গরু-ছাগলের আগে পোষ মেনেছিলো কুকুর!
কুকুর আর মানুষের সখ্য বিশ্বজুড়ে। কুকুরের প্রভু ভক্তি কিংবা কুকুর মানুষের বন্ধুত্বের নিদর্শন কম নয়। তবে, ঠিক কবে থেকে কুকুরে-মানুষে এই যুগলসন্ধি সেটি জানা ছিলো না। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে যুক্তরাজ্যের একদল বিজ্ঞানী জানতে পেরেছেন, আদি যুগের মানুষেরা বিশ্বের দুই অঞ্চলে প্রাণীটিকে পোষ মানিয়েছিল।
চতুষ্পদ এই প্রাণীটির বিকাশের ইতিহাস জানতে গবেষকদল আধুনিক জিনতত্ত্বের সাহায্য নেন। অন্তত ১৫ হাজার বছর আগে ইউরোপ ও এশিয়া অঞ্চলে নেকড়েসদৃশ শিকারি কুকুরের দুটি পৃথক প্রজাতি মানুষের পোষ মেনেছিল। আর এর সময়কাল গরু-ছাগলজাতীয় পশুকে পোষ মানানোরও পাঁচ হাজার বছর আগে।
এতো দিন পর্যন্ত ধারণা ছিল, আদি যুগের মানুষ একবারই কুকুরকে পোষ মানিয়েছিল। কিন্তু সায়েন্স সাময়িকী গত বৃহস্পতিবার যে গবেষণা প্রকাশ করে তাতে বলা হয়েছে ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়া বা চীনে পৃথকভাবে এ পোষ মানানোর ঘটনা ঘটেছে।
আয়ারল্যান্ডের গ্রাঞ্জে একটি পুরাতন সমাধির প্যাসেজের মাটি খুঁড়ে ৪ হাজার ৮০০ বছরের পুরোনো একটি মাঝারি আকারের কুকুরের কানের হাড় পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্টোরি ইন প্যারিস থেকে প্রাপ্ত ৫৯ টি কুকুরের মাইটোকন্ড্রিআল ডিএনএ পরিক্ষা করা হয় যেগুলো ১৪০০০ বছর থেকে ৩০০০ বছর আগে পর্যন্ত পুরনো। শেষ ধাপে প্রায় ২৫০০ আধুনিক কুকুরের ডিএনএ ক্রমবিকাশ করা হয় এবং তুলনা করা হয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনতত্ত্ববিদ লরেন্ট ফ্রাৎজ বলেন, তাঁরা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আদি পৃথিবীর উভয় প্রান্তে কুকুর পোষ মানানোর ইঙ্গিত পেয়েছেন। এতে মনে হচ্ছে, দুটি জনগোষ্ঠীই পৃথকভাবে বুঝতে পারে কুকুরকে পোষ মানানো সম্ভব।
জিনগত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে কুকুরের একটি বংশলতিকা তৈরি করে ওই বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, ইউরেশিয়া অঞ্চলের পূর্ব এবং পশ্চিম প্রান্তে জীবজন্তু পোষ মানানোর অত্যন্ত প্রাচীন ইতিহাস থাকলেও মধ্যাঞ্চলে এমনটা ঘটেনি। প্রাগৈতিহাসিক যুগের একটা পর্যায়ে পূর্বাঞ্চলীয় কুকুরগুলো অভিবাসী মানুষের সঙ্গে পশ্চিমে ছড়িয়ে পড়েছিল। এ কারণেই আধুনিক কুকুরের মধ্যে এশীয় উত্তরাধিকারের চিহ্ন স্পষ্ট।
সূত্রঃ ইএনএন ডটকম, প্রথম আলো