ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান ! ক্যামোফ্লেজ-পর্ব ২

আসিফ আহমেদ

ক্যামোফ্লেজ বা ছদ্মবেশ একটি অতি প্রাচীন শিল্প। ‘হয় মরো না হয় মারো’… প্রানীজগতের এই রীতির কারনেই প্রানীরা নিজেদের বেঁচে তাগিদে নানা পথ বেছে নেয়। এর মধ্যে অন্যতম এই ক্যামোফ্লেজ। শিকার করতে অথবা শিকারীর হাত থেকে বাঁচতে ছোট বড় প্রানীরা যে সব কান্ড কারখানা করে তা আপনার কল্পনাকেও হার মানাবে। পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে এরা সব কিছু করতে প্রস্তুত, এবং এর মাধ্যমেই তাদের অসামান্য চাতুর্যের প্রমাণ মেলে। ডারউইন যে বলে গেছেন, ‘Survival of the fittest’। বেঁচে থাকতে গেলে ‘ফিট’ যে হতেই হবে। প্রানীজগতের সেরা কিছু ছদ্মবেশ নিয়ে আজকের এই আয়োজন।

৯। গোস্ট ম্যান্টিসঃ
9

এদের শরীরও মরা পাতার আদলে গড়া। পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকাতে এদের বাস। শারীরিক ছদ্মবেশ ছাড়াও এরা আচরণগত বেশ মজার কিছু ছদ্মবেশ দেখায়। যেমন, বিপদের গন্ধ পেলে এরা পিছনের পা দিয়ে আদ্ভুত ভাবে গাছের ডালে ঝুলে থাকে। দেখে মনে হয় মৃদু বাতাসে শুকনো পাতা উড়ছে। গোস্ট ম্যান্টিসের বাচ্চারা পিঁপড়ার বেশ নেয়। শিকারি প্রানী গুলো পিঁপড়াদের এড়িয়ে চলে বলেই এই বন্দোবস্ত।

১০। লিফ ক্যাটিডিডঃ
10

সবুজ পাতার মধ্যে অসাধারণ ভাবে মিশে থাকে বলে এদের সচারচর দেখা যায় না…কিন্তু শোনা যায়। এদের ডানার ঘর্ষণে সৃষ্টি হওয়া অদ্ভুত শব্দের জন্যেই এদের এই নাম। এদের পায়ে কিছু বিশেষ রিসেপ্টর থাকার কারণে এরা পা দিয়ে শ্রবণের কাজ করে। সামনের পায়ের চেয়ে পিছনের পা বেশ লম্বা, যা এদের লাফাতে সাহায্য করে। পৃথিবী ব্যাপি এদের খোঁজ পাওয়া যায়। কোথাও ‘বুশ ক্রিকেট’ নিয়ে কথা হলে বুঝবেন এদের কথাই বলা হচ্ছে।

১১।গ্রেট গ্রে আউলঃ
11

শুধু যে ছোট প্রানীরাই এমন ভেল্কি দেখাবে, বড়রা পারবে না, এটা ভেবে থাকলে ভুল করবেন। শীত প্রধান রুক্ষ অঞ্চলে বাস করা এই প্যাঁচা গাছের বাকল বা টেলিফোনের খুঁটিতে খুব সুন্দর মিশে যায়। এদের অস্বাভাবিক মুখের আকার, হলুদ চোখ আর কানের অবস্থানের কারনে এরা ত্বরিত শত্রুর খোঁজ পেয়ে যায়।

 ১২। পেল থ্রোটেড থ্রী টোড স্লথঃ
12

এদের দেখলেই আপনার আদর করতে ইচ্ছা করবে। আর আদর করতে হলে আপনাকে যেতে হয়ে দক্ষিন আমেরিকার জঙ্গলে। এদের দেহাবরন অনেকটা কোটের মত, যা এদের বিরুপ আবহাওয়া ও শত্রুকে বোকা বানাতে কাজে আসে। এই গেছো প্রানীটির ঘাড়ে একটি অতিরিক্ত হাড় থাকার দরুন এরা ২৭০ ডিগ্রি পর্যন্ত মাথা ঘুরাতে সক্ষম। স্লথ স্তন্যপায়ীদের মধ্যে সবচেয়ে ধীরগতির হয়ে থাকে।

১৩। রক আগামা লিজারডঃ
13আফ্রিকার বাসিন্দা গেকো সদৃশ এই প্রানী। পাথরের সাথে মিশে শত্রুকে ফাঁকি দিতে ওস্তাদ এরা। কিন্তু যখন ধরা পড়ে যায় তখন খুব দ্রুত দৌড়ে পাথরের খাঁজে বা গর্তে আশ্রয় নেয়। আর দৌড়ানোর সময় এরা সামনের পা দুটো উঠিয়ে শুধু পিছনের পা দিয়ে দৌড়ায়।

১৪। লিফি সি ড্রাগনঃ
14

প্রানী জগত যে কতটা বৈচিত্র্যময় তা নীল জলে ডুব না দিলে বোঝা যাবে না। তারই আরেকটা নিদর্শন এই সিড্রাগন। আকারে সী হর্সের তুলনায় বেশ বড় হয় এরা(প্রায় ১৮ ইঞ্চি)। এদেরকে প্রথম দেখায় পাতাবহুল একটি গাছের ডাল মনে হবে আপনার। এদের শরীর থেকে বের হয়েছে পাতার মত লম্বা ও পাতলা ফিন(পাখনা)। যা এদের ভেসে থাকতে ও দ্রুত চলাচল করতে খুব সাহায্য করে। শরীরের রঙ পরিবর্তন করে মনোমুগ্ধকর সব রুপ ধারণ করে এরা।

পুরুষেরা ব্রুড পাউচে ডিম(পরিণত ডিম পার্পল ও কমলা রঙের হয়) লালন করে ও লেজ নেড়ে বাচ্চাদের ডিম থেকে বের হতে সাহায্য করে। আস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া হলে দেখে আসতে পারেন এই দৃষ্টিনন্দন সী ড্রাগন।

১৫। পিগমি সি হর্সঃ
15

সমুদ্রতলের অবিশ্বাস্য সব প্রানীর মধ্যে আরেকটি হল এই ক্ষুদে পিগমি সি হর্স। সমুদ্রের গরগনিয়ান কোরালের মাঝে এদের পাওয়া যায়। শুধু পাওয়া যায় বললে ভুল হবে, এই কোরাল থেকে এদের আলাদা করা প্রায় অসম্ভব। শুনে অবাক হবেন যে এই গরগনিয়ান কোরাল ল্যাবে এনে পরীক্ষা করার পূর্বে এদের অস্তিত্বই কেউ জানতো না। কারন, অবিকল কোরালের মত দেখতে এই ছোট সি হর্স গুলোর গায়ে কোরালের মতই টিউবারকল(বিচি সদৃশ) থাকে। এদের চলাফেরাও তাই খুব সীমিত।

১৬। লাল চোখ ফ্লাউন্ডারঃ
16

লার্ভা হিসেবে ফ্লাউন্ডারের জীবন শুরু হলেও দারুন রুপান্তরের মাধ্যমে এরা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়। এই রূপান্তরের সময় এদের একদিকের চোখ সরে গিয়ে অন্য দিকে এসে যায়। দুই চোখ একিদিকে হওয়ায় এরা সমদ্রের একদম নিচে মিশে থাকতে পারে। যার কারনে এরা জাল দেখতে পারে ও মাছশিকারিদের ফাঁকি দিতে পারে। সমদ্রের তলদেশে মিশে থাকে বলে এদের ‘ফ্ল্যাটফিস’ও বলা হয়। এদের দেখতে চাইলে আপনাকে আটলান্টিকের ঠাণ্ডা জলে ডুব দিতে হবে।

(চলবে…)

লেখাটির ১ম পর্ব পড়তে এখানে  ক্লিক করুন।

লেখক,
শিক্ষার্থী, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics