রঙ এ সীসা'র ব্যবহার বন্ধে অতি দ্রুত আইন প্রণয়নের দাবি
বাংলাদেশে রঙ এ সীসার ব্যবহার বন্ধে ২০১৫ সালের মধ্যে নীতিমালা ও আইন প্রণয়নে সরকারের প্রতি আহ্ববান জানিয়েছে এসডো ও বাংলাদেশ পেইন্ট ম্যানুফ্যাকচারারস এসোসিয়েশন। মঙ্গলবার ২৭ অক্টোবর, এসডোর প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত “হাই লেভেল পলিসি ডায়ালগ অন লেড ফ্রী পেইন্টস ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক সভায় এই আহব্বান জানানো হয়।
রঙ এ সীসার ব্যবহার রোধে প্রতি বছর সারা বিশ্বে গ্লোবাল অ্যাকশন টু এলিমিনেট লেড পেইন্ট “ইন্টারন্যাশনাল লেড পয়জনিং প্রিভেনশন উইক “ পালন করা হয়। বরাবরের মত এই বছরও এসডো বাংলাদেশে “ইন্টারন্যাশনাল লেড পয়জনিং প্রিভেনশন উইক” পালন করছে। আন্তর্জাতিক সীসামুক্ত সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষ্যে “বাংলাদেশের গৃহস্থালি রং এ সীসার ব্যবহার” শীর্ষক জাতীয় প্রতিবেদন – ২০১৫ উন্মোচন করা হয়। এসডোর মূল লক্ষ্য ২০১৫ সালের মধ্যে রঙ এ সীসার ঘনমাত্রা ৫০ পিপিএম নির্ধারন করা এবং ২০১৭ সালের মধ্যে রং এ সীসার ব্যবহার সম্পূর্ন বন্ধ করা।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ। তিনি বলেন এসডোর পলিসি এডভোকেসির ফলে সম্প্রতি কিছু বড় ও মাঝারি রঙ কোম্পানি সীসামুক্ত রং বাজারজাত করা শুরু করেছে। সীসামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সকলের কাছে আহব্বান জানান। বাংলাদেশ পেইন্টস ম্যানুফ্যাকচারা অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন রঙ এ সীসার মাত্রা ৫০ পিপিএম নির্ধারনে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক, মাঝারি ও ক্ষুদ্র রং প্রস্তুুতকারীরা বিপিএমএর সাথে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। একই সাথে তিনি রঙ এ সীসার ব্যবহার বন্ধে নীতিমালা ও আইন প্রণয়নে সরকারের প্রতি আহ্বাবান জানান।
ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন এর ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার সামসুল গফুর মাহমুদ তা বক্তব্যে বলেন, মানবদেহে সীসার কোন মাত্রা নেই। উন্নত দেশগুলোতে অনেক আগেই রং এ সীসা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের উচিত সব ধরনের রং এ সীসার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। রঙ এর ক্ষেত্রে সীসামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এসডোর বিভিন্ন কার্যক্রমকে স্বাগত জানান।
বিএসটিআই এর সহকারী পরিচালক জোহরা শিকদার বলেন, রঙ এ সীসার ব্যবহার বন্ধে বিএসটিআই কাজ করে যাচ্ছে। অতি দ্রুতই রঙ এ সীসার সর্বোচ্চ ঘনমাত্রা ৫০ পিপিএম নির্ধারন করা হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি শাহিন সুলতানা তার বক্তব্যে বলেন, সরকার সীসার ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন এবং রঙ এ সীসার ব্যবহার বন্ধে অতি দ্রুত নীতিমালা ও আইন প্রণয়নে কাজ করেছে ।
সভায় উপিস্থিত ছিলেন বার্জার, জতুন, নিপ্পন, আরএকে, রক্সি, এলিট, মুনস্টার এবং ইম্পেরিয়াল পেইন্ট সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় রঙ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সহ আরো অনেকে। এছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিনিধি।
এসডোর সেক্রেটারী জেনারেল ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, শিশুরা সবচেয়ে বেশী সীসা দূষণের স্বীকার হয়। উন্নত দেশগুলোতে রং এ সীসার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসডো রঙ এ সীসার ব্যবহার বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা বলেন এসডো আশা করে সরকার রঙ এ সীসার ব্যবহার বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে । তিনি আলোচনা সভায় অংশগ্রহন করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান ।
এসডো ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে উৎপাদিত রঙে সীসার ব্যবহার বন্ধে জনসচেতনতা ও নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে কাজ করে আসছে। এসডো ২০১২ সাল থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং আইপেন এর সহযোগিতায় বাংলাদেশে “লেড পেইন্ট এলিমিনেশন” শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশ পেইন্ট ম্যানুফ্যাকচারাস এসোসিয়েশন রঙ এ সীসা ব্যবহার বন্ধে এসডোর সাথে একাত্বতা প্রকাশ করে। সম্প্রতি কিছু বড় ও মাঝারি রঙ কোম্পানি সীসামুক্ত রঙ বাজারে বাজারজাত করা শুরু করেছে। এসডো এবং বাংলাদেশ পেইন্ট ম্যানুফ্যাকচারাস এসোসিয়েশন যৌথভাবে সরকারের কাছে সীসামুক্ত রঙ উৎপাদন বন্ধে একটি পুর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছে।