বিনা মেঘে বজ্রপাত!!

মাহবুব রেজওয়ান সানি

চলুন পাঠক ,কিছুক্ষণের জন্য একটি সুন্দর সময়ের কল্পনা করি! সুন্দর রৌদ্রজ্জ্বল একটি বিকেল। উপরে নীল আকাশ! ছুটির দিনে মানুষ তার প্রিয়জনদের সাথে নিয়ে ঘুরছে। অন্যের আনন্দ দেখেও তো কতো আনন্দ! আপনিও সুন্দর এই বিকেলটি উপভোগ করতে হাঁটতে বেরিয়েছেন রমনা পার্কের ছায়া-শীতল রাস্তা ধরে। একটি লম্বা নিঃশ্বাস নিলেন। আর সেই সাথে ভাবছেন, জীবনটা কতো সুন্দর!!

কিন্তু পাঠক! সাথে সাথেই যদি বিকট শব্দে কোথাও বজ্রপাত হয়, যা সাধারণ বজ্রপাতের থেকে অন্তত ১০ গুন বেশি শক্তিশালী!! তখন আর জীবন উপভোগ করার সময় কোথায়! ‘আপনি বাঁচলে বাপের নাম’ এই কথাটিই হয়তো মনে মনে ভাবতে থাকবেন। কিন্তু, সুন্দর নীল আকাশ। আকাশের কোথাও কালো মেঘের কণা পর্যন্ত নেই। সেখানে বজ্রপাত এলো কোথা থেকে! এটি কিন্তু কোন বাড়াবাড়ি কল্পনা নয়। একেই বলে ‘বিনা মেঘে বজ্রপাত’। ইংরেজিতে যাকে বলে Bolt from the blue।bolt

কল্পনার জগত রেখে এবার চলুন বিজ্ঞানের জগত থেকে ঘুরে আসা যাক! সাধারণত, আকাশে যখন মেঘের ঘনঘটা, প্রচণ্ড বাতাস, সেই সাথে মুষলধারে বৃষ্টি! এই সময়েই বজ্রপাতের ঘটনা আমাদের কাছে স্বাভাবিক। এমনকি, বজ্রপাত শুরু না হলেও এইরকম সময়ে বজ্রপাত হবেই, এটা ধরে নিয়ে এলাকার মানুষজন সবাই নিজ নিজ ঘরের দিকে ছুট দেয়। এই যে সাধারণ বজ্রপাত, এটা মূলত হয়ে থাকে নেগেটিভ চার্জ থেকে। মেঘের মধ্যে দুধরণের চার্জ থাকে। একটি নেগেটিভ চার্জ, অপরটি পজেটিভ চার্জ। আর পরিষ্কার আকাশে বজ্রপাতের ঘটনাটি ঘটে থাকে পজেটিভ চার্জের দরুণ!

bolllt

কিন্তু কথা হচ্ছে, পজেটিভ বা নেগেটিভ যাই হোক না কেন! মেঘ তো থাকতে হবে। Bolt from the blue এর ক্ষেত্রে আসল রহস্যটি এখানেই। পজেটিভ চার্জের ফলে যে বজ্রবিদ্যুৎ তৈরি হয়, তা সাধারণ বজ্রবিদ্যুৎ থেকে কমপক্ষে ১০ গুন বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে। আর এতে করে অনেক দূরের মেঘ থেকে এই বজ্রপাতটি তৈরি হলেও অনেক দূরত্ব অতিক্রম করে মেঘমুক্ত এলাকাতেও আঘাত হানতে পারে। এই ধরণের বজ্রপাত অন্তত ৩২ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে আঘাত হানতে পারে। পজেটিভ চার্জের ফলে সৃষ্ট এই বজ্রপাত অনেক বেশি সময় স্থায়ী হয়। আর এই কারণে সাধারণ বজ্রপাতে যে শব্দ হয়, তার থেকেও অনেক বেশি শব্দ হয় এই ধরণের বজ্রপাতে। এমনকি আপনার কানের তালা পর্যন্ত ফেটে যেতে পারে এর তীব্র শব্দে।

তবে পাঠক! ভয় পাবার কিছু নেই। Bolt From the blue কে মোটামুটি বিরল ঘটনাই বলা যায়। ভয় পেয়ে কি ঘরেই বসে থাকবেন? ছুটির বিকেলটা মাটি করবেন কেন!

Related Articles

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics