বিষমুক্ত নিরাপদ মৌসুমী ফল নিশ্চিত করার জোর দাবি নাগরিক সমাজের
আসছে মধুমাস জ্যৈষ্ঠ। কয়েকদিনের মধ্যেই বাজারে আসবে মধুমাসের আম, লিচু, জাম, আনারস, কাঁঠাল ইত্যাদি সুস্বাদু ও তৃপ্তিদায়ক সব ফল। মধুমাসের নিরাপদ মৌসুমী ফলের প্রাপ্তি নিয়ে জনমনে শংকা কাটছে না। কারণ বিগত দিনের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি মৌসুমী ফলের উৎপাদনে ব্যাপকভাবে বিষের ব্যবহার করা হয়। ফলের উৎপাদনে বিষের ব্যবহারে জীবন ও প্রকৃতি বিপন্ন হবার আশংকা থাকে। খাদ্যের মতো এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করতে সরকারকে অনেক বেশি তৎপর হবে। আজ ২২ এপ্রিল ২০১৬, শুক্রবার, সকাল ১১টায় পবা কার্যালয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবা’র উদ্যোগে ‘মৌসুমী ফল উৎপাদনে বিষ, বিপন্ন মানুষ-বিপন্ন প্রকৃতি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
বক্তারা বলেন-ফলমূল, খাদ্যে বিষ ও ভেজালের মিশ্রণ চরম আকার ধারণ করেছে। যার ফলশ্রুতিতে জনস্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। রাসায়নিক বিষ মেশানো ফল খেয়ে মানুষ দীর্ঘমেয়াদী নানা রকম রোগে বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট, এ্যাজমা, গ্যাস্ট্রিক, লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়া, ক্যান্সারসহ নানা রকম ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর চাপ পড়ছে।
গোলটেবিল বৈঠকে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) এর সাবেক চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ এর সভাপতিত্বে সভায় মূল আলোচনা উপস্থাপন করেন পবার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা: লেলিন চৌধুরী। তিনি মৌসুমী ফলের খামারিগণের উপর পরিচালিত পবার একটি জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ (বিএআরসি) এর সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো: খালেকুজ্জামান আকন্দ চৌধুরী, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক পরিচালক ড. ফরমুজুল হক, গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা: বিলকিস বেগম চৌধুরী, ইনোভেশন ইন সোসাল ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক মুহা: জিয়ারুল ইসলাম, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম, পবার সম্পাদক এডভোকেট হাসান তারিক চৌধুরী, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত, খেলাঘরের সম্পাদক লাভলী চৌধুরী প্রমুখ।
সভা থেকে নিরাপদ ও দূষণমুক্ত ফল নিশ্চিত করতে দশ দফা সুপারিশ পেশ করা হয়।
১. খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষি উৎপাদন থেকে যোগানের প্রতিটি ধাপে পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা
২. খাদ্যে ক্ষতিকর সকল ধরণের রাসায়নিক ব্যবহার বন্ধ করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৩. নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এবং ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৫ দ্রুত বাস্তবায়ন করা।
৪. প্রতি জেলায় খাদ্য আদালত স্থাপন এবং জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক খাদ্য পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা।
৫. প্রতিটি জেলায় কৃষি আদালত গঠন করা।
৬. সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ রাসায়নিক পদার্থের আমদানিকারক ও ব্যবহারকারী এবং লেবেল ছাড়া বা মিথ্যা লেবেলের অধীন কীটনাশক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৭. সময়োপযোগী কীটনাশক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা ।
৮. দেশের চাহিদা অনুযায়ী টিসিবির মাধ্যমে ফরমালিন আমাদানি করা।
৯. খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা।
১০. দেশে জৈব কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন ও একে জনপ্রিয় করে তোলা।