থাকলে ব্যাঙ পরিবেশে ফসল বাড়বে বারোমাসে ; বিশ্ব ব্যাঙ দিবস ২০১৬
লিসান আসিব খান
” থাকলে ব্যাঙ পরিবেশে ফসল বাড়বে বারোমাসে ” শিরোনামে গতকাল রাজশাহীর গোদাগাড়ী সদরের স্কুল ও কলেজের ছাত্র- ছাত্রীদের নিয়ে বিশ্ব ব্যাঙ দিবস পালিত হয় ।
১৯৮০ সালের পরেই হারিয়ে গেছে ২০০ প্রজাতির প্রাণী। সাধারণত প্রতি ৫০০ বছরে হারায় একেকটি প্রজাতি। কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত হারিয়ে যাওয়া প্রাণী হতে যাচ্ছে ব্যাঙ, যা আমাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। ডেঙ্গু, গোদ রোগ, কলেরা, টাইফয়েড, এনথ্রাক্স, ম্যালেরিয়ার মতো শত শত ভয়ঙ্কর রোগকে নিয়ন্ত্রণ করছে। আমরাই পরিবেশদূষণ, তাদের আবাস্থল ধ্বংস, রোড কিলিং, শিশুদের ইট-পাটকেল ছোড়া, কীটনাশক ব্যবহার, খাবার হিসেবে ব্যাঙের পা রপ্তানি কিংবা পরীক্ষাগারে কেটে মেরে ফেলছি লাখ লাখ ব্যাঙ ।
বিশ্বের উভচর প্রাণীদের সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে অষ্টম বারের মতো সারা বিশ্বে পালন করা হচ্ছে এ দিবসটি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৫০টি দেশে এ বিষয়ে কাজ করছে ‘সেইভ দি ফ্রগস’ নামের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। এ বছর অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে প্রাণী ও পরিবেশবাদী সংগঠন- ‘ন্যাচার আই’ নামের প্রতিষ্ঠান । যেখানে দেশের বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্র – ছাত্রীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একদল ছাত্র ছাত্রী ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইসহাক আলী বিশ্বাস, গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র মনিরুল ইসলাম বাবু, সেভ দ্য ন্যাচার অ্যান্ড লাইভ সোসাইটির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, ন্যাচার আই’র প্রতিষ্ঠাতা জায়িদুল ইসলাম প্রমুখ।
বেলা সাড়ে নয়টায় স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে একটি র্যালি মাধ্যমে ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবসের অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। এরপর স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ পছন্দ অনুযায়ী ব্যাঙ ও পরিবেশ বিষয়ক কুইজ, চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা রঙ-তুলির মাধ্যমে তাদের কল্পনায় দেখা ব্যাঙের জীবন এবং অপরিকল্পিত নগরায়ন ও পরিবেশ দূষণের প্রভাবে ব্যাঙের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র ফুটিয়ে তোলে। তাদের লেখা রচনার মাধ্যমে উঠে আসে ব্যাঙের নানা উপকারী দিক এবং ব্যাঙ সংরক্ষণের বিভিন্ন উপায়। অনুষ্ঠানে ব্যাঙের উপকারিতা সম্পর্কে ভিডিও প্রদর্শনী করা হয় হয় তারপর অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক পর্ব যেখানে রাজশাহীর গম্ভীরা অংশগ্রহণ করে । এরপর বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইসহাক আলী বিশ্বাস বলেন , বর্তমানে ব্যাঙের বিভিন্ন প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। এ দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে মানুষ ব্যাঙ সংরক্ষণে আরো সচেতন হবে বলে আশা করি।”
ব্যাঙ জীব বৈচিত্র রক্ষাসহ পরিবেশের ভারসাম্যরক্ষায় গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে অধিকাংশ জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করার কারণে উপকারী ব্যাঙ সর্বত্র হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে এদের আবাসস্থল ধ্বংস করে চলেছি । ফলস্বরূপ এরা প্রতিনিয়ত এ পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে পৃথিবীর বুক থেকে ৩৬ প্রজাতির ব্যাঙ হারিয়ে গেছে। এখনই যদি আমরা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নিতে পারি তাহলে এরাও একদিন পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাবে। গত ৭ বছর ধরেই পালন করা হচ্ছে বিশ্ব ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবস । ২৩টি দেশের ১৪০টি স্থানে এই দিবসটি পালন করা হচ্ছে। মূলত ব্যাঙ রক্ষায় বিশ্ববাসীর মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই এ আয়োজন বলে জানান প্রাণি ও পরিবেশবাদী সংগঠন- ‘ন্যাচার আই’ ।