পরিবেশ বিপর্যয়ে আশংকাজনক হারে বাড়ছে ক্যান্সার

আজ ০৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। বর্তমানে সারা বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ হিসেবে ক্যান্সারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পরিবেশ বিপর্যয়ে সৃষ্ট বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক পরিবর্তন ক্যান্সারের প্রকোপ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা আশংকাজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা জনস্বাস্থ্য, চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ দেশের সার্বিক অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। স্বাস্থ্যবান জাতি গঠনে সকল পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ড বন্ধে অনতিবিলম্বে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণসহ উন্নয়ন ভাবনায় পরিবেশকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর উদ্যোগে ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, বিকাল ৪টায় পবা কার্যালয়ে “পরিবেশ বিপর্যয় এবং ক্যান্সার” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।

বক্তারা বলেন, প্রতিবছর বিশ্বে ১২ কোটি মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ক্যান্সার রোধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিতে পারলে ২০১৫ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে মারা যাবে আট কোটি মানুষ। বর্তমানে বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা ২১ লাখ। প্রতিবছর এখানে নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে আড়াই লাখের মতো মানুষ। বছরে প্রতি লাখে মারা যাচ্ছে ২৬০ জন। কৃষিতে অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশকের ব্যবহার, খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিনসহ বিষাক্ত রাসায়নিকের মিশ্রণ, শব্দ দূষণ, ধূলা দূষণ, পানি ও নানাবিধ দূষণে পরিবেশ বিপর্যয়ের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অপর্যাপ্ত খোলা জায়গা, খেলাধুলা ও বিনোদন সুবিধার অভাবে শিশুরা নানাবিধ অসুখ-বিসুখ নিয়ে বেড়ে উঠছে। সেই সাথে পরিবেশবান্ধব যাতায়াত ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হওয়ায় এবং গাড়ির সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধিতে বায়ু দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে আশংকাজনকহারে। যার মারাত্মক প্রভাব পড়ছে জাতীয় স্বাস্থ্যসহ অর্থনীতিতেও। এমতাবস্থায় জনস্বাস্থ্যসহ সার্বিক উন্নয়নে পরিবেশ বিপর্যয় রোধে সকল কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।IMG_2446

বক্তারা বলেন-ক্যান্সার শব্দটা যত না মারাত্মক, তার থেকে বেশি আতঙ্কের। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয়ে সৃষ্ট বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক পরিবর্তন সেই সঙ্গে মনুষ্যসৃষ্ট রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে জাতীয় জীবনে ফরমালিনের অনিয়ন্ত্রিত বহুবিধ ব্যবহারে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধুমাত্র ঢাকা মেডিকেলেই ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, দেশের সামগ্রিক অবস্থা আরও ভয়াবহ। সংগত কারণেই এই সংকট উত্তরণে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর, এনজিও, ব্যক্তিসহ সকলের সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন।

পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা: মোজাহেরুল হকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- ইউজিসি প্রফেসর ডা: রশিদ ই মাহবুব, পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এম এম সফিউল্লাহ, বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সহ-সভাপতি মাজেদা শওকত আলী, পবার স্বাস্থ্য বিষয়ক টিমের সদস্য সচিব ডা: খালেদ শওকত আলী, বিএসএমএমইউ এর দন্ত বিভাগের চেয়ারম্যান ডা: কাজী বিল্লুর রহমান, অতীশ দীপংকর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জেবুন্নাহার, বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্য আন্দোলনের সদস্য সচিব ডা: লেলিন চৌধুরী, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা: হাবীবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন প্রমুখ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics