
ঈদ মাংস সমাচার!!!!!
হুমায়রা হেদায়েত স্বর্ণা
এসে গেছে কুরবানির ঈদ। বাসা বাড়িতে গরু ছাগলে ভরে উঠেছে। সকল মুসলমানরা আল্লাহর প্রতি তাদের আত্মত্যাগ প্রদর্শনের জন্য কুরবানি করে থাকেন। কিন্তু ভোজন রসিকদের জন্য কুরবানির ঈদ মানেই ভুরি ভোজের মহোৎসব। ঈদ উপলক্ষে বানানো বাহারি খাবার-দাবার দেখে অনেকেই জিহ্বা সংবরণ করতে পারেন না। এটা পরবর্তীতে তাদের জন্য হিতে বিপরীত হয়। তেল-মসলা, চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে ঈদের পুরো আনন্দটাই কিন্তু মাটি। তাই সকলের প্রতি অনুরোধ একটু রয়ে সয়ে খাবেন।
Red Meat বা লাল মাংস সবারই প্রিয়। আমাদের দেহের জন্য এটি যেমন উপকারী কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর খারাপ দিকও আমরা দেখতে পাই। তাই আপনাদের সুবিধের জন্য এর কিছু সুবিধা-অসুবিধার কথা বলা হল। হয়তবা কাজে লেগেও যেতে পারে।
মাংসের ভালো দিক:
- মাংস প্রাণীজ প্রোটিন বা আমিষ। খাদ্য মূল্যের দিক থেকে উদ্ভিদ প্রোটিনের তুলনায় উন্নতর। মাংস সুস্বাদুও বটে। এতে সমস্ত এমাইনো এসিড বিদ্যমান।
- গোশত লৌহ, ফসফরাস, জিঙ্ক, ভিটামিন বি-১ ও ভিটামিন বি-১২ এর ভালো উৎস। খাসির গোশতে এসব ভিটামিন ও খনিজ লবণের পরিমাণ অন্যান্য গোশতের চেয়ে বেশি থাকে।
- কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকলেও গরু ও খাসীর কলিজায় লৌহের পরিমাণও বেশি থাকে। এছাড়া মগজে কোলেস্টেরলের পরিমাণ থাকে ১০০%।
- দেহে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণের জন্য এবং কৃশকায় লোকদের ওজন বাড়ানোর জন্য মাংস প্রয়োজন।
- দেহের ক্ষত, পোড়া ঘা সারানোর জন্য জিঙ্ক প্রয়োজন। এই জিঙ্ক পাওয়া যাবে মাংস থেকে। এই কারণে নিরামিষ ভোগীদের খাবারে জিঙ্কের অভাব হয়ে থাকে। আবার খেলোয়াড়দের খেলাধূলা করার সময় প্রচুর ঘাম হয়। ফলে শরীর থেকে বেশ জিঙ্ক বের হয়ে যায়। এ কারণে তাদের খাবারে মাংসের পরিমাণ বাড়ালে এর অভাব অনেকটা পূরণ হয়।
মাংসের মন্দ দিক
- মাংসে অবস্থানকারী রোগজীবানু দেহে বিষ উৎপন্ন করে। যা খাওয়ার ফলে রোগের সৃষ্টি হয়। এর জন্য প্রয়োজন রোগ জীবানুমুক্ত মাংস খাওয়া। রোগ জীবানু দ্বারা মাংস বিষাক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো রোগাক্রান্ত পশু জবাই করা। তাই কুরবানির পশু নির্বাচনের সময় এ দিকটি অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। আবার সংরক্ষণের অজ্ঞতাও মাংসকে দূষিত করে। যদি রান্না করা মাংস সংরক্ষণ করতে ইচ্ছা থাকে তাহলে তাড়াতাড়ি ঠান্ডা করে ফ্রিজে রেখে দেয়াই উত্তম, কারণ মাংসের মধ্যে সহজেই ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে পারে।
- টিনিয়া সেলিনাস নামক প্যারাসাইট রেড মিটে থাকে। এটা দেহে বিশেষ এক ধরণের টিবির জন্ম দেয়। এ জাতীয় জীবানু অন্ত্র, পাকস্থলী, যকৃত প্রভৃতি জায়গায় প্রবেশ করে আমাদের অসুস্থ করে তোলে। অধিক পরিমাণ অর্ধসিদ্ধ মাংসই এ ধরণের রোগের বিস্তার ঘটায়। মাংসে ট্রাইসেরাইড, কোলেস্টেরল ও পিউরিনের পরিমাণ বেশি থাকে বলে হূদরোগ, বাত, উচ্চ রক্তচাপ এর রোগীদের কম খাওয়া বা পরিহার করা উচিত।
- আবার লিভার, গলব্লাডার ও প্যানক্রিয়াসের অসুখে প্রাণীজ চর্বি বাদ দেয়াই ভালো। তাই মাংসের সংরক্ষণের সময় মনে রাখতে হবে যাতে এর স্বাভাকি স্বাদ ও গন্ধ বজায় থাকে। টুকরা বড় করলে খাদ্যমূল্যের অপচয় কম হয়। তাপে থাকমিন নষ্ট হয় ৩০% আবার রাইয়োফ্লভিন নষ্ট হয় ২০%।
- অস্বাস্থ্যকর উপায়ে রান্না করা মাংস থেকে ফিতাকৃমি হয়। এর ফলে পেট ব্যথা, খিঁচুনী, মাথা ধরা, পেট খারাপ ও জ্বর হতে পারে।
মাংস খাওয়ার সময় যেসব বিষয় মাথা রাখা উচিত-
- যাদের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি, উচ্চ রক্তচাপ কিংবা হৃদরোগ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে একটু বেশি সতর্ক হতে হবে। তা ছাড়া মাংস থেকে চর্বি বাদ দেয়ার কৌশলকেও কাজে লাগাতে হবে। মাংস কাটার সময়েই কেটে কেটে চর্বির অংশ বাদ দেয়া যেতে পারে। রান্নার আগে গোশত ভালো করে আগুনে ঝলসে নিলেও খানিকটা চর্বি কমে।
- কুরবানির মাংস খাওয়ার সময় প্রচুর পরিমাণ সালাদ ক্ষেতে হবে। শসা, গাজর, টমেটোর সালাদ কিছুটা হলেও চর্বির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আপনাকে সহায়তা করবে।
নিজের স্বাস্থ্যের দিকে বিবেচনা করে আহার করুন। আমরা যতই ভোজনরসিক জাতি হই না কেন সচেতনতার সত্যি কোন বিকল্প নেই। সুতরাং স্বাস্থ্য সচেতনতাই পারে সুন্দর একটা জীবন উপহার দিতে। তাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকন। জীবনকে উপভোগ করুন।
ঈদ মুবারক।