খাদ্য নিরাপত্তায় পরিবেশবান্ধব কৃষিতে জোর দেয়ার আহবান
আজ ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উৎপাদনের সাথে সাথে খাদ্যের মান নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনার দাবী রাখে। কৃষি উৎপাদনের বর্তমান পদ্ধতিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার, কীটনাশক, মাটির গভীর থেকে টেনে তোলা পানি, জেনেটিক মডিফায়েড ফুড ইত্যাদি ভ’মির মান, ভ’মিজ জীবন, জলের মান ও জলজ জীবনে ব্যাপক নেতিবাচক পরিবর্তন করছে। খাদ্য নিরাপত্তা এবং সামাজিক সুরক্ষায় কৃষিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার ক্রমান্বয়ে কমিয়ে জৈব সার ও জৈব কীটনাশকভিত্তিক কৃষি গড়ে তোলতে জোর দিতে হবে। আজ ১৬ অক্টোবর পবা কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, পবার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা: লেলিন চৌধুরী, বারডেমের প্রধান নিউট্রিশনিস্ট শামছুন্নাহার নাহিদ, পবার সম্পাদক তারিক হাসান মিঠুল, সহ-সম্পাদক মো: নজরুল ইসলাম, গ্রীন মাইন্ড সোসাইটির সভাপতি আমির হাসান, আনন্দপাঠের সভাপতি সৈয়দ আমিনুল হক কায়সার প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৭৩ শতাংশ পর্যাপ্ত সামাজিক সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত, যার অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশের গ্রামাঞ্চলে (আইএলও, ২০১৪)। এদের অনেকেই জীবন ধারনের জন্য কৃষির উপর নির্ভরশীল। দরিদ্র পরিবারগুলো সম্পদের সীমাবদ্ধতা, কৃষি উৎপাদনশীলতা হ্রাস এবং দুর্বল বাজার ব্যবস্থার কষাঘাতে জর্জরিত। যা তাদের অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক ঝুঁকির সাথে মানিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য কমিয়ে দিচ্ছে এবং তাদের জীবনযাত্রাকে হুমকির মুখে ফেলছে। সেইসাথে খাদ্যে কৃত্রিম রাসায়নিক পদার্থের বিষক্রিয়ায় মানব দেহে হৃদপিন্ড, যকৃত ও কিডনীর বিভিন্ন সমস্যা, ক্যান্সার, হাঁপানি, অন্ত্রে ব্যাথা, পেটের পীড়া, গর্ভপাত, বন্ধ্যাত্ব, শ্বাসকষ্ট, ¯œায়ুর ক্ষতি, ফুসফুসের রোগ, ডায়াবেটিস, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, মাংসপেশী সংকোচন, বমি, মুখে ললা আসা, চোখ দিয়ে পানি পড়া, মাথা ব্যথা, চোখের মণি চোট হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, দুর্বলতা, তলপেটে ব্যথা, খিঁচনি, ইত্যাদি রোগ ও লক্ষণ দেখা দেয়।
সভাপতির বক্তব্যে মো: আবদুস সোবহান বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের আবহাওয়া। গ্রীষ্ম মৌসুমে তীব্র গরম অনুভবের পর শীত মৌসুমে শীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। শৈত্যপ্রবাহে সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ছে কৃষি, স্বাস্থ্য এবং মানুষের জীবনযাত্রার ওপর। এ তিন খাতের ক্ষতি কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারলে বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় দেড় কোটি মানুষ জলোচ্ছ্বসের ঝুঁকিতে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান হার যদি স্বাভাবিক থাকে, তাহলে ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ২ কোটি। মানুষ ও অন্যান্য তৃণভোজী প্রাণীদের জন্য দুঃসংবাদ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের এ ধারা চলতে থাকলে খাদ্যশস্যসহ সব ধরনের ফসলে পুষ্টিগুণ কমে যাবে। আর লাভবান হবে অপ্রয়োজনীয় আগাছা, পোকামাকড়, পেষ্ট জাতীয় প্রাণী। এসব আগাছা ও পোকার সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে দুই ধাপে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়তে পারে। পোকা দমন করতে গিয়ে কীটনাশকের ব্যবহার বাড়বে। আর ফসলে বেশি পরিমাণে রাসায়নিক ব্যবহার করতে গিয়ে কৃষকের উৎপাদন খরচ বাড়বে। সেই সঙ্গে মাটি, খাদ্য ও পানি ভয়াবহ রকম দূষিত হবে।