
ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান ! ক্যামোফ্লেজ- শেষ পর্ব
আসিফ আহমেদ
ক্যামোফ্লেজ বা ছদ্মবেশ একটি অতি প্রাচীন শিল্প। ‘হয় মরো না হয় মারো’… প্রানীজগতের এই রীতির কারনেই প্রানীরা নিজেদের বেঁচে তাগিদে নানা পথ বেছে নেয়। এর মধ্যে অন্যতম এই ক্যামোফ্লেজ। শিকার করতে অথবা শিকারীর হাত থেকে বাঁচতে ছোট বড় প্রানীরা যে সব কান্ড কারখানা করে তা আপনার কল্পনাকেও হার মানাবে। পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে এরা সব কিছু করতে প্রস্তুত, এবং এর মাধ্যমেই তাদের অসামান্য চাতুর্যের প্রমান মেলে। ডারউইন যে বলে গেছেন, ‘Survival of the fittest’। বেঁচে থাকতে গেলে ‘ফিট’ যে হতেই হবে। প্রানীজগতের সেরা কিছু ছদ্মবেশ নিয়ে আজকের এই আয়োজন।
শ্বেত শুভ্র এই ম্যান্টিস দেখতে চাইলে আপনার ইন্দোনেশিয়া ঘোরা হয়ে যাবে। ইন্দোনেশিয়ার আর্দ্র রেইনফরেস্ট গুলোতে এদের দেখা মেলে। এরা অর্কিডের সুন্দর পাপড়ির রুপ নিয়ে অর্কিডেই লুকিয়ে থাকে। ফুলের মধ্যে থাকলেও ফুলের কোমলতা এদের স্পর্শ করে না। বিধ্বংসী শিকারি এরা। এর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সেভাবেই গড়া। স্বভাবে সর্বভুক এই পতঙ্গ। ফুলের রেণুর খোঁজে আসা নিরীহ কীট-পতঙ্গরাই এর প্রধান খাদ্য।
মরুভুমিতে টিকে থাকা খুব অল্প কিছু পাখির মধ্যে একটি এই নাইটজার। মরুভুমির শুষ্ক বালিতে বাস করা এই পাখিদের খুজে পাওয়া অতি মাত্রায় দুরহ। দিন দিন এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক ভাবে কমছে।
প্রচলিত আছে এরা ছাগলের দুধ চুরি করে খায়,তাই ‘Goatsucker’নামেও এদের ডাকা হয়। প্রকৃতপক্ষে এরা পতঙ্গভোজি। মধ্যপ্রাচ্যে কোন মরুভুমিতে গেলে এদের দেখা পেয়েও যেতে পারেন।
দেখে মাছ মনে হলেও এরা আদতে মলাস্ক। এই সেফালোপোডঅনবদ্য ছদ্মবেশের প্রদর্শনী করে সমুদ্রের গভীরে। এরা যে শুধু দেহের রঙই পরিবর্তন করে তা না, এদের ত্বক অন্যান্য প্রাণীদের হ্যালুসিনেসনের সৃষ্টি করে। ভাবা যা!!! এরা আলোর প্রতিফলনও ঘটাতে পারে। ক্ষিপ্রগতির দুর্দান্ত এইসাতারু অক্টোপাস-স্কুইডদের এই জাতভাই। সব সমুদ্রেই এদের দেখা মেলে।
২০। ইন্দোনেশিয়ান মিমিক অক্টোপাসঃ
ক্যামোফ্লেজ স্টাডিতে এই অক্টোপাস নতুন দিগন্তের সুচনা করেছে। অন্য যেকোনো প্রাণীর ছদ্মবেশ থেকে এদের ছদ্মবেশ একেবারেই আলাদা।
প্রখর বুদ্ধির অধিকারী এই প্রানী শরীরের রঙ পরিবর্তনের সাথে সাথে ত্বকের গঠনবিন্যাসের আমুল পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে। এখানেই শেষ না, এদের প্রধান শক্তি হল অন্য প্রাণীদের অবিকল নকল করতে পারা। নকল করা প্রানী জগতের একটি সাধারন বৈশিষ্ট্য হলেও এই অক্টোপাস এই বৈশিষ্ট্যকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এদের কে শিকার হিসাবে পাওয়া তাই ভাগ্যের ব্যাপারই বলতে হবে।
ক্ষুদ্র এই মাকড়শাকে ফুলের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে দেখা যায়। জাল বুনে শিকারের খাটনিটুকুও এরা করে না। ফুলে মধু আর রেণুর খোঁজে আসা পোকারাই এদের প্রিয় খাদ্য। অদ্ভুত ব্যাপার হল, শিকারী প্রানী হলেও এরা স্বভাবে লাজুক। খুব সহজে ফুলের রঙের সাথে নিজের দেহের রঙ মানিয়ে নেয় এই চতুর মাকড়শা।
ক্যামেলিওনের কথা না বললে আমার এই লেখাই অসম্পূর্ণ থাকবে। লম্বা লেজ বিশিষ্ট এই সরীসৃপ রঙ বদলানোর অনন্য ক্ষমতার কারনে বেশ সমাদৃত। এদের রঙ পরিবর্তনের কারন হিসেবে সম্প্রতি কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এত দিন তারা জানতেন যে এদের দেহে থাকা ‘ক্রোমাটোফোর’ বা রঞ্জক পদার্থের কারনে এরা রঙ পরিবর্তন করে, কিন্তু এখন পদার্থবিদরা দেখিয়েছেন যে ত্বকের নিচে থাকা অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্রিস্টাল বিভিন্ন রঙের আলোর প্রতিফলন ঘটিয়ে এমন রঙ্গিন করে তোলে প্রানীটিকে। কারন যাই হোক না কেন, খুব দ্রুত চারপাশের রঙের সাথে পরিবর্তন করে মিলেয়ে যায় এরা। সঙ্গীকে আকৃষ্ট করতেও এভাবে রঙ বদলায় ক্যামেলিওন।মাদাগাস্কারের অন্যতম সৌন্দর্য এই প্রানী।
আত্মরক্ষা ছাড়াও যে শিকার ধরার কাজে প্রানীরা ছদ্মবেশ নিয়ে থাকে সেটা স্বীকৃত। এরই একটা বড় উদাহরন সবচেয়ে বড় ওয়াইল্ড ক্যাট, জাগুয়ার। শিকারের জন্যে এত বড শরীর মাঝে মাঝে এদের ঝামেলায় ফেলে। তাই এর সুন্দর লোমশ চামড়ার সাহায্যে বনের পাতার মাঝে লুকিয়ে শিকারের জন্যে ওঁত পেতে থাকে। বেশির ভাগ মানুষই লেপার্ডের সাথে এদের গুলিয়ে ফেলেন।
অবাক হচ্ছেন? হওয়ারই কথা। এতকখন বলে আসা প্রাণীদের থেকে যে আমরা যোজন যোজন দূরে। তবুও…
প্রকৃতিগত আমরা ক্যামেলিওন বা গেকোর মত ছদ্মবেশ নিতে না পারলেও চাতুরতা দিয়ে নিজেদের শত্রুদের কাছ থেকে দূরে রাখতে পারি। গেরিলা যুদ্ধ তার বড় প্রমান।এর সাথে পোশাক আর মেক-আপ দিয়ে আমরা আজ কিনা করছি। তাই আমাকে এই ছদ্মবেশি প্রাণীর তালিকায় মানুষকে রাখতেই হল।
লেখাটির ১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
লেখাটির ২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
লেখক,
শিক্ষার্থী, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
– See more at: https://www.environmentmove.earth/2015/06/catch-me-if-you-can-camouflage-episode-2/#sthash.9hSHAnzO.dpuf