যে শিকারী দেখেও দেখেনা…
ফারজানা হালিম নির্জন
শিকারী-দের চোখ অন্য আট-দশ জন সাধারণ মানুষের মত হলেও,তাদের হৃদয়ের চোখ হয়তো খুলে দেখে না কখনো। তারা দেখেও দেখেনা অনেক কিছু। সারাবিশ্বে জীব-বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য এতো আয়োজন চলছে,অথচ পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ঠিকই শিকারীদের শিকারে পরিণত হচ্ছে অসহায় প্রাণিরা। আইনের বিধি-নিষেধ তুঙ্গে উঠিয়ে নিয়মিতভাবেই পাশবিক কাজ করে চলেছে সেইসব “দেখেও না দেখা” শিকারীরা। বর্তমান পৃথিবীর আকারে ও ওজনে সবচেয়ে বড় স্তন্যপায়ী প্রাণিটিও রেহাই পাচ্ছেনা এই করুণ মৃত্যুর হাত থেকে। সম্প্রতি একটি জরিপে দেখা গেছে,শিকারীদের বর্বরতার শিকার হয়ে গত ৩ বছরে প্রায় ১ লক্ষ আফ্রিকান হাতি মারা গেছে; এবং সম্পূর্ণ অবৈধভাবেই।
কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির, জর্জ উইটেমায়ার এর একটি গবেষনাপত্র বলছে যে, আফ্রিকার তিন-চতুর্থাংশ স্থানীয় হাতি ইতিমধ্যে হারিয়ে গেছে। গবেষক থেকে শুরু করে রক্ষণশীলতাবাদী পর্যন্ত সকলেই আশা করছেন, এই পর্যায়ে এসে অতি শীঘ্রয়ই নীতি-নির্ধারক ব্যাক্তিগণ শিকারীদের এসব অবৈধ কাজকর্মের প্রতি পদক্ষেপ নিবেন। তা না হলে আফ্রিকায় হাতি সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাটাই যেন একটা হুমকীর মুখে পড়তে যাচ্ছে ! শিকারীরা সাধারণত স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের মাধ্যমে হাতি মেরে থাকে। তবে কিছু আইকনিক হাতির জন্য,তারা মূলত বিষ মেশানো বিশেষ ধরণের এক তীর ব্যাবহার করে অতিকায় এই প্রাণিটির প্রাণ খুব সহজেই কেড়ে নেয়। শরীরের কোনো এক জায়গায় বিদ্ধ হলেই কাজ শেষ! সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে বিষ,পৃথিবীর নির্মমতার হাতে নিজের প্রাণ সঁপে দিয়ে ধীরে ধীরে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে একটি অতিকায় প্রানহীন দেহ।
গেলো ফেব্রুয়ারীতেই, টর্ন ইয়ার নামক একটি সুপরিচিত কেনিয়ান হাতিকে বিদায় নিতে হয়েছে বিষধর তীরের আঘাতে। তিন মাস যেতে না যেতেই, একই প্রক্রিয়ায় সাটাও নামের কেনিয়ার আরেকটি অতি পরিচিত ও পছন্দনীয় হাতি কে বিদায় নিতে হয় পৃথিবী থেকে। শিকারীরা তারপর এই সাটাও হাতির শরীর থেকে মুখ কেটে আলাদা করে,শুধুমাত্র তার বিশাল আকৃতির দাঁতগুলো পাওয়ার লোভে! প্রশ্ন কি আসছেনা, নির্মমতা আর বর্বরতা কতদূর এগুলে পৃথিবী সজাগ হবে?

আফ্রিকান হাতিরা শিকারীদের কবলে পড়ে একের পর এক বিদায় নিচ্ছে, কিন্তু প্রকৃতিতে রেখে যাচ্ছে এক বিশাল শূণ্যতা। যেমন,আফ্রিকান হাতিদের জীনগত বৈচিত্র্যতার সম্ভাবনা কমে আসছে। তবে এই ক্ষতিকে পেছনে রেখেও আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে আছে অন্য এক বিশাল ক্ষতি। বাস্তুসংস্থান! অনেকটা হাতির উপরই নির্ভর করে বেঁচে আছে আফ্রিকার আরো অনেক প্রাণি। হাতি কে তাই মাঝে মাঝে বলা হয়ে থাকে “মেগা গার্ডেনারস অব দ্যা ফরেস্ট”! অথচ গত এক যুগ ধরে মধ্য আফ্রিকা হারিয়ে ফেলেছে তাদের ৬৪% হাতি। লড়াকু জীবন নিয়ে প্রাণিদের বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টাও থামিয়ে দিচ্ছে অনেক জীবন।
বন-জঙ্গলের পরিমাণ কমে আসবে,বাড়বে যাদুঘরের সংখ্যা! সত্যিইতো সেদিকে এগুচ্ছে আমাদের নীল-সবুজ পৃথিবী একটু একটু করে। আশংকা হয়, পৃথিবীর ভবিষৎ কোন কালো মেঘে ঢাকা পড়ছেনা তো!মেঘের আড়ালে সূর্্য হাসে,মিষ্টি রুপোলি আলোয় চারিদিক আলোকিত করে তুলতে পারে নিমিষেই। এই স্বপ্ন চিকচিক করে মনের মাঝে উঁকি দেয় হঠাৎ হঠাৎ। সবাই একসাথে সচেতন হলেই হয়তো সে স্বপ্ন দেখা ফলপ্রসূ হবে,তা কি আর আমাদের জানার বাকি! সেই সাথে,শিকারীদের মনের চোখটাও কিন্তু খুলে দিতে হবে খুব তাড়াতাড়ি…