
মোটাতাজা গরু ক্রয়ে সাবধান !!
মোঃ সাইফুল ইসলাম
আসছে কুরবানীর ঈদ। সাধারণত দেশে প্রতি বছর ৪০-৪৫ লাখ গরু ও ১ কোটি ৮০ হাজার ছাগল জবাই হয়ে থাকে। এদের মধ্যে ৪০% জবাই হয় কুরবানির সময়। তাই পবিত্র ঈদুল-আযহাকে সামনে রেখে অধিক মুনাফার আশায় ইতোমধ্যেই বেড়ে গেছে গরু মোটাতাজাকরণের ঝোঁক।
সাধারণত বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ও ওষুধ দিয়ে গরুকে মোটাতাজাকরণের পদ্ধতি অবলম্বন করছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা। এই সকল রাসায়নিক পদার্থ ও ওষুধ সাধারণত গরু ও মানুষ উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।
এ ব্যাপারে কথা বলেছিলাম চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ও ফার্মাকোলজি ডিপার্টমেন্টের বিভাগীয় প্রধান ড. এ কে এম সাইফুদ্দিনের সাথে। তিনি জানান- সাধারণত শীর্ণদেহী গরুগুলোকে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ যেমন বেটামিথাসন, ডেক্সামিথাসন, ডেক্সাভেট সহ বিভিন্ন ওষুধ খাওয়ানো হয়। এসব ওষুধকে স্থানীয় ভাষায় পাম্প বড়ি বলা হয়ে থাকে। এসব ওষুধ খাওয়ানো হলে গরুর শরীর থেকে পানি বের হয়ে যেতে পারেনা। ফলে মাংসে পানি জমে ও গরুর শরীর মোটা হয়ে যায়। তাছাড়া ওষুধের অবশিষ্টাংশ মাংসে থেকে যায়। এই মাংস রান্না করে খেলে এর মাধ্যমে ওষুধের অবশিষ্টাংশ মানবদেহে যায় এবং নানাবিধ স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়।
জানতে চেয়েছিলাম ওষুধ দিয়ে মোটাতাজা করা গরু কিভাবে চেনা যায়? তিনি জানান- মোটাতাজা করা গরুগুলো সাধারণত ঝিমুনি ধরে থাকে এবং এগুলো বয়সের তুলনায় অস্বাভাবিক মোটা দেখায়। তাছাড়া এরা চঞ্চল স্বভাবেরও হয়না।
গরু মোটাতাজাকরণের বৈধ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান- এই বৈধ পদ্ধতিকে ইউরিয়া মোলাসেস পদ্ধতি (ইউএমএস) বলে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে গরুগুলো প্রাকৃতিকভাবেই দ্রুত মোটাতাজা হয়ে উঠবে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন এলাকার খামারীদের মাঝে এই পদ্ধতি অবলম্বনের ঝোঁক বাড়ছে। তিনি গরু মোটাতাজাকরণের জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রাণী হাসপাতালের ভেটেরিনারিয়ানদের সাথে কথা বলে গরু মোটাতাজাকরণের পরামর্শ দেন।
প্রসঙ্গত, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ আইন-২০১০ অনুযায়ী প্রাণীকে এ ধরনের ওষুধ সেবন করানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ধরনের স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাইয়ে গরু মোটাতাজাকরণের তথ্য প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জানালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লেখক- চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়