জলাবদ্ধতা নিরসন ও জনদুর্ভোগ লাঘবে রামপুরা খাল দখল ও দূষণমুক্ত করার দাবি
মহানগরী ঢাকার পরিবেশ রক্ষা ও নাগরিক প্রয়োজনে রামপুরা খালটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মগবাজার, মধুবাগ, উলন, দাসপাড়া, রামপুরা, খিলগাঁও, মেরুল, বাড্ডা, বেগুনবাড়ীসহ বিশাল এলাকার বৃষ্টির পানি ধারণের অন্যতম প্রধান আঁধার এই রামপুরা খাল। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো সিটি করপোরেশনের বর্জ্যসহ বিভিন্নভাবে ক্রমাগত ভরাট আর দূষণের খপ্পরে পড়েছে এই পরিবেশ ও জনগুরুত্ববাহী খালটি। উক্ত এলাকাসমূহের বর্ষাকালীন জলাবদ্ধতা সমস্যা ও পরিবেশগত দিক বিবেচনায় রামপুরা খালের দখল ও দূষণমুক্ত করা জরুরী হয়ে পড়েছে। রামপুরা খাল দখল ও দূষণ মুক্ত করার দাবীতে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), পল্লীমা গ্রীণ, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ), লাল-সবুজের মেলা, বনশ্রী ক্রিকেট একাডেমী, মানবাধিকার কমিশন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর উদ্যোগে ১৩ আগস্ট ২০১৬, শনিবার, সকাল ১১ টায় রামপুরা বাংলাদেশ টেলিভিশনের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
পবার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও নাসফের সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়নার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, পল্লীমা গ্রীণের সদস্য সচিব আনিসুল হোসেন তারেক, লাল-সবুজের মেলার সভাপতি আলহাজ এম এ আকরাম মুকুল, বনশ্রী ক্রিকেট একাডেমীর সভাপতি শাহ আলম শান্ত, পবার নির্বাহী সদস্য প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ, সমন্বয়কারী আতিক মোরশেদ, সহ-সম্পাদক মো: সেলিম, নাসফের সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: কামাল উদ্দিন, প্রচার সম্পাদক ক্যামেলিয়া চৌধুরী, কলোনী গ্রীণওয়ের সভাপতি এহসানুর রহমান সুমন, মো: ইউনুস আলী, বন্ধু সংঘের সভাপতি জামাল উদ্দিন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, আশির দশকের শুরুর দিকেও রামপুরা খালের পশ্চিমাংশে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত এর নৌপথ চালু ছিল। তখন এ পথে হাতিরঝিল দিয়ে সবজি ও অন্যান্য জিনিসপত্র কারওয়ানবাজারে যেতো। বিজিএমইএ ভবনের কাছে এখন যে মাছের পাইকারি বাজারটি রয়েছে সেটি এক সময় ছিল বালু, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও টঙ্গী নদীতে ধরা মাছের ল্যান্ডিং পোর্ট। রাজধানীর এক-তৃতীয়াংশ এলাকার গৃহস্থালি ও পয়ঃবর্জ্য এবং দূষিত পানি এখন হাতিরঝিলের পরিবর্তে প্রবাহিত হচ্ছে ঐ খাল দিয়ে। বনশ্রীর কিছু অংশ, দক্ষিণ বনশ্রী, মেরদিয়া, ভূঁইয়াপাড়া, মাদারটেক এবং এর আশপাশের এলাকা থেকে সংগ্রহ করা ময়লা রামপুরা খালের এ অংশে ফেলা হয়। নৌকায় আশপাশের এলাকা থেকে মেরাদিয়া হাটে ফলমূল ও শাকসবজি নিয়ে পাইকারি বিক্রেতারা আসেন। তাঁরাও অনেক সময় নষ্ট হয়ে যাওয়া তরিতরকারি খালেই ফেলেন। ফলে দুর্গন্ধের কারণে এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হচ্ছে ব্যাহত। এই বিষাক্ত পানির প্রবাহ রামপুরা, বনশ্রী ও আফতাবনগরের প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পরে মিশছে বালু ও বুড়িগঙ্গা নদীতে। রামপুরা ব্রিজের নিচে দুটি স্টর্ম ড্রেন দিয়ে প্রতিনিয়ত দূষিত পানি এসে পড়েছে এ খালে। গৃহস্থালি ও স্যুয়ারেজ দু’ধরনের পানিই আসছে এ স্টর্ম ড্রেন দিয়ে। এর মধ্যে একটি স্টর্ম ড্রেন গুলশান-বাড্ডা-তেজগাঁও এলাকার; অন্যটি রামপুরা, মগবাজার ও কারওয়ান বাজার এলাকার। বর্জ্য থেকে উৎপন্ন গ্যাস বুদ্বুদের মতো উঠে পানিতে ফেনা তুলছে। আশপাশ এলাকার বাসিন্দারা দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পেতে শীত-গরম সব সময়ই বাড়ির জানালা বন্ধ করে রাখছেন। দিন যত যাচ্ছে, ততই দুর্গন্ধ বাড়ছে।
প্রকৃতির আর্শিবাদ হিসেবে পাওয়া এই রামপুরা খালটি এখন মারাত্মক দূষণ আর ক্রমাগত ভরাটের পাল্লায় পড়েছে। অথচ খাল জলাধার একটি নগরীর প্রাণপ্রবাহের মত। এই প্রবাহ ঠিক না থাকলে নগরীর তাপমাত্রা, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, জীববৈচিত্র্য, নগর সৌন্দর্য্য সবই ম্লান হয়ে পড়ে। বিশেষ করে মহানগরী ঢাকায় যেখানে খাল, পুকুর, লেক, জলাধারের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে অনুভূত হচ্ছে সেখানে রামপুরা খালের দখল-ভরাট অবিলম্বে বন্ধ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। সেই সাথে খালটির পানির দূষণ বন্ধে দূষণের সকল উৎস বন্ধ করার পাশাপাশি বর্তমান দূষিত পানি কিভাবে অতিসত্বর অপসারণ করা যায় তার ব্যবস্থা নেয়া দরকার। বর্ষাকালীন জলাবদ্ধতা সমস্যা ও পরিবেশগত দিক বিবেচনায় মানববন্ধন থেকে রামপুরা খালের ভরাট ও দূষণমুক্ত করতে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানানো হয়।