প্রজাপতির পাখায় ভর করে গড়ে উঠা এক ব্যতিক্রমী সংগঠন “বাটারফ্লাই বাংলাদেশ”
নাসিফ সাদাত
২০১২ সালের নভেম্বর মাসের কথা। দুইজন আলোকচিত্রী নিজেদের ভাললাগা থেকে ফেইসবুকে প্রজাপতি বিষয়ক একটি গ্রুপ খুললেন। তাঁরা মূলত পাখিপ্রেমী এবং পাখির ছবিই তুলতেন। প্রজাপতি দেখতে ভাল লাগলেও এটা নিয়ে কিছু করার চিন্তা-ভাবনা তেমন ছিল না। কিছুটা ভাললাগা, কিছুটা ভালবাসা থেকে অনেকটা খেয়ালের বশেই গ্রুপটির জন্ম। শুরুতে নিজেরাই পোস্ট করতেন টুকটাক ছবি। কিন্তু নাম তেমন জানা থাকত না। গ্রুপে তখন কয়েকজন ছিলেন যারা টুকটাক নাম জানতেন। তাঁরাই তখন নাম বলে দিতেন। সেই থেকেই শুরু। এরপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর সাথে যুক্ত হতে থাকে। এদের অনেকেই প্রজাপতি নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করছেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গ্রুপটি দিনে দিনে আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে থাকে। ধীরে ধীরে এই গ্রুপে যুক্ত হতে থাকেন এমন সব বিশেষজ্ঞ যাঁরা আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত। তাদের সুচিন্তিত মতামত, বিভিন্ন বিষয়ের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষন গ্রুপটিকে আরও সম্বৃদ্ধশালী করে তুলল। একসময়ের শুধুই ছবির সৌন্দর্যে ভরে থাকা গ্রুপটি এখন আর শুধু ছবিতেই সীমাবদ্ধ থাকল না। এখানে প্রজাপতির ছবির পাশাপাশি এদের বর্ননা, বাসস্থান সংরক্ষন, বিভিন্ন আচরণ বিশ্লেষন, পরিযায়ন ইত্যাদি নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে থাকল। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তথ্য, বিভিন্ন মতবাদ এর বিষয়ে প্রচুর যুক্তি-তর্ক এখানকার সদস্যদের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তুলল। দিনে দিনে একটি সাধারন গ্রুপ হয়ে উঠল গবেষণা ও জনসচেতনতা সৃষ্টির এক পীঠস্থান। আড়াই বছরে এর বর্তমান সদস্য সংখ্যা এখন প্রায় সাড়ে সাত হাজার এর মত।
গ্রুপটির সবচেয়ে বড় সফলতা, এটি অনেক প্রকৃতিপ্রেমী ও পরিবেশ সচেতন মানুষদের একত্রিত করে একটা ক্ষেত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এটা এমন একটা ক্ষেত্র যেখানে আলোকচিত্রী, গবেষক, শিক্ষক থেকে শুরু করে ছাত্র, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, নীতি-নির্ধারক ইত্যাদি নানান শ্রেনী পেশার মানুষ খুব সহজেই তাঁদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন। তাঁরা চাইলেই তাঁদের আশেপাশে ঘটতে থাকা পরিবেশ বিষয়ক নানান অসঙ্গতি এখানে জানাতে পারেন এবং উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করতে পারেন। তাই এটা যেকোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদেরও একটা মাধ্যম। গবেষণা কাজের শুরু থেকেই গ্রুপটি সহায়ক ভুমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে এটি “ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্সেস” (আই.ইউ.সি.এন.) এর ‘আপডেটিং রেডলিস্ট’ এ অনলাইন কন্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ করছে। নতুন প্রজাতির সনাক্তকরন, তাদের অবস্থান নিশ্চিতকরন, বিস্তৃতি ও পরিযায়ন পর্যবেক্ষন গ্রুপটির নিত্যদিনের কাজের একটা অংশ। গবেষণার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধিতেও গ্রুপটির অবদান অনেক। সচেতনতা বৃদ্ধির শুরুটা ফেসবুকে শুরু হলেও এখন এটি অনেকটা বিস্তৃত। ইতোপূর্বে তিনবার ফটোওয়াক এর আয়োজন করা হয়েছে। এবার প্রথমবারের মত ওয়ার্কশপ আয়োজন করতে যাচ্ছে বাটারফ্লাই বাংলাদেশ।
বাটারফ্লাই বাংলাদেশ প্রজাপতির ডানায় ভর করে একটুএকটু করে উড়ে যাচ্ছে। বেড়ে উঠার সাথে সাথে দায়ভারও বাড়তে থাকে। সেই লক্ষ্যে এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে যুক্ত হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের চিন্তা-ভাবনা, একই সাথে বাড়ছে কাজের পরিধি।
উল্লেখযোগ্য কিছু পরিকল্পনা –
ফটোওয়াক ও ওয়ার্কশপ আয়োজন নিয়মিত করার ইচ্ছা আছে।
পাশাপাশি বাৎসরিক এক্সিবিশন করার ইচ্ছাও রয়েছে।
একটি ম্যাগাজিন করার ইচ্ছা আছে যা নিয়মিত বিরতিতে প্রকাশিত হবে।
গ্রুপের সদস্যদের নিয়ে মাঠ পর্যায়ের গবেষণা আরও ত্বরান্বিত করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে।