ডিমের খোসা ফেলে দেবেন না আর !!
ফারজানা হালিম নির্জন
ছোট্ট একটি জিনিস,কিন্তু এর মাঝে আছে রাজ্যের সব গুণাগুণ। আছে নানান তর্ক-বিতর্ক,আছে রসরঙ্গ,আছে কুসুংস্কারও! জিনিসটি আর কিছুই নয়,একটি ডিম। হতে পারে সেটা হাঁস কিংবা মুরগীর! ডিমের পুষ্টিগুণ নিয়ে আমার থেকে অনেক ভালো জানেন আপনারা। তাই আমি আজকে শোনাবো অন্য কথা। ডিমের খোসারও যে কত রকম ব্যাবহার আছে,তা দেখে নিন। বাজি ধরে বলতে পারি,কম করে হলেও একটি দুটি উপায় আজকেই বাসায় চেষ্টা করবেন।
আর যাই হোক,এটা আমরা সবাই মোটামুটি জানি। ডিমের খোসার উপর মনের ইচ্ছেমত ছবি এঁকে ঘরের একটা কোণে ছোটবেলায় সাজিয়ে রেখেছি কত! রং-তুলির আঁচড়ে কিছু একটা তো হতো বটেই,আর সেটাকে দেখেই গর্বে বেসামাল অবস্থা হয়ে যেতো মনের ভেতর। কী শৈল্পিক এক কাজ করে ফেলেছি,এই ভেবে! সেই ধারণা কিছুটা কাজে লাগিয়ে পরে এসেছে মোজাইক আর্ট। ডিমের খোসা টুকরো টুকরো করে, নানান রঙ্গে রাঙ্গিয়ে কোনোকিছুর গায়ে সেঁটে দিয়ে ইচ্ছেমত আকৃতি আনিয়ে নিলে অদ্ভুত সুন্দর শিল্পকর্ম হয়। ছোট্টবেলার এই প্রিয় কাজটি ছাড়াও ডিমের খোসার আরো চমৎকার সব ব্যাবহার আছে,সেটাই জানাতে চাচ্ছি সবাইকে…
১। আপনার গাছের সার এর সাথে ডিমের খোসা গুড়ো করে মিশিয়ে দিতে পারেন। মাটিতে ক্যালসিয়াম সহ অন্যান্য খনিজের পরিমাণ বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে এটি,যেহেতু ডিমের খোসা খুব তাড়াতাড়ি বিশ্লেষিত হয়!
২। গাছের জন্য ক্ষতিকারক যেসব কীটপতঙ্গ কিংবা বালাই আছে,তাদেরকে গাছ থেকে ১০০ হাত দূরে রাখতেও এটি বন্ধুর মত আপনাকে সাহায্য করবে। ডিমের খোসা গুড়ো গুড়ো করে গাছের চারপাশের মাটিতে কিংবা ফুলের চারপাশে ছিটিয়ে দিলে ঐসব ক্ষতিকারক কীটপতংগ গাছের কোনো ক্ষতি করতে পারবেনা। অনেকটা প্রাকৃতিক কীটনাশক রূপে কাজ করে এটি।
৩। শৌখিন ও খুঁতখুঁতে স্বভাবের গৃহিনীদের জন্য সুখবর। বাসায় নিশ্চয়ই এমন কিছু জিনিস থাকে,যা পরিষ্কার করা যায়না সহজে। যেমন কারুকাজ করা ফুলদানী কিংবা থার্মফ্লাস্ক। সাবান-পানির সাথে যদি একটু ডিমের খোসা ভালভাবে গুড়ো করে মিশিয়ে দেয়া যায়,তবে তা দিয়ে ঐসব খুঁটিনাটি জিনিস খুব সহজেই পরিষ্কার করা সম্ভব। এছাড়া ঘষে ঘষে পরিষ্কার করতে হয়,এমনতর জিনিসের পরিষ্কারক হিসেবেও বেশ দ্রুততার সাথে কাজ করে গুড়ো করা ডিমের খোসা।
৪। যেহেতু ডিম,সেহেতু খাওয়ার প্রসঙ্গ চলেই আসে। কফির তিক্ততা স্বাদ যাদের খুব একটা পছন্দ না, বিশেষ করে তাঁদের জন্য এই খবর। কফি দানার সাথে কিছু ডিমের খোসার গুড়োও মিশিয়ে দিন। তবে হ্যা, পুরো জিনিসটি ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে অবশ্যই। ডিমের খোসা স্বাদের তিক্ততা অনেকটা কমিয়ে আনবে।
৫। এবার একটি দারুন মজার খবর। ডিমের খোসা অল্প একটু ছিদ্র করে খুব সাবধানে ভেতরের অংশ বের করে নিয়ে যেভাবে ইচ্ছে খেয়ে নিতে পারেন। তবে খোসাটি ফেলে দিবেননা। খোসার ভেতর দিয়ে দিন জেলী কিংবা গলিত চকলেট! খোসার ভেতরে ধীরে ধীরে যেন তা মোটামুটি কঠিন আকার পেয়ে যায়,সেটা খেয়াল রাখবেন। তারপর মেহমানের সামনে এমনভাবে পরিবেশন করবেন,দেখতে যেন সেদ্ধ ডিমের মত মনে হয়। খোসা ছাড়াতে গেলেই খাবার টেবিলে হাসির ফোয়ারা ছড়িয়ে পড়বে।
৬। ত্বকে সামান্য কারণে অনেক সময় জ্বালা-পোড়া হয়,চুলকানি হয়। আপেল ভিনেগারের সাথে একেবারে নিষ্পেষিত ডিমের খোসা ভালোভাবে মিশিয়ে ত্বকে লাগালে,ভাল উপকার পাওয়া যায়। যেহেতু মিশ্রনটি তখন বেশ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ থাকে।
৭। সবচে’য়ে চমৎকার খবরটি দিচ্ছি এখন। সবুজের সাথে সম্পৃক্ততা আছে প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানের কোনো না কোনোভাবে! আর যদি একটু অন্যদৃষ্টিতে দেখি,তাহলে ব্যাপারটি হয় এরকম। অল্প একটু সবুজ যেখানেই দেখিনা কেন মন পরম শান্তিতে ভরে ওঠে,সেটা আবর্জনাতেই হোক,কিংবা বহু পুরনো দেয়ালের ফাঁক-ফোঁকরেই হোক! ডিমের খোসা কিন্তু ব্যাবহার করতে পারেন চারাগাছের জন্য টব হিসেবে! টমেটো গাছের ছোট্ট সবুজ চারাগুলো এক ডজন ডিমের খোসায় মাটি ভরে তাতে লাগিয়ে দিন,জানালার ধারে রেখে দিন তাদেরকে খুব সন্তর্পণে। ওরা যখন একসাথে হাসতে খেলতে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠবে,বসন্ত এলেই পুঁতে দেবেন মাটিতে। ডিমের খোসায় শৈশবটা একসাথে কী চমৎকারভাবেই না কাঁটবে! আপনার নিজেরও প্রাণ জুড়িয়ে যাবে চারাগাছ গুলোকে অমন অবস্থায় দেখলে।
বিশেষ করে এই দায়িত্বটি ঘরের শিশুদের বুঝিয়ে দিন,দেখবেন তারা কী উৎসাহ নিয়ে ডিমের খোসায় নতুন নতুন চারাগাছ লাগাচ্ছে। প্রতিটি শিশুকে যদি এরকম আকর্ষণীয় উপায়ের মাধ্যমে উৎসাহিত করা যায়,তবে ভবিষ্যৎ পৃথিবী কেন সবুজ হবেনা,বলুন তো ?
অসাধারণ!!!এই রকম লেখা আরো চাই।