পরিবেশের বন্ধু প্রাকৃতিক তন্তু !
ফারিহা দিলসাদ
দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য একটি অনুষঙ্গ হল কাপড়। আমরা যেসব পোশাক পরিধান করি এবং নানান কাজে প্রতিদিন যেসব কাপড় ব্যাবহার করে থাকি সেগুলো যদি পরিবেশ-বান্ধব তন্তু থেকে তৈরি না হয় তাহলে আমাদের শরীর এবং পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে। তাই আমরা পরিবেশ-বান্ধব কাপড় তৈরি করার জন্য কিছু প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহার করতে পারি। আসুন দেখে নেয়া যাক এরকম কিছু তন্তু সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য!
বাঁশ:
বাঁশ সেলুলোজ জাতীয় তন্তু যা বাঁশ গাছের মজ্জা থেকে প্রস্তুত করা হয়। এটি শক্ত, কষ্টসহিষ্ণু, টেকসই এবং নবায়নযোগ্য যা ‘গ্রিন ফাইবার’ হিসেবে বহুল প্রচলিত। কীটনাশক এবং বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে বাঁশ গাছ থেকে তন্তু তৈরি করা যায়।
বাঁশ থেকে তৈরি কাপড়ের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী গুনাগুণ থাকে এবং এরা জীবাণুবিয়োজ্যও হয়ে থাকে যা কাপড়ের উন্নতমান এর সূচক।
জৈব তুলা:
প্রচলিত পদ্ধতিতে তুলা উৎপাদন করতে গেলে প্রায় ২৫% কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, তবে অর্গানিক ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন (ওটিএ) এর মতে, জৈব তুলার চাষ করা হয় প্রাকৃতিকভাবে, কোন ধরনের কীটনাশক বা সার ছাড়াই!
জৈব তুলা চাষের সময় বিভিন্ন পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়, যেখানে কোনো প্রকার বিষাক্ত পদার্থ কিংবা কীটনাশকের ব্যবহার নেই। ধারণা করা হয়, প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ১২০.৫ মিলিয়ন বেল তুলা উৎপাদন করা হয়।
বিভিন্ন ধরনের পোশাক যেমন শাড়ি, শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট, তোয়ালে, গামছা, মোজা, রুমাল ইত্যাদি তৈরিতে এর জুড়ি নেই। তুলার বহুল ব্যবহারের কারণে একে ‘ফ্যাব্রিক অব লাইফ’ বলা হয়।
শণ :
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর চাষ হয়। শণ এর প্রধান উৎপাদনকারী দেশ হল কানাডা, চীন এবং ফ্রান্স। শণ চাষ করতে কোন রকমের সার বা কীটনাশক প্রয়োজন হয়না কারন এরা নিজেরাই কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে থাকে।
শণ গাছ খুব দ্রুত বড় হয় এবং শক্ত বাস্ট ফাইবার তৈরি করে। কাপড়, ফাইবার গ্লাস, কাজগ এবং দড়ি তৈরিতে এটি ব্যবহার করা যায়।
পুনর্ব্যবহৃত পলিএস্টার :
পরিত্যাক্ত পলিএস্টার এর কাপড়, সোডা বোতল ব্যবহার করে এই পলিএস্টার তৈরি করা হয় এবং এর ফলে এতে ৭৫% পরিমাণ কার্বন কমে যায়। পুনর্ব্যবহৃত পলিএস্টারে বিষাক্ত অ্যান্টিমনি থাকতে পারে তবে বিভিন্ন কোম্পানি এর পরিমাণ কমাতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ‘প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল’ হিসেবে এর ব্যবহার রয়েছে।
টেনসেল :
সেলুলোজ জাতীয় তন্তু যা কাঠের মজ্জা থেকে তৈরি করা হয়। লায়োসেল এর বাণিজ্যিক নাম টেনসেল। এটি নরম হলেও টেকসই প্রকৃতির এবং এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রস্তুত প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে থাকে। টেনসেল জীবাণুবিয়োজ্য এবং পরিবেশ বান্ধব। কম্বল কিংবা এ জাতীয় পণ্য তৈরিতে এটি ব্যাবহার করা হয়।
উল :
উল খুবই আরামদায়ক এবং বহুমুখী একটি তন্তু। শীতকালে গরমকাপড় তৈরিতে এর ব্যবহার রয়েছে। উল ইলাস্টিক প্রকৃতির এবং পানিশোষণকারী, বিভিন্ন ধরণের বুননের মাধ্যমে উল দিয়ে নানা রঙের এবং নানা ঢঙের পোশাক তৈরি করা যায়।
উল এর ওজনের প্রায় ৩০% পানি শোষণ করতে পারে, সহজে কুঁচকে যায়না এবং টানার পরও আগের আকৃতি ধরে রাখতে পারে। উট, খরগোশ, ছাগল বা ভেড়ার চুল এবং পশম থেকে উল প্রুস্তুত করা হয়। উল তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় তবে বেশিক্ষণ সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে থাকলে রং নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
সয় ক্যাশমেয়ার :
খাবার তৈরির সময় যে সয় অপচয় হয় এবং সয়াবিন এর খোসা থেকে এই তন্তু তৈরি করা হয়। এগুলো নরম ধরণের এবং এর তৈরি কাপড় খুব যত্ন সহকারে ব্যবহার করতে হয়।
খুব আরামদায়ক হওয়ায় এই তন্তুর তৈরি কাপড়ের দাম বেশি হয়ে থাকে। এর সুবিধা হল রং খুব সহজে শোষণ করতে পারে, তাই পরিমাণে কম লাগে।
লেখক,
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়