
অভয়ারণ্যেও অনিরাপদ ওরা; কয়েক হাজার পাখির মৃত্যুতেও প্রশাসনের নেই উদ্বেগ
তারিক রাহাত রনেল
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ধলনগর গ্রাম। বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার পাখির বসবাস এখানকার ছাগলাপাড়া অভয়াশ্রমে। পাখির কলকাকলীতে মুখর এই অভয়াশ্রমটিতে প্রায় ১০ প্রজাতির পাখির বাস বলে জানা যায়। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন থমথমে হয়ে গেলো পুরো পরিবেশ, পরিচিত কোলাহল আর ডানা ঝাপটানোর শব্দ যে অনেকখানিই হারিয়ে গেলো! নিথর হয়ে পড়ে আছে হাজার হাজার পাখি। গত ৫ এপ্রিল (রোববার) গভীর রাতের কালবৈশাখী ঝড় আর শিলা বৃষ্টিতে থেমে গেছে ওদের হৃদস্পন্দন। ঝরো বৃষ্টির সময় বড় বড় শিলাখন্ডের আঘাতে এদের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয়দের ধারণা।
ঝড়ে লন্ডভন্ড অভয়াশ্রমের এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য মৃত পাখি এলাকাবাসীর মনে গভীর বেদনার ছাপ ফেলেছে। কিন্তু মৃত পাখিগুলো মাটিচাপা দিতে প্রশাসনের তৎপরতা যেমন চোখে পড়েনি, তেমনি মারাত্মকভাবে আহত জীবিত পাখিগুলোর সংরক্ষণেও এগিয়ে আসেনি প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বা প্রশাসনের কেউ। পরে স্থানীয় একটি সংগঠনের সহায়তায় পাখিগুলোকে মাটিচাপা দেওয়া হলেও বেঁচে যাওয়া পাখিগুলোর ব্যাপারে কারো তৎপরতাই এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি ।
মারা যাওয়া পাখিগুলোর মধ্যে রয়েছে শালিক, টিয়া, মাছরাঙা, অতিথি পাখি সহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোটবড় কয়েক প্রজাতির পাখি। এর মধ্যে বিরল প্রজাতির কিছু পাখি আছে বলেও জানা যায়। স্থানীয়রা জানান, মেহগনি, সেগুন, নিমসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছে ঘেরা ওই বাগানে বছরের পুরো সময়ই বিভিন্ন প্রজাতির পাখি থাকে। সন্ধ্যা হলেই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাখিরা এসে বাগানটিতে অবস্থান নেয়। ঝড়ের পর এই অভয়াশ্রমে খুব অল্প সংখ্যক পাখিই বেঁচে আছে।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহিবুল ইসলাম এর মাধ্যমে জানা যায় পাখি মারা যাওয়ার খবরে স্থানীয় সংসদ সদস্য কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোপশা) আব্দুর রউফ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু এরপর জীবিত পাখি সংরক্ষণে তিনি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে জানা যায়নি । অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি, এই বিষয়টিতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের নির্বিকার ভূমিকা ভাবিয়ে তুলছে এলাকাবাসীকে।
অভয়ারণ্যেও অনিরাপদ এই বিপুল সংখ্যক পাখি প্রাজাতির আপদকালীন পুনর্বাসন ও এই ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগে এদের মৃত্যু রোধে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের ভূমিকা এই মূহুর্তে অত্যন্ত জরুরী। প্রাকৃতিক এই ক্ষতি কাটিয়ে আবার কুমারখালী পাখির নিরাপদ অভয়াশ্রমে পরিণত হোক, এই আমাদের চাওয়া। কারণ, ওরা ভালো থাকলেই ভালো থাকবে পরিবেশ, ভালো থাকবো আমরা ।