বাণিজ্যিক ও জনসমাগম স্থানে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসম্মত পাবলিক টয়লেট নিশ্চিত করার আহবান

প্রতিটি বাণিজ্যিক ও জনসমাগমস্থানে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসম্মত পাবলিক টয়লেট নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়িত্ব নিতে হবে। নগরে চাহিদার তুলনায় পাবলিক টয়লেট কম এবং অধিকাংশ ব্যবহার অনুপযোগী। নারী ও প্রতিবন্ধীদের টয়লেট ব্যবহারে নিরাপত্তাসহ আলাদা ব্যবস্থা নাই। ফলে মানুষ বেশি সময় ধরে প্রস্্রাব, পায়খানা আটকে রেখে কিডনিজনিত রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আজ সকাল ১১টায় পবার সভা কক্ষে বিশ্ব টয়লেট দিবস উপলক্ষে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা ) ও  ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ”পাবলিক টয়লেটের বর্তমান অবস্থা, গুরুত্ব ও করণীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট-র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান।

জিয়াউর রহমান বলেন, জাতিসংঘে হিসাবে, বিশ্বে সাতশত কোটি মানুষের মধ্যে আড়াইশত কোটি মানুষের উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই। একশত কোটি মানুষ খোলা জায়গায় মল-মূত্র ত্যাগ করেন। আমাদের দেশের গুটিকয়েক পাবলিক টয়লেটব্যতিত বেশীরভাগই অপরিচ্ছন্ন এবং নিরাপত্তাহীন। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১০% প্রতিবন্ধী হলেও পাবলিক টয়লেটগুলোতে তাদের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই।
পরিবেশবিদ আবু নাসের খান বলেন ঢাকার দুটি সিটি কর্পোরেশনেই স্যানিটারী ইন্সপেক্টর থাকা সত্বেও পাবলিক টয়লেটগুলো তদারকি করছে না। পর্যবেক্ষনে দেখা যায়; বেশীরভাগ “পাবলিক টয়লেট” এর অবস্থাই করুণ। কোনটির দরজা নেই, ছিটকিনি নেই, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস নেই, বিদ্যুৎ নেই, অপরিস্কার, ময়লা, দুর্গন্ধ, ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে, ময়লা পানি জমে থাকে, নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। Picture 004
প্রকৌশলী আবদুস সোবহান বলেন, ভাসমান মানুষ যারা ফুটপাতে থাকে বা শহরের চলাচল করে তাদের জন্য পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর পাবলিক টয়লেটের মান উন্নত করতে হবে। এছাড়া মানুষকে পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ডা: লেলিন চৌধুরী বলেন, একটি সভ্য জাতির মানদন্ড হচ্ছে তাদের পয়ঃ নিষ্কাষণ ব্যবস্থা। ঢাকা শহরের টাইফয়েট, আমাশয়, জন্ডিসসহ ৪ টি রোগে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ পয়ঃব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা। শুধু ঢাকা শহরের কথা চিন্তা করলে চলবে না, ঢাকার বাইরের পাবলিক টয়লেট নিশ্চিত করতে হবে।
এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, পাবলিক টয়লেট নিশ্চিত সিটি কর্পোরেশনের আইনী দায়িত্ব। হাজার কোটি টাকা সিটি কর্পোরেশনের বাৎসরিক বাজেট হলেও,  নগরে গুটি কয়েক পাবলিক টয়লেট ব্যবস্থাপনা করতে পারছে না। অর্থদিয়ে যদি মানুষকে পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে হয়, তবে জনগন কেন স্থানীয় সরকারকে ট্যাক্স দেবে। বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বা অন্যান্য জনসমাগমস্থল তৈরির সময় বিনামূল্যে পাবলিক টয়লেট সুবিধা নিশ্চিতের শর্ত আরোপ করতে হবে। এছাড়া নিয়মিত পাবলিক টয়লেটগুলো অবস্থা মনিটরিং ও অভিযোগ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

অনুষ্ঠানের আরো বক্তব্য রাখেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক আসলাম খান, নাসফের সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট-র ন্যাশনাল এডভোকেসী অফিসার মারুফ রহমান, ফুয়ারার রেহানা জামান চৌধুরী, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত প্রমূখ।

সভায় পাবলিক টয়লেট বিষয়ক সুষ্ঠু নীতিমালা এবং পরিকল্পনা প্রণয়ন, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে পাবলিক টয়লেট নিশ্চিতে স্থানীয় সরকার এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্য করা। পাবলিক টয়লেট না থাকলে বা মানসম্মত না হলে, সহজে অভিযোগ প্রদানের ব্যবস্থা ও প্রয়োজনে দোষীদের শাস্তি এবং জরিমানা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics