প্রজাপতির নাম নয়ন

সাব্বির হোসাইন খান

প্রজাপতি প্রজাপতি কোথায় পেলে ভাই এমনও রঙ্গিন পাখা… গান, কবিতা, ছড়া, কিংবা চিন্তার জগতে কোন না কোন সময়ে নিজেকে প্রজাপতি কল্পনা করেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। খোলামেলা পরিবেশে চলাফেরার সময়ে অনেক সময়ে আমাদের পাশে গাড় কমলা বর্ণের এক ধরণের প্রজাপতি দেখি যাদের ওপরের ডানাতে বৃত্তাকার কয়েকটি চোখের মত ছোপ ছোপ দেখা যায়। যেন চোখ তুলে আমাদের দেখছে কিংবা একটা চোখে যেন কথার ফুলঝুরি ফুটিয়েছে গাছে-গাছে; ফুলে-ফুলে। এরা বাংলাদেশের সচরাচর দেখতে পাওয়া এক প্রজাপতি যারা , সারা পৃথিবীতে Peacock Pansy নামে পরিচিত। এদের বাংলা নাম নয়ন ।

এই প্রজাপতিটি ১৭৫৮ সালে লিনিয়াস কতৃক সর্বপ্রথম বর্ণিত হয়। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Junonia almana (Linnaeus), 1758 বাংলাদেশে এই Pansy পরিবারের ছয় প্রজাতির দেখা মিললেও এদেরকে প্রায় সমগ্র দেশেই দেখা মেলে। অন্যান্য প্রজাতির মতোন এই দিবাচর শ্রেণির প্রজাপতি গুলোরও পাখার রঙ থেকে শুরু করে প্রজনন কাল, সংখ্যা, গায়ের রঙের মধ্যে অনেক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। ‘Peacock Pansy’ যার বাংলা নাম ‘নয়ন ’।Peacock Pansy 1-2

এদের পাখার উপরের অংশে চোখের মত উজ্জ্বল ওসেলাস রয়েছে যার কারনে এদের এই বাংলা নাম করন করা হয়েছে । পরিণত বয়সে পাখাসহ এরা ৪০ মিলিমিটার থেকে শুরু করে প্রায় ৬২ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। সাধারনত সারা বছর জুড়েই এদের পাওয়া যায় তাই এদের দুই ধরনের গঠন পাওয়া যায় একটি শুষ্ক মৌসুমের এবং অন্যটি আদ্র মৌসুম গঠন । পুরুষ ও স্ত্রী প্রজাপতির পার্থক্য খুবই কম ।

নিমফ্যালিডি পরিবারের নয়ন এর পাখার রং কমলা যাতে বাদামি আভা রয়েছে।পাখার উপরের অংশ গাড় হলুদ , টামেন এবং কোস্টাল মারজিন গাড় বাদামি । টামেন এর পাশে প্রতি পাখাতে দুই জোড়া ওসেলাস বা চোখের মত দাগ রয়েছে। এরা বাংলাদেশের বিস্তৃত প্রজাতি । তারা মূলত দিবাচর , তাদের দিনে সূর্যের আলোতে আতপস্নান করতে প্রায়ই দেখা যায়। আসলে এরা ঐ সময়ে সূর্য্যের আলো থেকে শক্তি শোষণ করে। শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণি হবার কারণেই এরকম কাজ করে থাকে।Peacock Pansy 2-2

নয়ন সাধারনত Asteracantha longifolia প্রজাতির গুল্ম সদৃশ গাছের পাতার উপরের পাশে সবুজাভ গোলাকার ডিম পারে । ডিম থকে ৩-৪ তিনের মধ্যে লার্ভা বা শুঁয়োপোকা বের হয় যা আকারে ১.৫ থেকে ২.৫ মিমি. ।এরা ১৫ থেকে ১৭ দিন পর এর লার্ভা স্থির পিউপা তে পরিনত হয় যা ৬ থেকে ৭ দিন পর পূর্ণ বয়স্ক প্রজাপতিতে পরিনত হয়।
বাংলাদেশ ছাড়াও এ প্রজাপতি ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে পাওয়া যায়।

ছবিঃ লেখক

লেখকঃ শিক্ষার্থী, প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics