গণ ও ব্যক্তিগত পরিবহন নিয়ন্ত্রণে জাতীয় সমন্বিত নীতিমালা ২০১৩ বাস্তবায়নের দাবি

ঢাকায় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে প্রাইভেট কারের ব্যবহার যানজট, দূষণ, দূর্ঘটনা, অসুস্থতার অন্যতম কারণ। “জাতীয় সমন্বিত বহুমাধ্যম ভিত্তিক পরিবহন নীতিমালা, ২০১৩” অনুযায়ী প্রাইভেট কার নিরুৎসাহিত করার জন্য বাস সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সৃজনীশল উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা এবং বাসসমূহ পরিচ্ছন্ন, অধিকতর আরামপ্রদ, নির্ভরযোগ্য ও কারের একটি আকর্ষণীয় বিকল্প মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা অতি দ্রুততার সাথে বাস্তবায়ন জরুরী।

এ উপলক্ষে আজ সকাল ১১ টায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানার্স (বি.আই.পি) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর কৈবর্ত মিলনায়তনে অলোচনা সভায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক (প্রোগ্রাম এন্ড প্লানিং) সৈয়দ মাহবুবুল আলম, আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান, সভাপতি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানার্স (বি.আই.পি), পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, স্থপতি ইকবাল হাবিব, যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ  পরিবেশ আন্দোলন। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসী অফিসার মারুফ রহমান আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন নাসফ এর , হাফিজুর রহমান ময়না, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর ইবনুল সাঈদ রানা, এডঃ সুলতান মাহমুদ বান্না, মোঃ সেলিম, এ.কে.এম.সিরাজুল ইসলাম, মনজুর আহসান দিলু প্রমুখ। সভা উপস্থাপনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর সহকারী কর্মকর্তা আতিকুর রহমান।

মারুফ রহমান তার উপস্থাপনায় বলেন, ২টি প্রাইভেট কার একটি বাসের সমান জায়গা নেয়। প্রায়শই দেখা যায় প্রাইভেট গাড়িতে একজন যাত্রী চলাচল করে বা ফাঁকা থাকে। একটি বাসে একটি ট্রিপে রুটের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় ২০০ যাত্রী বহন করে। প্রাইভেট কার পার্কিং এর জন্যও ১৬০ বর্গফুট জায়গা নেয় এবং ৯০ ভাগ সময় পার্কিং অবস্থায় থাকে। তিনি বলেন, বিদ্যমান নীতিমালায় নগরের ব্যস্ততম ও যানজটপূর্ণ এলাকায় যান্ত্রিক যানবাহনের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা (যেমন মাশুল আদায়) করতে পারবে। যানজট হ্রাসে এর বাস্তবায়ন জরুরী।poba wbb bapa

সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, জ্বালানী সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সর্বপ্রথম ১৯৭৩ সালে বিশ্ব কারমুক্ত দিবস পালিত হয়। এ বছর চার হাজারের উপর বিভিন্ন শহরে দিবসটি একযোগে পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশেও ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশে পরিবেশাবদী সংগঠনসমূহ দিবসটি পালন করে আসছে। তিনি বলেন, বিদ্যমান নীতিমালায় এক পবিহন মাধ্যম হতে অন্য মাধ্যমে স্থানান্তরে যাত্রীগণ যাতে পায়ে হেঁটে এক মাধ্যম হতে অন্য মাধ্যমে আরোহনের সুযোগ পায় এ লক্ষ্যে ইন্টারচেইঞ্জসমূহ স্বল্প দূরত্বে নির্মাণ করার কথা রয়েছে, যা বাস্তবায়ন করতে হবে।

পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান বলেন, প্রাইভেট কারের কারণে আমরা একটা বিষয় উপলব্ধি করতে পেরেছি তা হলো যানজট। তিনি নীতিমালা অনুযায়ী পথচারীদের জন্য পায়ে হেঁটে চলার পরিবেশের মানোন্নয়ন, বিশেষত শিশু, মহিলা, বয়স্ক এবং শারীরিক বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের (চযুংরপধষষু ঈযধষষবহমবফ) ব্যবহার উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিকরার কথা বলেন।

আবু নাসের খান বলেন, ঢাকা মেট্রেপলিটন এলাকায় প্রাইভেট কারে মাত্র ৩.৮ শতাংশ চলাচল হয় কিন্তু সড়ক পথের প্রায় ৭০ভাগ স্থান দখল করে রাখছে। অথচ বাস, রিকশা, সাইকেল ও হেঁটে ৯৬.২ শতাংশ যাতায়াত হলেও মাত্র ৩০ভাগ সড়ক ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছে। যে মাধ্যমে যতটুকু যাতায়াত হয় সড়কে তাকে ততটুকু জায়গা দিতে হবে।

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, সারা বিশ্বে যখন প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে সেখানে আমরা চলছি উল্টো পথে। নগর পরিকল্পনা মানুষের জন্য হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে মানুষকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না। আমরা আমরা সকলেই বুঝতে পারছি প্রাইভেট কার আমাদের যানজট সৃষ্টিতে অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও আমরা এ বিষয়ে দৃঢ় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছি না। প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে পাবলিক বাসে সেবামান বাড়াতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics