ইকো ফেস্টিভ্যাল ২০১৭; শহুরে মায়ায় এক টুকরো বাংলাদেশ প্রদর্শনী !
ফারজানা হালিম নির্জন
‘ঢাকা’ নামটায় শহর এর ছায়া লেপ্টে গেলেও, আমরা কেউ কেউ কিন্তু ঢের উপলব্ধি করতে পারি, কাঠখোট্টা শহর শব্দটার গভীরে লুকিয়ে থাকে মায়া। অফুরন্ত প্রাণের উচ্ছ্বাস নিয়ে আমাদের প্রাণের শহর ঢাকা নিয়মিত আমাদের মনুষ্যত্ব কে জাগিয়ে রাখতে ব্যাস্ত হয়ে থাকে। এখানেই কোথাও অলি-গলির আড্ডায় রাজনীতি নিয়ে চা’য়ের কাপে ঝড় উঠে, আবার একই সময় হয়তো শিল্পকলার কঠিন কোনো মাধ্যম নিয়ে কোথাও আড্ডা মাতিয়ে রাখছে কেউ। এখানে শীত আসুক বা না আসুক, শহরের কোনো ফুটপাথের ধারে সন্তর্পণে ঠিকই পৌষের শেষে রক্ত-পলাশ লাজ-লাজ ভঙ্গিতে সমস্ত পাপড়ি মেলে দিচ্ছে! এইতো আমাদের নানান সমস্যায় দোষী শহর ঢাকা ! কিন্তু খেয়াল করে দেখুন, এখানে কবির কবিতা লেখার খাতা কিন্তু খালি পড়ে নেই, ফাঁকা নেই চিত্রশিল্পীর ক্যানভাসও। উঠতি আলোকচিত্রীরা ঠিকই দৌঁড়ে বেড়াচ্ছে ক্যামেরা নিয়ে দেশের এ-প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত! শিল্পের কোনো মাধ্যমই থেমে নেই কোথাও। শুধু ঘুম ভেঙ্গে চোখ কচলে তাকালেই হয়তো দেখতে পাওয়া যাবে, এই কাঠখোট্টা শহরটায় প্রতিদিন কত-শত প্রাণের খবর বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে…
একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর খবর দিচ্ছি। প্রদর্শনীটির বিষয়বস্তু আমাদের বাংলাদেশ আর এর প্রকৃতি। প্রকৃতির খুঁটিনাটি ছন্দময় আনন্দের কথা যেমন থাকছে, তেমনি থাকছে বিভিন্ন কারণে এর বেহাল দুর্দশার কথা। আর এ সবই থাকছে ছবির ভাষায়। জাদুর শহর ঢাকার জাতীয় জাদুঘরেই এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। প্রদর্শনী চলবে ৭ জানুয়ারি, ২০১৬ থেকে ৯ জানুয়ারি, ২০১৬ তারিখ পর্যন্ত। এই ৩ দিন এখানে চলবে শহুরে মায়ায় এক টুকরো বাংলাদেশের ছবি-কথন। আর ‘ইকো ফেস্টিভ্যাল ২০১৭’ নামের এই আয়োজনটির আয়োজক, সবুজ পৃথিবীর স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশি তারুণ্যের সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্টমুভ ডট কম’। আর এর সাথে সার্বিক সহযোগিতায় আছে বাংলাদেশ বন বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানারস এবং আলোকচিত্র সংস্থা ‘ফটোগ্রাফি ইজ মাই হবি’! শীতের এই উষ্ণ আয়োজনে আপনিও সাদরে আমন্ত্রিত।
আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আদ্যোপান্ত দেখুন নিচে-
৭ জানুয়ারি, অর্থাৎ আলোকচিত্র প্রদর্শনীর প্রথম দিন মূল অনুষ্ঠান। একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে, যা সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সেমিনারটি শুরু হবে সকাল ১০:৩০ মিনিটে এবং চলবে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত। এই আয়োজনের প্রধান অতিথি হয়ে আসছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য ড. এস. এম. ইমামুল হক স্যার। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফজলুল লতিফ চৌধুরী, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ এর কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ বন বিভাগের বন সংরক্ষণ কমিটি, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানারস-এর পক্ষ থেকে মো. রাশিদুল হাসান এবং দৈনিক ডেইলী স্টার পত্রিকার কলামিস্ট ইহতিশাম কবীর।
এই সেমিনারের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে বাংলাদেশে বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. এ. এন. এম. আমিনুর রাহমান স্যারের একটি লেকচার সেশন। এটি শুরু হবে সকাল ১১:৩০ মিনিটে।
৭ জানুয়ারি ছাড়াও প্রদর্শনীটি ৮ এবং ৯ জানুয়ারি সকাল ৯:৩০ থেকে বিকাল ৪:৩০ টা পর্যন্ত সকলের জন্য খোলা থাকবে।
আলোকচিত্রী পরিচয় যারা নিজেকে পরিচিত করতে ভালবাসেন, তাঁদের অংশগ্রহণেই এই পরিবেশ-প্রকৃতির উপর আলোকচিত্র প্রদর্শনীটি আয়োজন করা হয়েছে। তাঁদেরকে উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে অনেকটা প্রতিযোগিতার মত এটি সাজানো হয়েছে। এখানে ৩ জন কে পুরষ্কৃত করা হবে এবং অঙ্গশগ্রহণকারী সকলের জন্যই থাকবে কোনো না কোনো উপহার। এই বাছাইপর্বের জন্য আয়োজনের পেছনে সময় দিয়েছেন একটি বিশেষ বিচারক কমিটি।
প্রদর্শনী ও সেমিনারের আদ্যোপান্ত নিশ্চয়ই কিছুটা আন্দাজ করা যাচ্ছে। তবে আর দেরি কেন! হাতের কাজ গুছিয়ে নিয়ে শীত-শীত ছুটির সকালটায় গায়ে চাদর জড়িয়ে চলে আসুন এই আনন্দযজ্ঞে। শহুরে সংস্কৃতির অংশ হয়ে নতুনভাবে ভাববার একটি দরজায় প্রবেশ করুন। এই প্রকৃতি, এই পরিবেশ, এই বাংলাদেশ, সবই তো আমাদের। খানিকটা জেনে খানিকটা জানাই, আর সচেতন হই, এইতো আত্মার শান্তি। শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর আপনার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে…
ইকো ফেস্টিভ্যাল-এ যাওয়ার আগে ঘুরে দেখতে পারেন ফেসবুক পেইজটি, এখানে!