
প্রচলিত সেই ধারণা গুলো কতোটা সত্যি ? চলুন দেখে নেয়া যাক…
মোঃ সাইফুল ইসলাম
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে অনেক তথ্য শোনা যায় যেগুলো আমরা অস্বীকার করি আবার কিছু ঘটনা ঘটে যেগুলোকে সত্য বলে মেনে নিতে হয়। যুগযুগ ধরে শ্রুত কিছু কথা যাকে আপনার মন কিছুতেই অস্বীকার করতে চায় না। আসুন জেনে নেই এই শ্রুত কথাগুলোর পিছনে কি রহস্য আছে।
মৃত্যুর পরেও চুল ও নখের বৃদ্ধি: চুল এবং নখ মানুষের মৃত্যুর পরও বাড়তে থাকে। এই কথা আপনি হয়তো জীবনে অনেকবার শুনেছেন। এখন আমি আপনাদের বলতে চাই এমন কিছু কি আছে যা শক্তি ছাড়াই বাড়তে থাকবে? সত্যিকারার্থে মৃত্যুর পর শরীরের পানি বের হয়ে যায় এবং চামড়া সংকোচিত হয়ে যায়। ফলে, ত্বকের নিচে চুল ও নখের যে অংশ ঢাকা থাকে সেটি বের হয়ে আসে ফলে মনে হয় চুল এবং নখের বৃদ্ধি ঘটেছে।
চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া: স্বল্প আলোতে পড়তে গিয়ে অবিভাবকের নিষেধের মুখে পড়েননি এমন মানুষ খুব কমই আছে। স্বল্প আলোতে পড়াশোনা করলে দৃষ্টিশক্তি কমে যাবে এমন ধারণা অনেকেরই আছে। তবে এটাও সঠিক নয়। সাধারণত রেটিনায় দুই ধরনের কোষ আছে। রড ও কোণ কোষ। রড কোষ অন্ধকার ও স্বল্প আলোতে দেখতে সহায়তা করে থাকে।
বাদুড় অন্ধ: অনেকের ধারণা বাদুড় চোখে দেখেনা। এটিও ভুল। বাদুড়ের অনেক প্রজাতিই আছে যারা কিছুটা হলেও দেখতে পায়। অনেক মানুষ আছে যারা পুরো অন্ধকারে কিছুই দেখতে পারে না বাদুড়ের ক্ষেত্রেও তেমনটি ঘটে। তবে বাদুড়ের কানের শ্রবণ সংবেদনশীলতা অনেক বেশি। এর মাধ্যমেই চলাচলের জন্য বাদুড় অভিযোজিত হয়েছে।
জৈব খাদ্য: অরগানিক খাদ্য বা জৈব খাদ্য বলতে সাধারণত বোঝানো হয় খাবারটি কীটনাশকমুক্ত। কিন্তু এটাও ভুল! কারণ অন্য খাদ্যের সাথে তাল মিলিয়ে উৎপাদন করার জন্য সামান্য হলেও কীটনাশক ব্যবহার করে থাকে। তবে এটি শরীরের তেমন কোন ক্ষতি করে না। অরগানিক খাদ্যে রাসায়নিক কীটনাশক ও সারের পাশাপাশি জৈব সার, যান্ত্রিক উপায়ে বালাই নাশক পদ্ধতি, ও বন্ধু পোকাও ব্যবহার করা হয়।
সাপে কামড়ালে: সাপ কামড়ানোর পর যদি বিষ মুখ দিয়ে চুষে তোলা হয় তবে সে বিষ সাড়া শরীরে ছড়াবে না। এই ভুল ধারণাকে সত্য বানাতে আমাদের দেশের সিনেমা ও ভারতীয় সিনেমার অবদান অনেক। বাস্তবিকতা হল আপনি এমন করতে গিয়ে আক্রান্ত স্থানে সংক্রমণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারেন।
মাইক্রোওয়েব ওভেনের ব্যবহার ক্ষতিকর: মাইক্রোওভেনের ব্যবহার খুব ক্ষতিকর। এর থেকে নির্গত ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক রেড়িয়েশনের কারণে ক্যান্সার হতে পারে! কিন্তু সত্যই এটি হয়না। মাইক্রোওয়েব ওভেন থেকে নির্গত রেডিয়েশনের পরিমাণ এতই কম যে তা থেকে ক্যান্সার হওয়া অসম্ভব। তাই আপনার চিন্তা করা তেমন জরুরী নয়।
ব্যাঙ স্পর্শ করার পর: ছোটবেলায় সন্ধ্যার সময় প্রচুর ব্যাঙ বের হতো। বড়দের মুখে শুনতাম ব্যাঙ স্পর্শ করলে হাতে আঁচিল বা ভেরুকা হবে! আঁচিল বা ভেরুকা অনেকটা ব্যাঙের চামড়ার মত খসখসে হওয়ায় একথা বিশ্বাসও হতো তখন। আসলে ওয়ার্টস বা আঁচিল হল Human papilloma virus (HPV) জনিত ছোঁয়াচে রোগ যা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে ছড়াতে পারে। ব্যাঙের সংস্পর্শে আসলে নয়।
শিক্ষার্থী: চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়