‘কেয়ার ফর পজ’ ; ভালোবাসার পৃথিবী
লিসান আসিব খান
দেয়ালের একপাশ থেকে আরেক পাশের দূরত্ব কম হলেও তাদের জন্য ভালোবাসার দূরত্ব কিন্তু অনেক বেশি । দেয়ালের একপাশ তাদের জন্য নিরাপদ কিন্তু অপর পাশ কি তাদের জন্য নিরাপদ ? উত্তরটা হয়তোবা হবে না । তবে এই না কে হ্যাঁ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে একদল তরুন তরুণী আর মোহাম্মদপুরের বসিলায় চলছে তাদের কর্মকাণ্ড যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘কেয়ার ফর পজ’। তবে বসিলা ছাড়াও সারা ঢাকা শহরেই চলছে তাদের কার্যক্রম ।
মুলত ‘কেয়ার ফর পজ’ হল একটি পশুকল্যাণ সংগঠন যাদের মূল লক্ষ্য হল রাস্তার আহত এবং অবহেলিত কুকুর-বিড়ালদের উদ্ধার করে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ভালোবাসা দিয়ে সুস্থ করে আবার তাদের নিজস্ব জায়গায় পৌঁছে দেওয়া ।
কুকুর বিড়ালের এই ভালোবাসার দুনিয়াতে প্রবেশের আগেই বাহিরে আপনাকে স্বাগত জানাবে কালু এবং সুন্দরী । আর ভিতরে প্রবেশ করলেই স্বাদর সম্ভাষণ জানাবে নবাব । শুধু নবাব নয় তার সাথে আরও দেখা মিলবে কৃস, হ্যানাকো , টিমন , স্কুইড সহ আরও অনেকের যারা আদর যত্নে সময় কাটাচ্ছে তাদের এই ভালোবাসার পৃথিবীতে। এছাড়াও দেখা মিলবে চকলেট, ললি ও ভুলুর সাথে যারা দলবেধে হৈচৈ, ডাকাডাকি আর লাফালাফি করেই দিন কাটায়।
‘কেয়ার ফর পজ’ এ আছেন দুজন চিকিৎসক। ডা. মো. মাহমুদার রহমান ও ডা. মো. সামিউল হক । প্রতি শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তারা বেওয়ারিশ এবং পোষা প্রাণীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় ‘কেয়ার ফর পজ’ এর প্রধান উদ্যোক্তা ফারহানা এইচ চৌধুরীর সাথে । তিনি এনভাইরনমেন্টমুভকে জানান ,‘কেয়ার ফর পজ’ প্রতিষ্ঠিত হয় এই লক্ষ্য নিয়ে যেন কোন আহত প্রাণী চিকিৎসার অভাবে মারা না যায় । আমাদের উদ্দেশ্য হল কুকুর বিড়ালের প্রতি মানুষের নিষ্ঠুরতা রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা ।
দেশে কুকুর-বিড়ালের মোট সংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি বেওয়ারিশ। ‘কেয়ার ফর পজ’ এর তত্ত্বাবধানে এইসব কুকুর-বিড়ালকে প্রতিষেক টিকা দেওয়া হয় ।
‘কেয়ার ফর পজ’ এর ব্যবস্থাপনা প্রধান সৌরভ শামীমে বলেন , “শুরুর দিকে আমাদের অনেক কঠিন সময় পাড় করতে হয়েছে । অনেক বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করেই আজ আমরা এক সাথে কাজ করছি অবহেলিত ও আহত কুকুর বিড়ালদের জন্য । এরই মধ্যে আমারা গাজীপুরে ১০ কাঠা জমি অধিগ্রহন করেছি আমাদের নিজস্ব অবকাঠামো নির্মাণের জন্য । যেখানে প্রতিষ্ঠিত হবে অবহেলিত কুকুর ও বিড়ালের সত্যিকারের ভালোবাসার স্বর্গ । তিনি আরও বলেন, যাদের জন্য ‘কেয়ার ফর পজ’ আজ তার কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছে নিজ গতিতে তাদের কথা না বললেই নয় আর তারা হলেন সায়মা , জাহিদ , তামজিদ ,তানিম, নওশিন , অ্যামি , তিলক , রিযু , প্রিদিয়া, তানুশ্রী , তামান্না , জিনিয়া । যাদের নিরলস পরিশ্রম আর ভালোবাসায় বেড়ে উঠছে কেয়ার ফর পজের সদস্যরা” ।
বাংলাদেশে প্রচলিত ‘ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমেল অ্যাক্ট-১৯২০’-তে বলা হয়েছে, ‘যদি বিনা কারণে কোনো পশুর প্রতি নির্দয় আচরণ করে, প্রহার করে অথবা এমনভাবে বেধে রাখে বা বহন করে, যাতে নির্দয় আচরণ স্পষ্ট হয় অথবা নির্দয় আচরণের কারণে কোনো পশুর মৃত্যু হয়, তাহলে এর জন্য দায়ী ব্যক্তির সর্বোচ্চ তিনমাসের জেল এবং আর্থিক জরিমানা হতে পারে৷
‘কেয়ার ফর পজের’ জন-সংযোগ বিভাগের প্রধান তামজিদ করিম বলেন , “এখন বাংলাদেশের মানুষ আগের তুলনায় অনেক সচেতন৷ আর সে কারণেই কোথাও একটা কুকুর-বিড়াল আহত হলে সাথে সাথে তা আমাদের ফোন করে জানানো হয় এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করা হয় । আমরা চেষ্টা করি আহত বা নানা দুর্ঘটনার শিকার প্রাণীকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দেবার ।এছাড়া বিভিন্ন এলাকাতে আমাদের স্বেচ্ছাসেবক আছে তাদের মাধ্যমে আমরা অসুস্থ কুকুরদের উদ্ধার করে আমাদের ক্লিনিকে নিয়ে আসি , চিকিৎসা এবং সেবা যত্ন করার পর তারা সুস্থ হলে আমারা তাদের যে এলাকা থেকে ধরে আনা হয়েছে, ঠিক সেখানেই রেখে আসি এবং কয়দিন পর আমরা আবার সে এলাকায় যাই দেখে আসার জন্য যে তারা সুস্থ আছে কি না । এভাবেই চলছে আমাদের কার্যক্রম । তিনি আরও বলেন , গত ১লা মে বান্দরবানের লামা উপজেলায় আড়াইশ কুকুরকে জলাতঙ্ক প্রতিষেক টিকা দেওয়া হয় কেয়ার ফর পজের পক্ষ থেকে । “
ক্লিনিকের ভিতরেই দেখা হয় স্বেচ্ছাসেবক তামান্নার সাথে, ললি নামের একটি কুকুর ছানাকে নিয়ে ব্যাস্ত সময় কাঁটাতে দেখা যায় তাকে । তিনি বলেন , ললির মতই আমাদের চারিপাশে অনেক কুকুর ছানাকে দেখা যায় , যারা কিনা অবহেলার শিকার,আমাদের স্বদিচ্ছার অভাবে অকালে প্রান যায় তাদের । ইচ্ছে করলেই আমরা বাঁচাতে পারি তাদের।
“ভবিষ্যৎে কেয়ার ফর পজকে একটি এনজিও হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যাতে এটিক তার নিজস্ব খরচে বেওয়ারিশ কুকুর-বিড়ালের জন্য কাজ করে যেতে পারে এবং দেশের সব জেলায় শাখা খুলতে চাই যেন বিনা চিকিৎসায় কোন কুকুর-বিড়ালের মৃত্যু না হয়” – ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে এমনটাই আশা প্রকাশ করেন ফারহানা এইচ চৌধুরী ।
বিস্তারিত জানতে চোখ বুলিয়ে আসতে পারেন পারেন “কেয়ার ফর পজের” ফেসবুক পেজে এবং ইচ্ছে করতে আপনিও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন আপনাদের আশেপাশে অবহেলায় বেড়ে উঠা কুকুর বিড়ালের জন্য ।
https://www.facebook.com/carefpaws/
https://www.facebook.com/groups/careforpaws/