়মিত পাওয়া যায়। রান্নার পরে এটা বেশ টেস্টি হয়ে যায়, আপনা থেকে কিছুটা গ্রেভিও তৈরি হয় এতে।
এটি প্রচুর ভেষজ গুণসম্পন্ন একটি উদ্ভিদ। ডায়াবেটিস রোগীরা এর পাতা ও মূলের রস সেবনে ভাল ফল পাবে ৷ সর্দি কাশি, জ্বর, হাঁপানীরোগ, আমাশয়, প্রমেহ, গনোরিয়া, চর্মরোগ, কানে ঘা, হাতে মুখে জ্বালা পোড়া, অজীর্ণ, মুখে অরুচি, হিষ্টিরিয়া মায়ের দুগ্ধবৃদ্ধিতে, পিত্তজ্বালা, জন্ডিস, মৃগীরুগী, পা ফোলা, পান্ডু রোগ ইত্যাদি সারাতে তেলাকুচার পাতা ও মূল এসবের মহৌষধ ৷