সকলের ঈদ,আমাদের খুশি !
সিফাত তাহজিবা
‘রমজানের ঐ রোজার শেষে
এলো খুশির ঈদ’
কাজী নজরুলের এই গানের সুরের সাথে ঈদের একধরণের খুশি যেমন যুগ যুগ ধরে ঘিরে আছে তেমনি ঈদের কেনাকাটা ছাড়া ঈদটাই যেনো অপূর্ণ থেকে যায়। ঈদের কেনাকাটা ধুমধামের সাথেই হচ্ছে, রাস্তায় বের হলে তা নগরবাসীর চোখে পড়বেই। বিপণিবিতান গুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভীড়,সাথে অসহনীয় যানজটতো আছেই।
আমাদের কারো কারো ২-৩ টা করে ঈদের জামা থাকে। কিন্তু আমাদের এই ঢাকা শহরেই অনেক সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা আছে যাদের কাছে ঈদের দিন অন্য আর দশটা দিনের মতই কাটে। নতুন জামা তাদের কাছে স্বপ্নের মত। কে দিবে ঈদে তাদের একটা জামা?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের ক’জন উদ্যমী ছেলে-মেয়ে এই সুবিধাবঞ্চিত বাচ্চাগুলোর স্বপ্ন পূরণ করলেন গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের প্রাঙ্গণে। দুপুর ২টায় বাচ্চাদের কিচিরমিচিরে মুখরিত হয়ে উঠে সায়েন্স লাইব্রেরির প্রাঙ্গন! সবার হাতে এক টুকরো গোলাপী কাগজ, হ্যা এটিই তাদের স্বপ্ন পূরণের টিকিট!
৪র্থ বর্ষের সাদিয়া,নাদিরা আর ইমরানকে দেখা গেল বাচ্চাদের সারি করে লাইন করাতে ব্যস্ত সাথে একই বিভাগের অনুজরাতো আছেই -নাহিদ, সোমা, ঈমতিয়াজ আর মেহেদীকে ছোটাছুটি করতে দেখা গেলো নতুন জামা গুলো গুছিয়ে টেবিলে রাখছে! সবার চোখেমুখে এক ধরনের পরিতৃপ্তি। সাদিয়ার সাথে কথা বলতেই প্রথমে বললেন, ‘ সংগীতা মিস এবং মাহমুদা মিস আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন। ফেসবুকে একটি ইভেন্ট পেজ ‘সকলের ঈদ,আমাদের খুশি’ খোলা হল সেখান থেকে অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের ক’জন শ্রদ্ধেয় শিক্ষিক-শিক্ষিকা, প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে বিভাগের বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগ এমনকি দেশের বাইরে থেকেও অনেকে যোগাযোগ করে অনুদান পাঠিয়েছেন।’ বিভাগের অধ্যাপক ড মাহমুদা ইয়াসমিন এবং ড সংগীতা আহমেদের উপস্থিতিতে সবার মধ্যে উৎসাহ যেনো আরও বেড়ে গেলো।
‘হিউম্যান সেইফ ফাউন্ডেশন’ পরিচালিত ওসমানী উদ্যানের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুলের ৩৫জন শিশুকে দেওয়া হল ঈদের নতুন জামা, দুপুরের খাবার আর সবাইকে একটা করে কোণ আইসক্রীম!
নতুন জামা পাওয়ার খুশিতে দু’বান্ধবী আফসানা আর মুক্তি তখনই নতুন জামা পরে ঘুরে ঘুরে সবাইকে দেখছে আর আইসক্রীম নিয়ে ছুটে আসল আমাদের কাছে আর জিজ্ঞেস করল, ‘আপু রোজা রাকসেন?’ হ্যা বলতেই লজ্জা পেয়ে গেল আর একটু দূরে গিয়ে আইসক্রীম খেতে লাগল।
সবাই খুব খুশি কেউ নতুন জামা গায়ে লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তো কেউ জীবনে প্রথমবার কোণ আইসক্রীম হাতে পেয়ে কিভাবে খুলবে আর কিভাবে খাবে সেই প্রচেষ্টায় ব্যস্ত। সবারই এক কথা ‘সব কডি জামা সোন্দর, আপুদের চয়েস সোন্দর’! একজনকে ক্যামেরার আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেল। ডেকে কথা বলতেই ফটোগ্রাফার লিসানকে বলে বসল,’ আমি বড় হইয়ে হুন্ডা চালামু আর আপনের মতন ছবি তুলব’।
ওদের চাওয়াটা কি বেশি? স্বপ্ন দেখতে কোন মানা নেই। যাদের মনে এত স্বপ্ন উকিঝুঁকি দেয় তাদের জন্য অনুজীব বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীদের এমন একটি উদ্যোগ সফল হলো। ওরা এখানেই থেমে নেই, অনুদানের বাকি টাকাগুলো তাঁরা ঢাকা মেডিকেলের কয়েকজন ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা্র জন্য আজ সংগীতা মিসের তত্ত্বাবধানে দিয়ে দেবেন।
ঈদের আনন্দ সবার জন্য,সবার মাঝে ঈদের খুশি বিলিয়ে দেওয়ার মধ্যে অন্য রকম আনন্দ পাওয়া যায়,যেটা সাদিয়া, নাদিরা, ইমরান, মেহেদীর চোখেমুখে ভেসে বেড়াচ্ছিল।