ধূলায় বাড়ছে রোগব্যাধি ও সাংসারিক খরচ; নাগরিক সমাজের উদ্বেগ
ধূলা দূষণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষতিকারক প্রভাবের শেষ নেই। জীবানুমিশ্রিত ধূলায় শ্বাসকষ্ট, এলার্জি, চর্মরোগসহ নানা রোগব্যাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া ধূলা দূষণের কারণে কাপড়-চোপড়সহ ঘরের আসবাবপত্র দ্রুত ময়লা হয়ে যায় যা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রতিদিনের সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নষ্ট হয়। এতে পানির অপচয় হয় অনেক বেশি। কাপড়-চোপড় ইস্ত্রি করতে বিদ্যুতেরও অপচয় হয়। স্বাস্থ্যখাত ব্যতিরেকেই এ সমস্ত কারণে মধ্যবিত্ত একটি পরিবারে প্রতি মাসে প্রায় ৪ থেকে ১০ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয় এই ধূলা দূষণের কারণে। পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় অবিলম্বে ধূলা দূষণ নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার এর যথাযথ ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী।
আজ ০৬ ডিসেম্বর ২০১৪, শনিবার, সকাল ১১ টায়, শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বিসিএইচআরডি, দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যাণ সংসদ ও অনির্বাণ সমাজ কল্যাণ সংস্থার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে উক্ত দাবী জানানো হয়।
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবার সমন্বয়কারী আতিক মোরশেদ, পবার সহ-সম্পাদক জনাব আমির হাসান, স্থপতি শাহীন আজিজ, মোঃ সেলিম পবার নির্বাহী সদস্য মনজুর হাসান দিলু, মো: নজরুল ইসলাম, পদ্মাবতী দেবী, বিসিএইচআরডি এর নির্বাহী পরিচালক ও পবার সহ-সম্পাদক জনাব মাহবুবুল হক, দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি জনাব মোঃ মুসা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, নানা ধরণের দূষণে ঢাকা মহানগরীসহ সারাদেশের পরিবেশ আজ সংকটাপন্ন। বিভিন্ন ধরণের দূষণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে – বায়ু দূষণ বিশেষ করে ধূলা দূষণ। বর্তমানে ঢাকা মহানগরীতে ধূলা দূষণ প্রকট আকার ধারণ করেছে । ধূলাবালি পেশাক পরিচ্ছদ, আসবাবপত্র, ঘরবাড়ি, অফিস-আদালত ও মূল্যবান প্রতœতাত্বিক নিদর্শনসহ মানব জীবনের অতি গুরুত্বপর্ণ সামগ্রী ও মানুষের জীবনকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে চলেছে। ধূলা দূষণের ফলে পেশাক পরিচ্ছদ ও অন্যান্য কাপড়চোপড় বেশি নোংরা হচ্ছে এবং এগুলো পরিস্কার করতে প্রতিদিনকার মূল্যবান সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অপচয় করতে হচ্ছে। এছাড়াও অধিক শ্রম ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে এবং এগুলোর মেয়াদও কমে যাচ্ছে। ধূলা দূষণের ফলে শারিরীক পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্য রক্ষার জন্যও অধিক সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে।
আবু নাসের খান বলেন, জামা-কাপড় ধোঁয়া, বাসাবাড়ি ধোঁয়া-মোছার জন্য অতিরিক্ত পানি ও ডিটারজেন্ট ব্যবহার করতে হয়। কাপড়-চোপড় ইস্ত্রি করতেও অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হয়। অতিরিক্ত পানি, বিদ্যুৎ ও ডিটারজেন ব্যবহারের ফলে পারিবারিকভাবে আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি মধ্যবিত্ত পরিবারকে ধূলা দূষণের কারণে প্রতি মাসে অতিরিক্ত ৪,০০০ থেকে ১০,০০০ ব্যয় করতে হচ্ছে।
ধূলার কারণে দোকানের জিনিসপত্র, কম্পিউটারসহ নানা ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। ধূলা দূষণে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ধূলাজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ, বিশেষ করে শীত মৌসুমে। রাস্তার পাশে দোকানের খাবার প্রতিনিয়ত ধূলায় বিষাক্ত হচেছ। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে রোগ জীবানু মিশ্রিত ধূলা ফুসফুসে প্রবেশ করে ফুসফুস ক্যান্সার, ব্রংকাইটিস, শ্বাসজনিত কষ্ট, হাঁপানী ও যক্ষ্মাসহ নানা জটিল রোগের সৃষ্টি করছে। শিশু, বৃদ্ধ ও অশুস্থ ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় ধূলা দূষণের ফলে তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ধূলা দূষণের প্রতিরোধ ব্যবস্থায়- যথাযথ আইন প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি বসতবাড়ি, দোকানপাট, কারখানার সামনের রাস্তা বা জায়গা বাধ্যতামূলকভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার বিধান আইনে যুক্ত করা যেতে পারে। পরিসেবার সংযোগ মেরামত, বৃদ্ধি ও নতুন সংযোগ স্থাপনের সময় রাস্তা খননে সৃষ্ট মাটি সম্পূর্ণরূপে সরিয়ে ফেলতে হবে। দালান-কোঠা বা অন্য কোন অবকাঠামো তৈরীর সময় নির্মান সামগ্রী রাস্তার উপর বা রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় রাখা নিষিদ্ধ করতে হবে। এমন কোন সামগ্রী যা থেকে ধূলা সৃষ্টি হতে পারে তা বহনের সময় সঠিক আচ্ছাদন ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হবে। রাস্তার পাশের ড্রেন পরিস্কার করার সময় ড্রেন থেকে তোলা আবর্জনা রাস্তার পাশে জমিয়ে রাখা যাবে না। সকল আবর্জনা যথাযথ স্থানে ফেলতে হবে। সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক আবর্জনা সংগ্রহ ও পরিবহনের সময় যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে আবর্জনা ছড়িয়ে না পড়ে। ফুটপাত সমূহ নিয়মিত পরিস্কার ও মেরামত করতে হবে। ঢাকার বাইরে থেকে ঢাকায় প্রবেশ করা যানবাহনগুলোর যথাযথভাবে পরিস্কার করতে হবে। এছাড়াও যে সকল কারণে ধূলা দূষণ হতে পারে তা রোধ করার ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। পাশাপাশি ধূলা দূষণ ও এর ক্ষতিকর প্রভাব বিষয়ে নাগরিক সচেতনতা তৈরীর জন্য সরকার, বেসরকারী সংগঠন ও সচেতন মহলকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে।